শাহজালালের কার্গো ভিলেজে আগুন : বিপর্যস্ত ফ্লাইট শিডিউল, সিলেটে একাধিক অবতরণ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ৯:০৪:৪৯ অপরাহ্ন

জালালাবাদ রিপোর্ট : ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে উড়োজাহাজ ওঠানামা সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ফ্লাইট শিডিউল ও বিমান উঠানামা এলোমেলো হয়ে যায়। ঢাকার ফ্লাইট নামে সিলেট ও চট্টগ্রামে। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ৯টি ফ্লাইট ঢাকায় নামতে না পেলে চট্টগ্রাম ও সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৮টি ও সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৪টি ফ্লাইট অবতরণ করে।
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্র জানায়, শনিবার বেলা ৩টা ৩১ মিনিটে সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এরপর সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া থেকে ইউএস বাংলার আরো ২টি ফ্লাইট সিলেটে অবতরণ করে। সন্ধ্যায় নভো এয়ারের একটি ডমেস্টিক ফ্লাইটও সিলেটে অবতরণ করে।
বিমানের সিলেট স্টেশন ম্যানেজার শাকিল আহমদ জানান, ঢাকায় নামতে না পেরে সিলেটে মোট ৪টি ফ্লাইট জরুরী অবতরণ করে।সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক মো. হাফিজ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ বিমানের বিজি-৩৪০ ফ্লাইটটি ৩৯৬ জন যাত্রী নিয়ে রিয়াদ থেকে উড়াল দিয়েছিল। তবে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে না পেরে বিকেল ৩টা ৩১ মিনিটে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে উড়োজাহজটি সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।
এদিকে, শাহজালালে আগুনের কারণে সিলেট থেকে ছেড়ে যাচ্ছে না ঢাকাগামী কোন ফ্লাইট। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনটি ফ্লাইট যথাসময়ে ছেড়ে যায়নি। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
আব্দুস সামাদ নামের দক্ষিণ সুরমার এক বাসিন্দার সিলেট থেকে বিকেল সাড়ে ৪টায় ইউএস বাংলার ফ্লাইটে ঢাকায় যাওয়ার কথা। তিনি বলেন, রাতেই ঢাকা থেকে ফ্লাইটে আমার দক্ষিণ কুরিয়া যাওয়ার কথা। অগ্নিকান্ডের কারণে ওই ফ্লাইটটি মিস হয়ে যাবে। এতে অনেক ঝামেলায় পড়তে হবে আমাকে।
চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মুখপাত্র মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল জানান, যে ৮টি ফ্লাইট চট্টগ্রামে অবতরণ করেছে, তার মধ্যে দুটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ছিল। অপর ৬টি ফ্লাইটের একটি ব্যাংকক থেকে, আরেকটি মধ্যপ্রাচ্য থেকে ঢাকায় অবতরণ করার কথা ছিল। বাকি চারটিও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। এ সব ফ্লাইট ঢাকার বদলে চট্টগ্রামে অবতরণ করেছে।
ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটের কার্গো ভিলেজে এই আগুন লাগে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম। আগুন নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনসহ ফায়ার সার্ভিস এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ৩৬টি ফায়ার ইউনিট কাজ করেছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর। নৌবাহিনীও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে যোগ দেয় বলে আইএসপিআর জানিয়েছে।
শনিবার দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে আগুন লাগলেও সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি।উড়োজাহাজ থেকে মালামাল ওঠানো–নামানোয় যুক্ত থাকা কোম্পানি ভয়েজার এভিয়েশনের গাড়িচালক মো. রাসেল মোল্লা বলেন, আগুন লাগার সময় তার গাড়িটি ৮ নম্বর গেটের ১০০ মিটারের মধ্যে ছিল। তিনি সেখান থেকে গাড়িটি দ্রæত সরিয়ে নেন। এসময় ভেতরে থাকা মানুষদের বের করে দেওয়া হয়। রাসেল বলেন, আগুন লেগেছে আমদানি করা মালামাল রাখার স্থানে।
অগ্নিকাÐের ঘটনার পর বিমানবন্দরের সব ধরনের উড়োজাহাজ ওঠানামা সাময়িকভাবে স্থগিত ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ফলে এ সময়ে ঢাকার শাহজালালের পথে থাকা উড়োজাহাজ সিলেট ও চট্টগ্রামে অবতরণ করে।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে নভো এয়ারের একটি উড়োজাহাজ বেলা তিনটা ১২ মিনিটে যাত্রী নিয়ে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। উড়োজাহজটিকে সিলেট থেকে বেলা সাড়ে তিনটায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কার্গো ভিলেজে আগুন লাগায় উড়োজাহাজটি সিলেট ত্যাগ করেনি। এছাড়া সিলেট থেকে ঢাকাগামী অন্য কোনো উড়োজাহাজের ফ্লাইট বাতিল হয়নি।
এদিকে, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ‘ইমারজেন্সি হ্যান্ডেল’ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এস এম রাগীব সামাদ। তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।
বিমানবন্দরে কার্গো ভিলেজে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার অভিযানে অংশ নিতে গিয়ে আনসারের ১৭ জন সদস্য আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত ৯ জনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।







