জাতিসংঘে ট্রাম্পের ভাষণ : ৬ বছর আগে হাসলেও এবার চুপ ছিলেন দর্শকরা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৯:৩৪:৫৯ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : ডোনাল্ড ট্রাম্প পৃথিবীকে ঠিক কীভাবে দেখেন, তা অনেকটা পরিষ্কারভাবে বোঝা গেছে জাতিসংঘে দেওয়া তার সবশেষ বক্তব্যে। এটিকে বলা যায় ট্রাম্পের মতাদর্শের একেবারে অপরিশোধিত বহিঃপ্রকাশ। তার সমর্থকদের কাছে, এটি ছিল বিশুদ্ধ ‘ট্রাম্পিজম’ বা ট্রাম্পবাদ। আর ট্রাম্প সমালোচকদের কাছে এটি ছিল ট্রাম্পবাদের চূড়ান্ত ‘উন্মাদনা।
এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দেওয়া বক্তব্যে ট্রাম্প তার বিরোধী ও তাদের কাজকর্মের সমালোচনা করেন। যুক্তরাষ্ট্র ও নিজের স্তুতি দিয়ে ভাষণ শুরু করার পর একে একে বিভিন্ন দেশের সমালোচনা চালিয়ে যান। নিজের গুণগাণ করার সময় তিনি বলেন যে যুক্তরাষ্ট্র এখন সোনালী সময় পার করছে।
একই সাথে তার বহুল বিতর্কিত দাবি- ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাতটি যুদ্ধ থামানো- সেটির পুনরাবৃত্তি করেন তিনি। তিনি এর আগে বেশ কয়েকবার বলেছিলেন যে তিনি এই ‘অর্জনের’ জন্য নোবেল পুরষ্কারের যোগ্য দাবিদার।
এরপরই আয়োজনের স্বাগতিক জাতিসংঘের ওপর ক্ষোভ ঝাড়া শুরু করেন তিনি। জাতিসংঘ শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার প্রয়াসে সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ তোলেন তার বক্তৃতায়।জাতিসংঘের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে সংস্থাটির সমালোচনা করে বলেন যে জাতিসংঘের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও তারা তা কাজে লাগায়নি। তারা শুধু কড়া ভাষায় বিবৃতি দেয় এবং সেসব বিবৃতির পরবর্তীতে কিছু করে না বলেও দাবি করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তার ভাষ্য অনুযায়ী, ফাঁকা বুলি কোনো যুদ্ধ থামায় না।
যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় চাওয়া মানুষের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ বরাদ্দ করা নিয়েও সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, “জাতিসংঘের কাজ আগ্রাসন বন্ধ করা, সেগুলো তৈরি করা ও অর্থায়ন করা নয়।”
এক পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভাঙা এসকেলেটর আর টেলিপ্রম্পটারের কথা তুলেও জাতিসংঘকে আক্রমণ করেন। এক হিসেবে ট্রাম্পের এসব সমালোচনা যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত। অনেক বিশ্লেষকই সংঘাত নিরসনে জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছেন বহুদিন ধরে। বিশেষ করে সংস্থাটির আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদনের দীর্ঘসূত্রতার কথা বিশ্লেষকরা বহুবারই বলেছেন।
আবার আরেকদিক থেকে দেখলে, জাতিসংঘের কার্যকারিতা না থাকার কারণ হিসেবে খোদ ট্রাম্পকেই অভিযুক্ত করা যায়। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন যে বৈশ্বিক সংকট নিরসন হতে পারে তার মতো ক্ষমতাধর মানুষেরা একসাথে বসে আলোচনার মাধ্যমে, জাতিসংঘের মতো সংস্থার যৌথভাবে গৃহীত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নয়।
ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের বরাদ্দ হওয়া অর্থের একটা বড় অংশ বাতিল করেছে। সে কারেণে সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী তাদের মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডের অনেক কিছুই বাতিল করেছে।
তবে জাতিসংঘের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্রদের সমালোচনাই বেশি করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তার সমালোচনার মূল বিষয় ছিল বহুব্যবহারযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার আর অভিবাসনের জন্য সীমানা উন্মুক্ত করে দেওয়ার ইস্যুগুলো নিয়ে।
ট্রাম্প বলেন, ইউরোপ বড় ধরনের সংকটের মুখে রয়েছে। তারা অবৈধ নাগরিকদের এক বাহিনীর আক্রমণের মুখে পড়েছে, যা এর আগে কখনো দেখা যায়নি…। অভিবাসন আর আত্মঘাতী জ্বালানি বিষয়ক সিদ্ধান্তগুলো পশ্চিম ইউরোপের মৃত্যু ডেকে আনবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের চিন্তাটিকে তিনি উল্লেখ করেন ‘বিশ্বের বৃহত্তম ধোঁকা’ হিসেবে। ইউরোপিয়ান দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে বহু ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির পেছনে অতিরিক্ত খরচ করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রাশিয়াকে তিনি ‘কাগুজে বাঘ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। রাশিয়ার ‘আসল সেনা সক্ষমতা’ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কূটনীতিকদের মতে ট্রাম্পের এই ধরনের মন্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে ট্রাম্প সামনে রাশিয়া ইস্যুতে তুলনামূলক বেশি সমালোচক ভূমিকা নিতে পারেন। ছয় বছর আগে ট্রাম্প যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জাতিসংঘে প্রথমবার ভাষণ দিয়েছিলেন, তখন উপস্থিতরা তার ভিত্তিহীন দাবি শুনে হেসেছিল; এবার তারা অনেকটা শান্তভাবেই ট্রাম্পের পুরো বক্তব্য শুনেছে।







