প্রাণঘাতী প্রতিবাদের পর ক্ষয়ক্ষতির হিসাব মেলাচ্ছেন নেপালিরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৯:৩১:২১ অপরাহ্ন
নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫১
জালালাবাদ ডেস্ক: নেপালের গৃহযুদ্ধ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অস্থিরতার ইতিহাসে গত কয়েক দশকে রাজনীতিতে যেসব উত্থান-পতনের ঘটনা ঘটেছে, তার নীরব সাক্ষী হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ধ্রুব শ্রেষ্ঠা মনে করেন, এই সপ্তাহে হিমালয়ের কোলের এই রাষ্ট্রটিতে সংঘাতের যে তীব্রতা ছিল, তাকে কোনোভাবেই অন্যসব ঘটনার সঙ্গে তুলনা করা যাবে না।
এদিকে, নেপালে চলমান জেন-জি বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫১ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে কাঠমান্ডু ছাড়াও বিভিন্ন জেলার মানুষ রয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্য ও একজন ভারতীয় নারীও আছেন। নেপাল পুলিশের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র ও ডিআইজি বিনোদ ঘিমিরে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে, বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে শত শত মানুষ আহত হয়েছেন। হাসপাতালগুলোতে ক্রমাগত আহতদের ভিড় বাড়ছে। কোথাও ৫০০, আবার কোথাও এক হাজারেরও বেশি আহতের কথা বলা হচ্ছে। ফলে সঠিক সংখ্যা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজধানী কাঠমান্ডুতে কিছু সময়ের জন্য কারফিউ তুলে নেওয়া হলে ৭৬ বছর বয়সী সাবেক কর্মকর্তা ধ্রুব শ্রেষ্ঠা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমি আমার জীবনে ছাত্রাবস্থা থেকেই সহিংসতা দেখেছি, তবে এরকম দাঙ্গা কখনো দেখিনি।’ খবর এএফপির।
গত মঙ্গলবার নেপালে নতুন প্রজন্মের (জেন-জি) দুর্নীতিবিরোধী তরুণ বিক্ষোভকারীরা রাজপথে নেমে এলে তাদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। বিক্ষুব্ধ তরুণেরা এ সময় দেশজুড়ে বেশকিছু সামাজিক অ্যাপ বন্ধ করে দেওয়ার সরকারি নির্দেশেরও প্রতিবাদ জানায়। এসব কারণে দেশজুড়ে সৃষ্টি হয় অস্থিরতা, বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে পুরো দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা।
বিক্ষোভকারীরা দেশটির সংসদ ভবন, বিভিন্ন সরকারি অফিস ও রাষ্ট্রপতির কার্যালয়সহ সদ্য চালু হওয়া হিলটন হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে এর পরের দিনই সৈন্যরা আবার রাস্তাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয়।
এ বিষয়ে ধ্রুব শ্রেষ্ঠা বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে যে কেউ ভয় পাবে। কেউ এমনটা কল্পনাও করতে পারেনি।’ শুক্রবার রাজধানীর রাস্তাগুলো অস্বাভাবিক রকম শান্ত ছিল, পোড়া গাড়ির স্তূপ পড়ে ছিল এখানে সেখানে আর সৈন্যরা পোড়া সরকারি ভবনগুলোর চারপাশে চেকপোস্টে পাহারা দিচ্ছিল।
এ সপ্তাহের সংঘাতে তিন কোটি জনসংখ্যার এই দেশটিতে অন্তত ৫১ জন নিহত হয়েছেন, যা ২০০৮ সালে শেষ হওয়া গৃহযুদ্ধ এবং রাজতন্ত্র বিলুপ্তির পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা। নিরাপত্তা বাহিনী দেশটির কারাগার ভেঙে পালানো প্রায় সাড়ে ১২ হাজার বন্দিকে আবারও আটক করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, নেপালের প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধান রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণের জন্য একজন ঐকমত্যের অন্তর্বর্তী নেতা খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর মধ্যে এ বিষয়ে এখনও মতবিরোধ রয়েছে, যদিও নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি (৭৩) এদের মধ্যে প্রধান প্রার্থী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।