রাজনৈতিক দলগুলোকে সরকারের আল্টিমেটাম
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ৮:০৭:৩৮ অপরাহ্ন

জালালাবাদ রিপোর্ট : জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুতে চলমান মতভেদ নিরসনে এবার রাজনৈতিক দলগুলোকে আল্টিমেটাম দিয়েছে সরকার। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে বলা হয়েছে। তবে এই সময়ের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারলে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সরকার নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে। গতকাল সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ বা বিরোধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে সরকার কোনো বিরোধ চায় না। রাজনৈতিক দলগুলো নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেবে। ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনার ভিত্তিতে সরকার জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে চায়। আর যদি রাজনৈতিক দলগুলো এ সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, তাহলে সরকার এ বিষয়ে নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভায় শেষে সংবাদ সম্মেলনে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জুলাই জাতীয় সনদ, সংবিধান সংস্কার চূড়ান্ত করা এবং এতে উল্লেখিত গণভোট আয়োজন ও গণভোটের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় লক্ষ্য করা হয়, দীর্ঘদিন আলোচনা করার পরেও কয়েকটি সংস্কারের সুপারিশের বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে। এ ছাড়া গণভোট কবে ও তার বিষয়বস্তু কী হবে এসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তা নিয়ে সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
আসিফ নজরুল বলেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে গণভোটের সময় কখন হবে, কবে অনুষ্ঠিত হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমত প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে এগুলোসহ ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরি ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন বলে সভায় অভিমত ব্যক্ত করা হয়। এসব ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো নিজ উদ্যোগ নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে, সম্ভব হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। দিকনির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত সহজ হবে।
আসিফ নজরুল বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কালক্ষেপণের কোনো সুযোগ নেই। সেটি সভায় বিবেচনায় রাখা হয়। উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক জানতে চান, কবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি হতে পারে? জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে একটু সময় দিতে চাই। যে বিষয়টি উল্লেখ করলাম, আমরা একটু দেখি। রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার জন্য এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। তারা যদি আলোচনায় ব্যর্থ হয়, তাহলে সরকার কী করবে, কী সিদ্ধান্ত নেবে? এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, আমরা কোনো আলটিমেটাম দিইনি, আহ্বান জানিয়েছি। আমরা অপেক্ষা করব। তারপর সরকার সরকারের মতো পদক্ষেপ নেবে।
সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য আলোচনার আয়োজন করে দেবে কি না এমন প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, সরকার বহু আলোচনা করেছে। সরকার আর কোনো আয়োজন করতে যাচ্ছে না। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ১৫ বছরে আলোচনা করে বহু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা অত্যন্ত প্রতিকূল সময়ে একসঙ্গে আন্দোলন করেছে, নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তারা নিজেরা আলোচনা করে ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেবে—এ প্রত্যাশা সরকার করছে।
আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, একটি বড় রাজনৈতিক দলের পক্ষে অভিযোগ করা হচ্ছে, ঐকমত্য কমিশনে যে বিষয়গুলো আলাপ-আলোচনা করা হয়েছিল, বাস্তবায়ন সুপারিশে এসে, সেই আলাপ-আলোচনার বিষয়গুলোর ব্যত্যয় ঘটেছে বা সম্পূর্ণভাবে সেগুলো রক্ষা করা হয়নি। এর জবাবে কোনো মন্তব্য নেই বলে জানান আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে এই বিষয়েও আমাদের একটি ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেবে এ প্রত্যাশা করছি।
গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে।
তবে গণভোট কবে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে। এসব সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে সোমবার জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।






