নেপালের পার্লামেন্টে ঢুকে পড়েছে হাজারো বিক্ষোভকারী, নিহত ১৪
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৮:৪৮:৩০ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নেপালে বেশ কয়েকটি সামাজিক মাধ্যম অ্যাপের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে জেন-জি বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে এলে, তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘাতে কমপক্ষে ১৪ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন শতাধিক। ইতোমধ্যেই হাজারো বিক্ষোভকারী দেশটির পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঠমান্ডুতে কারফিউ জারির পর সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিমালিয়ান জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ন্যাশনাল ট্রমা সেন্টারে ছয়জন, সিভিল হাসপাতালে তিনজন, এভারেস্ট হাসপাতালে তিনজন, কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজে (কেএমসি) একজন এবং ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় টিচিং হাসপাতালে একজন মারা যান। ট্রমা সেন্টারের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, নিহতদের মাথা এবং বুকে গুলির চিহ্ন রয়েছে।
এদিকে বিপুল সংখ্যক রোগীর কারণে আহতদের সংখ্যা এখনো জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। সিভিল হাসপাতাল এবং ট্রমা সেন্টারসহ হাসপাতালগুলো রোগীদের থাকার ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছে এবং তাদের অন্যান্য চিকিৎসা কেন্দ্রে রেফার করা শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট জানিয়েছে, নেপাল সরকারের ২৬টি অনিবন্ধিত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে- ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব এবং স্ন্যাপচ্যাটের মতো বহুল ব্যবহৃত অ্যাপ। এই পদক্ষেপ জনসাধারণের ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে, যারা সরকারকে গভীর দুর্নীতি মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করার অভিযোগ তুলেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার সকালে জেন জি প্রজন্মের নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ মিছিলের শুরু করলেও পরে বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে দেশটির সংসদে প্রবেশের চেষ্টা করে। এসময় বিক্ষোভকারীরা গাছের ডাল ও পানির বোতল ছুড়ে মারে এবং সরকার বিরোধী স্লোগান দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ জলকামান, টিয়ারগ্যাস এবং রাবার বুলেট ব্যবহার করে পাল্টা জবাব দেয়, যার ফলে পরিস্থিতি আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
এদিকে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর কারফিউয়ের পরিধি বাড়িয়েছে কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন। প্রথমে বানেশ্বরের কিছু এলাকায় সীমিতভাবে কারফিউ জারি করা হলেও বিক্ষোভকারীরা চলাচল নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রবেশ করলে এই কারফিউ সম্প্রসারণ করা হয়। এখন প্রেসিডেন্টের বাসভবন শীতল নিবাস এলাকা, মহারাজগঞ্জ, লাইনচৌরে উপ-রাষ্ট্রপতির বাসভবন, সিংহ দরবারের চারদিক, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন বালুওয়াটার এবং আশপাশের সংবেদনশীল অঞ্চলেও কারফিউয়ের আওতায় এসেছে।
প্রধান জেলা কর্মকর্তা ছাবিলাল রিজাল স্থানীয় প্রশাসন আইনের ধারা ৬ এর অধীনে কারফিউ আদেশ জারি করেছেন এবং এটি দুপুর ১২:৩০ টা থেকে রাত ১০:০০ টা (স্থানীয় সময়) পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এই অঞ্চলগুলির মধ্যে জনসাধারণের চলাচল, জমায়েত, বিক্ষোভ বা ঘেরাও কার্যকলাপ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত মাসে নেপালে মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেয়, সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোকে সাত দিনের মধ্যে নিবন্ধন করতে হবে, যোগাযোগের জন্য প্রতিনিধি রাখতে হবে এবং অভিযোগ ও নিয়ম মানা বিষয়ক কর্মকর্তাও নিয়োগ দিতে হবে। এর জন্য ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তবে অধিকাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সরকারের এই নির্দেশ মানেনি। ফলে নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার পর গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ফেইসবুক, এক্স, হোয়াটসঅ্যাপসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমধ্যমের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা করার্যকর হয়।