কাল জুলাই সনদে স্বাক্ষর, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন : প্রধান উপদেষ্টা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩০:২৫ অপরাহ্ন
দলগুলোর সাথে ঐকমত্য কমিশনের ‘অতি জরুরী’ বৈঠক

জালালাবাদ রিপোর্ট: এক বছরের প্রচেষ্টা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আট মাসের সংলাপের পর রাষ্ট্র সংস্কারে চূড়ান্ত হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫। সনদ চূড়ান্তের পর মঙ্গলবার রাতেই চূড়ান্ত সনদ পাঠানো হয় রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে।
আগামীকাল শুক্রবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় বড় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর এই সনদে স্বাক্ষর করার কথা রয়েছে। তবে এর বাস্তবায়ন নিয়ে দলগুলোর মতপার্থক্যের কারণে শেষ মুহূর্তে সনদ স্বাক্ষরে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। সে কারণে আগে বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে ‘অতি জরুরী’ বৈঠকে বসে।
বৈঠকে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়াও বৈঠকে ছিলেন।
বৈঠকে অংশ নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলন, জেএসডি (রব), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এবি পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
৬টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ। মঙ্গলবার রাতে সনদের চূড়ান্ত অনুলিপি দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি। এ বিষয়ে কমিশন আলাদা সুপারিশ দেওয়ার কথা। কিন্তু সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সনদ বাস্তবায়নে গণভোট করার বিষয়ে একমত হলেও ভোটের দিন ও পথ-পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মতভিন্নতা আছে। কোনো কোনো দল সনদে সই করার আগে বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে নিশ্চয়তা চায়।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ঐকমত্য কমিশন যে জুলাই সনদের চূড়ান্ত কপি পাঠিয়েছে, তাতে দেখা গেছে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে অনেক বিষয়ে একমত হয়েছে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো।
এদিকে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জরুরী বৈঠকের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমরা জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করব, তবে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ যেগুলো রয়েছে, সেগুলো অবশ্যই উল্লেখ থাকতে হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জরুরী বৈঠকের পর জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আমরা শুক্রবার জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের দাওয়াত পেয়েছি যথাযথভাবে এবং আমরা উপস্থিত হবো ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, আমরা বলেছি যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে তা নিয়ে একটি প্যাকেজ করে এর বাস্তবায়ন করতে হবে। গণভোটের বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি এর পক্ষে ছিলো না, কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েছে। এজন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ জানাই।
এদিকে, জাতির কাছে ‘সব কিছু স্পষ্ট করে’ জুলাই সনদ স্বাক্ষরের দিকে অগ্রসর হলে এর বাস্তবায়ন এবং ‘জাতির প্রত্যাশা পূরণ’ সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির-এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, আমরা চাই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথটাকে পরিষ্কার করে তারপরে আমরা সনদ স্বাক্ষর করার দিকে অগ্রসর হব।
‘আনন্দঘন’ পরিবেশে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আশা :
জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর নিয়ে সংকটের যে তথ্য সংবাদমাধ্যমে এসেছে তাকে ‘বিভ্রান্তি’ আখ্যা দিয়ে ‘আনন্দঘন পরিবেশে’ এ দলিল স্বাক্ষরের আশার কথা শুনিয়েছেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।
তার ভাষ্য, আজ কিছু বিভ্রান্তি বিভিন্ন দিক থেকে প্রচারিত হয়েছে। আমাকে অনেক রাজনৈতিক নেতারা এবং সাংবাদিকরা ফোন দিয়েছেন। আমি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের দিক থেকে প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হচ্ছে। পাশাপাশি আপনাদের দিক থেকে যে সহযোগিতা অব্যাহত আছে তাতে আমরা আশাবাদী যে একটি আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে আমরা এ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটা সম্পূর্ণ করব।
শুক্রবার জুলাই সনদে স্বাক্ষর, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন, প্রধান উপদেষ্টা :
আগামী ফেব্রæয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন হবেই বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ফেব্রæয়ারি মাসে নির্বাচন হবেই। এটা এই যে ঐকমত্য কমিশনের যে সনদ, এটা সনদেরই অংশ এখন। এটার সঙ্গে এটা জড়িত। এই যে ঘোষণা আমরা করলাম, এটা আমাদের রক্ষা করতে হবে। এটা এমন না যে কথার কথা বলে ফেলেছি। ওই রকম না। এটা ফেব্রæয়ারিতে হবে এবং ওই যে বারবার বলেছি, এটা উৎসবমুখর নির্বাচন হবে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বুধবার রাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ‘অতি জরুরি’ বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আপনারা যেমন সবাই মিলে সনদ তৈরি করেছেন, আমাদের সরকারের দায়িত্ব হলো সবাই মিলে উৎসবমুখর নির্বাচনটা করে দেওয়া। তাহলেই আমাদের কাজ পরিণত হলো।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, যে অসম্ভবকে আপনারা সম্ভব করেছেন, এটা শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর পলিটিক্যাল সিস্টেমের (রাজনৈতিক ব্যবস্থার) ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে। ১৭ অক্টোবর জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা উৎসবমুখরভাবে সেখানে যাব এবং এই দলিলে সই করব এবং উৎসব করব। সবাই, সারা জাতি এটায় শরিক হবে।







