অবশেষে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চালু হচ্ছে ‘মিড ডে মিল’
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ৮:২৪:০৫ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আগামী নভেম্বর মাস থেকে সারা দেশে চালু হতে যাচ্ছে ‘মিড-ডে মিল’ বা স্কুল ফিডিং কর্মসূচি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটি ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আগামী ১৭ নভেম্বর থেকে সীমিত পরিসরে কর্মসূচিটি শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে চারটি বিভাগের নির্বাচিত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই সুবিধা পাবে বলে জানা গেছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে দেশের ৮ বিভাগের ৬২ জেলার ১৫০ উপজেলার ১৯ হাজার ৪১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী এ প্রকল্পের সুবিধা পাবে। তবে বিভিন্ন জটিলতার কারণে আগামী ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া এ প্রকল্প আপাতত সীমিত পরিসরে চারটি বিভাগে চালু হবে। ঢাকা, খুলনা, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই প্রথম পর্যায়ে এই সুবিধা পাবে। শুরুতে এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিস্কুট ও বনরুটি দেওয়া হবে। রিটেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে পর্যায়ক্রমে নির্ধারিত অন্যান্য খাবারও যুক্ত করা হবে।
জানা যায়, গত জানুয়ারিতে শুরু হওয়া ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি’ বা মিড ডে মিল প্রকল্পটির আওতায় স্কুল চলাকালীন শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে পাঁচ দিন সরবরাহ করা হবে পুষ্টিকর খাবার। এর মধ্যে রয়েছে বনরুটি, সেদ্ধ ডিম, ইউএইচটি দুধ, ফরটিফাইড বিস্কুট এবং মৌসুমি ফল বা কলা। সপ্তাহের রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের পরিবেশন করা হবে বনরুটি ও সেদ্ধ ডিম। সোমবার বনরুটি ও দুধ এবং বুধবার মিলবে ফরটিফাইড বিস্কুট ও মৌসুমি ফল বা কলা। প্রতিটি বনরুটির ওজন নির্ধারণ করা হয়েছে ১২০ গ্রাম, প্রতিটি ডিম ৬০ গ্রাম, দুধ ২০০ গ্রাম, বিস্কুট ৭৫ গ্রাম ও ফল ১০০ গ্রাম।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনের এই খাদ্যতালিকা শিক্ষার্থীদের পুষ্টি নিশ্চিত করবে এবং ক্ষুধার তাড়না থেকে মুক্তি দিয়ে শ্রেণিকক্ষে মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। এ ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়ার হার কমবে এবং বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫ হাজার ৪৫২ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে ৯৭ শতাংশ ব্যয়ই বরাদ্দ রাখা হয়েছে খাদ্য সরবরাহের জন্য। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকার বেশি।
প্রকল্পটির পরিচালক (পিডি) ও যুগ্ম সচিব হারুন অর রশীদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রকল্পটি আগামী ১৭ নভেম্বর থেকে চালু করা হবে। আপাতত চারটি বিভাগের নির্বাচিত বিদ্যালয়ে আমরা দুটি খাবার আইটেম দিয়ে কাজ শুরু করছি। বিস্কুট ও বনরুটি দিয়ে কর্মসূচির সূচনা করা হবে। চারটি বিভাগের পর অন্য বিভাগগুলোতেও শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য এবং এটি নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সব দিক বিবেচনা করেই আমরা এগোচ্ছি। বর্তমানে কিছু খাবার আইটেমের রিটেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। টেন্ডারের কাজ শেষ হলে আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যান্য খাবার আইটেমও যুক্ত করতে পারব।’
প্রসঙ্গত, উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে স্কুল ফিডিং মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে রয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা, নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শকসহ প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা। প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রশিক্ষণও গুরুত্ব পাচ্ছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের জন্য আয়োজন করা হবে ১৯২টি ব্যাচে ওরিয়েন্টেশন ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। অংশ নেবেন প্রায় ১৯ হাজার ৭১৯ শিক্ষক ও কর্মকর্তা।







