শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধর্মীয় কটুক্তি ও অবমাননার প্রবণতা বাড়ছে
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ৮:২৯:১৩ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: চলতি মাসের শুরুতে নিজ ক্যাম্পাসেই পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননা করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী অপূর্ব পাল। পরে এ ঘটনা জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন। শুধু অপূর্ব পাল নয়, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া অন্তত ডজনখানেক শিক্ষার্থী কর্তৃক ধর্মীয় কট‚ক্তি ও অবমাননার ঘটনা ঘটেছে। এ তালিকায় রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকও।
ইসলামিক স্কলার ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ধর্মীয় কট‚ক্তি ও অবমাননার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের আগামীতে এসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বর্তমান আইন যথেষ্ট কার্যকর নয়; এজন্য আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, ঐতিহাসিকভাবেই এই অঞ্চলের লোকজন সব ধর্মকে সম্মান করে আসছেন। কিন্তু গত ১৫ বছরের আওয়ামী লীগ শাসন আমলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইসলামোফোবিয়ার চর্চা করা হয়েছে। আর শিক্ষা কারিকুলাম এমনভাবে সাজানো হয়েছিল সেখানে ধর্মীয় ব্যাপারে কোনো জ্ঞান অর্জন করার কোনো সুযোগ ছিল না। পাশাপাশি শিক্ষা কারিকুলামে জড়িতদের একটি অংশে ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাব ছিল। অন্যদিকে এসব ঘটনায় জড়িতদের দৃশ্যমান কোনো শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। ফলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
চলতি সপ্তাহে ধর্মীয় অবমাননা ও কট‚ক্তির অভিযোগ উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় একজনকে ৬ মাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে আর একই ঘটনায় দুজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এছাড়া আরেজনের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস।
জানা গেছে, ধর্ষণ ও সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের মামলায় কারাগারে থাকা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ছাত্র শ্রীশান্ত রায়ের সঙ্গে ধর্ম অবমাননা ও হিজাব পরা নারীদের প্রতি যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে ঢাবির তিন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন আইবিএর বিবিএ-৩০ ব্যাচের শিক্ষার্থী মেহতাজুর রহমান ও তাসনিয়া ইসলাম এবং ২০২১-২০২২ সেশনের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার ফাইয়াজ।
এর মধ্যে আবরার ফাইয়াজকে বুধবার (২৯ অক্টোবর) ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়।জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় একজনকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি তাকে ডাকা হবে এবং বক্তব্য জানতে চাওয়া হবে। বাকি দুইজনের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন দেখে তাদের বিরুদ্ধে শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া আরও একজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ পেয়েছে প্রক্টর অফিস। এ বিষয়ে প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, সনাতন ধর্ম নিয়ে অবমাননার অভিযোগে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এটিও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অনেক সময় দেখা যায়, ব্যবস্থা নিতে গিয়ে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া আমার ক্ষমতাবলে দ্রæত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করি।
শুধু বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া নয়। স্কুল পড়–য়া শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ধর্মীয় কট‚ক্তি ও অবমাননার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। গত ২৪ অক্টোবর রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র মো. শাহরিয়ার জামান রুপমকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননার কারণে তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষাবিদ, ইসলামিক স্কলার ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ড. মুফতি জাকারিয়া নুর বলেন, দেশে দীর্ঘদিন ধরেই ধর্মীয় কট‚ক্তি ও অবমাননার সংস্কৃতির চালু রয়েছে। এটার পেছনে অনেকগুলো উল্লেখযোগ্য কারণ রয়েছে। এর অন্যতম কারণ হলো আমাদের দেশের শিক্ষাপদ্ধতি অর্থাৎ শিক্ষা কারিকুলাম এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে শিক্ষা কারিকুলামেরর মধ্যে ধর্মীয় ব্যাপারে কোনো জ্ঞান অর্জন করার কোনো সুযোগ নেই। তবে শিক্ষা কারিকুলামে বিষয়গুলো ছিল। কিন্তু সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষা কারিকুলামের সঙ্গে সম্পৃক্তরা অনেকেই ছিলেন ইসলাম বিদ্বেষী।
তিনি বলেন, এসব ঘটনায় রাজনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক দলগুলো মৌন সমর্থন দিচ্ছে। কারণ যখনই দেখা যায় ধর্মীয় কট‚ক্তি ও অবমাননা হয় তখন শুধু আলেম-ওলামা এবং ইসলামপন্থীরাই বিরোধিতা করেন এবং মিছিল করে প্রতিবাদ জানান। কিন্তু অন্যান্য যারা রাজনৈতিক দল আছে সেসব দল এ ব্যাপারে কোনো কথা বলে না। তাছাড়া ধর্মীয় কট‚ক্তি ও অবমাননার ঘটনাগুলো হওয়ার পরে কোনো দৃশ্যমান শাস্তি কাউকে দেওয়া হয় না। যদি দৃশ্যমান শাস্তিগুলো দেওয়া হতো, তাহলে পরবর্তীতে কেউ কখনো ধর্মীয় কট‚ক্তি ও অবমাননার ব্যাপারে চিন্তা করতে পারত না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. দিদারুল ইসলাম বলেন, ঐতিহাসিকভাবেই এই অঞ্চলেরের লোকরা সব ধর্মকে সম্মান করে। সব ধর্মের মতে একটি পজিটিভ বার্তা আছে। আমাদের মতো দেশে আন্তঃধর্মীয় সহাবস্থানে ধর্মীয় বিশ্বাস ও গোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সম্প্রীতি এবং শান্তিপূর্ণভাবে একত্রে বসবাস করা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বিপদগামী এ বিষয়কে নড়িয়ে তুলছে। এ ধরনের অবস্থা সামাজিক অবক্ষয়ের লক্ষণ বলে তিনি মনে করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের ঘটনা আমাদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় কোন সময় কী ইস্যু তৈরি হয় সেটা বলা যাচ্ছে না। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে বার্তা দেওয়া হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা সতর্ক হয়।






