মৎস্য নীতি পুনর্গঠন করছে সরকার
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ অক্টোবর ২০২৫, ৮:৫৫:৫৬ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : জাতীয় মৎস্য নীতি পুনর্গঠন করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে জাতীয় মৎস্য নীতি ২০২৫ খসড়া নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। দেশের প্রোটিনের চাহিদা পূরণে এই খাতের ১৯৯৮ সালে প্রণীত নীতিমালা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যার মূল লক্ষ্য রাসায়নিক, জীবাণুজীব ও বিপজ্জনক উপাদানমুক্ত নিরাপদ মাছ উৎপাদন নিশ্চিত করা। প্রস্তাবিত খসড়া নীতিতে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, রাসায়নিকমুক্ত মাছের উৎপাদন, সরবরাহ ও সংরক্ষণ নিশ্চিত এবং ক্রমবর্ধমান অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের (এএমআর) হুমকি মোকাবিলা করা। খসড়া নীতিমালায় মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত জলবায়ু শরণার্থীদের সমস্যা, স্থানীয় পর্যায়ে তহবিল সরবরাহ, সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং মাছের আমদানি-রপ্তানি সম্পর্কিত দিকগুলোও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুর রউফ বলেছেন, খসড়া নীতিটি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে। আলোচনার ভিত্তিতে খসড়ায় প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হবে।
বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ অভ্যন্তরীণ ও সামুদ্রিক জলাশয়ের আবাসস্থল বাংলাদেশ, হ্যাচারি ও বায়ো-ফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে মাছ উৎপাদন ৫০ লাখ টনের বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ উৎপাদন এসেছে চাষের মাধ্যমে, ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে যা ছিল ১৬ শতাংশ। মাছ চাষ খাতের এই দ্রুত বৃদ্ধি দেশীয় চাহিদা মেটানো ছাড়াও রপ্তানিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।
তবে এই সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিকের অবাধ ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞ ও নীতি নির্ধারকরা বারবার সতর্ক করেছেন, মাছ চাষে অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) বাড়ছে, যা মানব ও প্রাণী স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এর প্রত্যক্ষ প্রমাণও আছে।
সম্প্রতি নেচার জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের মাছের তিন-চতুর্থাংশ নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী এশেরিকিয়া কোলাই রয়েছে। বিশেষ করে চাষ করা মাছে এটি পাওয়া গেছে। গবেষকরা বলেছেন, মাছ চাষে মাল্টিড্রাগ-প্রতিরোধী ও বায়োফিল্ম তৈরিকারী ব্যাকটেরিয়ার প্রধান ভা-ার হিসেবে কাজ করছে, যা খাদ্য নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, নতুন খসড়াটি ১৯৯৮ সালের পর মৎস্য নীতির প্রথম বিস্তৃত সংস্কার। গত ২৫ বছরে মাছ চাষে ব্যাপক বেড়েছে, তবে জলবায়ু পরিবর্তন থেকে সম্পদ ক্ষয় পর্যন্ত নতুন চ্যালেঞ্জগুলোও তীব্র হয়ে উঠেছে।
মৎস্য বিভাগের মহাপরিচালক রউফ বলেন, নতুন নীতি সামুদ্রিক ও উপকূলীয় বিষয়গুলোকে আরও গুরুত্ব দিচ্ছে, বিশেষ করে ব্লু-ইকোনমির প্রেক্ষাপটে। আমাদের লক্ষ্য হলো, সমুদ্র সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, যা আগে প্রায় উপেক্ষিত ছিল।






