গবেষণা-উদ্ভাবনে পিছিয়ে বাংলাদেশ : বৈশ্বিক সূচকে স্থান ১০৬
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৫০:৩৪ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচক (গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্স-জিআইআই) ২০২৫-এ ১৩৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অপরিবর্তিত থেকে ১০৬তম স্থানে রয়েছে। গত বছরের মতোই এই অবস্থান ধরে রাখলেও বাংলাদেশ আফ্রিকার কয়েকটি দেশের পেছনে রয়েছে। এর মধ্যে ঘানা ১০১তম, কেনিয়া ১০২তম এবং নাইজেরিয়া ১০৫তম স্থানে রয়েছে।
বাংলাদেশের এই অবস্থান নতুন নয়। ২০২২ সালে এক লাফে ১৪ ধাপ উঠে ১০২তম অবস্থানে গেলেও পরের বছরই পিছিয়ে পড়ে ১০৫তম স্থানে নেমে আসে। ২০২৪ সালে দেশটির অবস্থান হয় ১০৬তম। এর আগে টানা চার বছর বাংলাদেশ ১১৬তম স্থানে ছিল। সাময়িক অগ্রগতি ধরে রাখতে ব্যর্থ হওয়াই এ খাতে স্থায়ী ভিত্তি গড়ে তুলতে না পারার প্রমাণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা বিশ্ব মেধাস্বত্ব সংস্থা (ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশন-ডব্লিউআইপিও) গত ১৬ সেপ্টেম্বর সূচকের ১৮তম সংস্করণ প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, শীর্ষ স্থানে থাকা সুইজারল্যান্ড ১০০-এর মধ্যে ৬৬ পয়েন্ট পেয়েছে। দেশটি টানা ১৫ বছরের মতো প্রথম অবস্থান ধরে রেখেছে। সুইডেন ও যুক্তরাষ্ট্র যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে এবং সিঙ্গাপুর রয়েছে পঞ্চম অবস্থানে। এরপর রয়েছে যুক্তরাজ্য, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক ও প্রথমবারের মতো শীর্ষ দশে জায়গা পাওয়া চীন।
বাংলাদেশ ২১ পয়েন্ট নিয়ে নি¤œ-মধ্যম আয়ের ৩৭ দেশের মধ্যে ১৯তম এবং মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার ১০ দেশের মধ্যে অষ্টম স্থানে রয়েছে।অঞ্চলভিত্তিক অবস্থানে ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে রয়েছে। দেশটি গত বছরের তুলনায় এক ধাপ এগিয়ে এ বছর ৩৮তম স্থানে এসেছে। এরপর শ্রীলঙ্কা ৯৩তম, পাকিস্তান ৯৯তম এবং বাংলাদেশ ১০৬তম অবস্থানে রয়েছে। কেবল নেপালের (১০৭তম) চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।
প্রতিবেদন প্রকাশের সময় ডব্লিউআইপিও মহাপরিচালক ড্যারেন ট্যাং বলেন, ‘উদ্ভাবনী খাতে গ্রহণযোগ্যতা ও প্রভাবের মতো কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক উন্নতি দেখা যাচ্ছে। গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি ধীর গতির হওয়া এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কার্যক্রম কমে যাওয়ার ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে উদ্ভাবনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক প্রতিশ্রুতি অপরিহার্য।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ৮০টি সূচক দিয়ে তৈরি এই ইনডেক্সটি ইনপুট ও আউটপুট-এই দুই অংশে বিভক্ত। ইনপুট সূচক পাঁচটি স্তম্ভে (প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, মানবসম্পদ ও গবেষণা, অবকাঠামো, বাজারের আধুনিকায়ন এবং ব্যবসায়িক দক্ষতা) উদ্ভাবনকে সক্ষম করার উপাদান মূল্যায়ন করে। অন্যদিকে আউটপুট সূচক দুটি স্তম্ভে (জ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সৃজনশীলতা) উদ্ভাবনী কর্মকা-ের ফলাফল পরিমাপ করে।
বাংলাদেশের পারফরম্যান্স :
২০২৫ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ উদ্ভাবনে যে বিনিয়োগ করে তার তুলনায় বেশি আউটপুট উৎপাদন করছে। দেশটি ইনপুট সূচকে ১১৫তম স্থানে রয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় এক ধাপ পিছিয়েছে। আউটপুট সূচকে অবস্থান হয়েছে ৯৫তম, যা ২০২৪ সালের ৯২তম অবস্থানের চেয়ে খারাপ।
সাতটি স্তম্ভের মধ্যে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ৮৬তম স্থানে রয়েছে সৃজনশীলতা সূচকে। এরপর রয়েছে অবকাঠামোতে ৯০তম, বাজার আধুনিকায়নে ৯৬তম এবং জ্ঞান ও প্রযুক্তি সূচকে ৯৯তম স্থানে।
সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে মানবসম্পদ ও গবেষণায় (১৩৩তম), ব্যবসায়িক দক্ষতায় (১২৯তম) এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতায় (১০৯তম)। এর চেয়েও খারাপ খবর হলো, নি¤œ-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর গড় অবস্থানের চেয়ে বাংলাদেশ বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ উপসূচকে, যেমন: প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, মানবসম্পদ ও গবেষণা, ব্যবসায়িক দক্ষতা, এবং জ্ঞান ও প্রযুক্তিগত ফলাফলে পিছিয়ে আছে।
উপ-সূচকগুলোর মধ্যে প্রতিবেদনে বিশেষভাবে দুর্বলতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে আইসিটি সেবা আমদানি, শিক্ষাখাতে ব্যয়, বিশ্ববিদ্যালয়–শিল্প গবেষণা সহযোগিতা, মাধ্যমিক শিক্ষায় শিক্ষক–শিক্ষার্থী অনুপাত এবং বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারীর স্বল্পতা।