চাকসুতে উৎসবমুখর নির্বাচন : শিক্ষার্থীদের ‘প্রথম’ ভোটের উচ্ছাস
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৯:৫০:০৩ অপরাহ্ন

জালালাবাদ রিপোর্ট: ৩৫ বছর অপেক্ষার পর বড় কোনো গোলযোগ ছাড়াই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছে।
বুধবার বিকেল চারটায় আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটগ্রহণ শেষ হয়। তবে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে সারিতে অপেক্ষমাণ ভোটাররা বিকেল চারটার পরও ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। ভোটগ্রহণ শেষে ফলাফলের অপেক্ষায় বিভিন্ন কেন্দ্রের সামনে প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকেরা অবস্থান করেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. মনির উদ্দিন বলেন, ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু পরিবেশে বিকেল চারটায় শেষ হয়েছে। এখন কেন্দ্র থেকে ব্যালটগুলো পৃথক করে ডিন কার্যালয়ে নেওয়া হবে। এরপর সেখানে ক্যামেরার সামনে ভোট গণনা করা হবে।
এবারের নির্বাচনে দিনভর ভোটারদের মাঝে উচ্ছ¡াস ও উদ্দীপনা ছিল। তবে সই ছাড়া ব্যালট পেপারে ভোট দেওয়া, অমোচনীয় কালি ওঠে যাওয়াসহ নির্বাচনে ভোটগ্রহণে অব্যবস্থাপনা নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ করে ছাত্রদলসহ কয়েকটি প্যানেল।
তবে ভোটকেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে ছাত্রদলের একাধিক ডেস্ক বসানো ও ভোটার লাইনে ¯িøপ বিতরণের অভিযোগ করেছেন ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘স¤প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী ইব্রাহিম হোসেন রনি। তিনি অভিযোগ করেছেন, ভোটকেন্দ্রে ছাত্রদলের আলাওল হলের জিএস প্রার্থীসহ অনেকের সঙ্গে বহিরাগতদের দেখা গেছে। অথচ পরিচয়পত্র ছাড়া কেউই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের কথা নয়। প্রশাসন বহিরাগতদের আটকাতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘হাতের কালি অমোচনীয় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমরা দেখলাম এ কালি মুছে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন এ বিষয়ে আরও সচেতন হতে পারতেন।
রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদের ভোট গণনা চলছে। বুধবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে এ গণনা শুরু হয়। পোলিং এজেন্টদের উপস্থিতিতে গণনা চলছে বলে নিশ্চিত করেছেন নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, ভোট গণনা চলছে পাঁচটি ডিন কার্যালয়ে। পরে এই পাঁচটি ডিন কার্যালয়েই আলাদাভাবে হল সংসদের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। আর কেন্দ্রীয় সংসদের ফল ঘোষণা হবে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের সামনে।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, ভোটগণনার পুরো বিষয়টি সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
প্রথম ভোটের উচ্ছাস :
বহুল প্রতীক্ষিত চাকসু নির্বাচনে জীবনে প্রথমবারের মত ভোট দিতে পেরে দারুণ উচ্ছ¡সিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স বিভাগের দুই শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন ভুঁইয়া ও রুবেল গাজী থাকেন শাহ আমানত হলে। বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে ভোট দেওয়া শেষে তারা বলেন, জাতীয় নির্বাচনের ভোটার হলেও ভোট দিতে যাননি। এবার প্রথম ভোট দিলেন নিজেদের নির্বাচনে। তারা খুব উচ্ছ¡সিত।
ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী বেগম খালেদা জিয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সাজিদা তুজ শিমলি বলেন, আগে স্কুলের কেবিনেটে ভোট দিয়েছি। বড় পরিসরে এই প্রথম ভোট দিলাম। পরিবেশটা খুব ভালো লাগছে। বেশি আনন্দ পেয়েছি প্রচার প্রচারণার সময়। আমরা চাই প্রতিবছর চাকসু নির্বাচন হোক।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের উমামা করিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হলের ভোটার। তিনি বলেন, জীবনের প্রথম ভোট করছি আমরা। আগে নির্বাচনে কখনো ভোট দিইনি। এটা আমাদের জন্য খুব আনন্দের।
আরবি ভাষা ও শিক্ষা বিভাগের ২১-২২ সেশনের শরিফুজ্জমান নাইম বলেন, যে কোনো প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে এই প্রথম ভোট দিচ্ছি। দারুণ লাগছে। খুবই এক্সাইটেড। এর আগে ভোটার হয়েও জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে গিয়েও স্বৈরাচার সরকারের কারণে ভোট দিতে পারিনি।
চাকসুতে এবার ভোটার প্রায় ২৭ হাজার ৫১৬ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ১১ হাজার ১৫৬ জন। নির্বাচনে লড়তে প্রার্থী হয়েছেন ৯০৮ জন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে মোট ২৬ পদে লড়ছেন ৪১৫ প্রার্থী। একই সঙ্গে ১৪টি হল ও একটি হোস্টেলে প্রার্থী হয়েছেন ৪৯৩ জন।







