তদবির লবিংয়ে অসহায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৭:৫৩:৩৫ অপরাহ্ন

জালালাবাদ ডেস্ক: বদলি, পদোন্নতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতে জনপ্রশাসন ঢেলে সাজানো কঠিন হয়ে গেছে বলে মনে করছে অন্তর্বর্তী সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ শাখার নাম এপিডি উইং। গত ৯ অক্টোবর এই শাখার অতিরিক্ত সচিবকে অন্যত্র বদলি করা হয়। পরে এ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার কারণে এখন পর্যন্ত কাউকে দায়িত্ব দেওয়া যায়নি। এর আগে তিন সপ্তাহ ফাঁকা ছিল জনপ্রশাসন সচিবের পদ। রাজনৈতিক তদবির ও লবিংয়ের কারণে সারা দেশের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় নিজেই যেন অসহায় হয়ে পড়েছে।
গত ২১ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমানকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তিন সপ্তাহ পর গত ১২ অক্টোবর সেখানে দায়িত্ব দেওয়া হয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব এহসানুল হককে। আর ৯ অক্টোবর এপিডি উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব এরফানুল হককে সরানো হয়। খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকারকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদায়নের জন্য পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। তবে এখন তাঁকে দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত সচিবের দপ্তরে; এপিডি উইংয়ে নয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বদলি-পদায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুবিভাগ এপিডি উইং নিয়ে বড় দুই দলের মধ্যে চলছে তদবির-লবিং। আগামীতে মাঠ প্রশাসন সাজাতে এপিডি উইংয়ের ভ‚মিকা মুখ্য। তাই পছন্দের ব্যক্তিকে বসানো নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। একই অবস্থা হয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব নিয়োগে। তিন সপ্তাহ লেগেছিল সিদ্ধান্তে একমত হতে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রশাসনে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা দূর করা সম্ভব হয়নি। বদলি-পদোন্নতিতে ত্রæটি, অনিয়ম ও জট রয়ে গেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি উইংয়ে অতিরিক্ত সচিব পদটি ফাঁকা থাকায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে বেগ পেতে হচ্ছে।
নতুন দায়িত্ব পাওয়া জনপ্রশাসন সচিব মো. এহছানুল হক নির্বাচন পরিচালনাকে চ্যালেঞ্জের কাজ উল্লেখ করে বলেছিলেন, গত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা যেভাবে নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন, আসছে নির্বাচনে সেটা কোনোভাবেই হবে না। প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করা চ্যালেঞ্জের। এই চ্যালেঞ্জ সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পারব বলে আশা করছি। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা রাজনৈতিকভাবে কাজ করবেন নাÑ এটা আমার বিশ্বাস। যদি কেউ রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করতে না পারেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, এপিডি অনুবিভাগ জনপ্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। এখান থেকেই সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি, পদোন্নতি ও প্রেষণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত হয়। এমন সংবেদনশীল জায়গায় কে বসবেনÑ এ নিয়ে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক মহলে নানামুখী চাপ তৈরি হয়েছে।
সূত্রগুলো বলছে, প্রথমে একজন অতিরিক্ত সচিবকে এপিডি উইংয়ের প্রধান হিসেবে বসানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে আপত্তি আসে বিভিন্ন অংশ থেকে। এরপর আরেক কর্মকর্তার নাম প্রস্তাব করলে তা নিয়েও ভিন্নমত আসে একাংশ থেকে। এতে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে গেছে। যদিও পদটি দীর্ঘ সময় খালি থাকায় প্রশাসনিক কাজে জট তৈরি হয়েছে। অনেক কর্মকর্তার প্রেষণ ও বদলির ফাইল আটকে আছে। যে কারণে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে অনেক সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে না।







