বাগরাম বিমানঘাঁটিতে ফিরতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব, তালেবানের না
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৯:১০:৫২ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : আফগানিস্তানে অবস্থিত সাবেক মার্কিন বিমানঘাঁটি ‘বাগরাম’ পুনরুদ্ধারের জন্য ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে তালেবান সরকার। শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, কাবুল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংলাপে রাজি, তবে কোনোভাবেই দেশটিতে নতুন করে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি মেনে নেওয়া হবে না।
বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেন, তার প্রশাসন বাগরাম ঘাঁটি “পুনরায় দখল করার’’ চেষ্টা করছে। দীর্ঘদিন ধরেই এ ঘাঁটি ফেরত পাওয়ার আশায় থাকা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট এর অবস্থানকে অত্যন্ত কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন, বিশেষত চীনের নিকটবর্তী হওয়ার কারণে।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্য সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে প্রেস কনফারেন্সে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমরা সেটি (বাগরাম বিমানঘাঁটি) ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা সেটি (তালেবানের কাছে) বিনামূল্যে দিয়ে দিয়েছি।’’
ট্রাম্প অভিযোগ করে আরও বলেন, “চীনের যেখানে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি হয়, সেখান থেকে বাগরাম মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত।’’ তবে তালেবান কর্মকর্তারা এই ধারণা নাকচ করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টে আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জাকির জালাল বলেন, “আফগানিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রকে একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে, আলোচনা করবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি কোনো অংশেই থাকবে না’’।
তিনি আরও যোগ করেন, কাবুল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রস্তুত, তবে তা হতে হবে “পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে।’’ কাবুল শহরের ঠিক উত্তরে অবস্থিত বাগরাম ঘাঁটিই দুই দশকব্যাপী মার্কিন দখলদারত্বের সময় তাদের সামরিক কার্যক্রমের মূল কেন্দ্র ছিল। কুখ্যাত একটি কারাগারও সেখানে ছিল, যেখানে বহু মানুষকে বছরের পর বছর ধরে কোনো অভিযোগ বা বিচার ছাড়াই আটকে রাখা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত “সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে’’ অনেক বন্দিকে নির্যাতন ও অমানবিক আচরণের শিকার হতে হয়েছে।
২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহার এবং আফগান সরকারের পতনের পর তালেবান ঘাঁটিটি দখল করে নেয়। ঘাঁটি পরিত্যাগ করায় বারবার দুঃখ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। তার দাবি, যুক্তরাষ্ট্রকে আফগানিস্তানের জন্য নয়, বরং চীনের নিকটবর্তী অবস্থানের কারণে সেখানে সামান্য সেনাশক্তি রাখাই উচিত ছিল।
সম্প্রতি ট্রাম্প প্রথমবারের মতো নিশ্চিত করেছেন যে তার প্রশাসন তালেবান কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে। গত সপ্তাহান্তে তার বিশেষ দূত অ্যাডাম বোহলার এবং আফগানিস্তানবিষয়ক সাবেক মার্কিন প্রতিনিধি জালমে খলিলজাদ কাবুলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আলোচনায় মূলত আফগানিস্তানে আটক মার্কিন নাগরিকদের বিষয়টি গুরুত্ব পায়।
মার্চ মাস থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বাগরামে পুনরায় অবস্থান নেওয়ার সম্ভাবনা বিবেচনা করছে বলে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনকে উদ্ধৃত করে মার্কিন গণমাধ্যম জানিয়েছে। ট্রাম্প ও তার উপদেষ্টাদের মতে, এ বিমানঘাঁটি শুধু নিরাপত্তার কৌশলগত সুবিধাই নয়, বরং আফগানিস্তানের মূল্যবান খনিজ সম্পদে প্রবেশাধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাড়তি ক্ষমতা দিতে পারে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনও তালেবান সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। ২০২১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর সঙ্গে ২০ বছরের সংঘাতের পর আবার ক্ষমতায় ফিরে আসে তালেবান। সূত্র: আল জাজিরা