জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হাদি রাখা হয়েছে ৪৮ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯:৪৭:৪১ অপরাহ্ন

জালালাবাদ রিপোর্ট: জীবন মৃত্যু সন্ধিক্ষণে কঠিন সময় পার করছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ মো. ওসমান হাদি। তার সার্বিক অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। তারা হাসপাতালে ভিড় না করে হাদির জন্য দোয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। এসময় কোনো ধরনের অনুমানভিত্তিক বা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার না করে মেডিকেল বোর্ডের প্রতি আস্থা রাখারও আহবান জানানো হয়। এদিকে ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকেও দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে। তারা জানান হাদি এখনো আশঙ্কামুক্ত নন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ৪৮ ঘণ্টা না পেরোনো পর্যন্ত তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাবে না।
শনিবার বিকেলে ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে তার সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা সম্পর্কে জানানো হয়। হাদির চিকিৎসায় সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকার ডিএমএস ডা. আরিফ মাহমুদ।
শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপারেশন সম্পন্ন হওয়ার পর অপারেশন-পরবর্তী উন্নত চিকিৎসা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য শরীফ মো. ওসমান হাদিকে এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকার ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়।
মেডিকেল বোর্ডের পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত: রোগীর মস্তিষ্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেহেতু সার্জিক্যাল হস্তক্ষেপ সম্পন্ন হয়েছে, তাই বর্তমানে তাকে কনজারভেটিভ ম্যানেজমেন্টে রাখা হয়েছে। ব্রেন প্রোটেকশন প্রটোকল অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় সকল সাপোর্ট চালু থাকবে। শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে পুনরায় ব্রেনের সিটি স্ক্যান করা হতে পারে।
ফুসফুসে ইনজুরি বিদ্যমান রয়েছে। চেস্ট ড্রেইন টিউব দিয়ে অল্প পরিমাণ রক্ত নির্গত হওয়ায় তা আপাতত চালু রাখা হয়েছে। ফুসফুসে সংক্রমণ ও এআরডিএস (অজউঝ) প্রতিরোধের বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট অব্যাহত রাখা হবে।
কিডনির কার্যক্ষমতা বর্তমানে ফিরে এসেছে। এটি বজায় রাখার জন্য পূর্বনির্ধারিত ফ্লুইড ব্যালেন্স যথাযথভাবে চালিয়ে যাওয়া হবে।
পূর্বে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধা ও রক্তক্ষরণের মধ্যকার অসামঞ্জস্যতা (ডিআইসি) দেখা দিলেও বর্তমানে তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এ অবস্থা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী রক্ত ও রক্তজাত উপাদান সঞ্চালন অব্যাহত থাকবে।
ব্রেন স্টেম ইনজুরির কারণে রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দনের ওঠানামা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে যে সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে তা চলমান থাকবে। হৃদস্পন্দন বিপজ্জনকভাবে কমে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে টেম্পোরারি পেসমেকার স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট টিম সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার, রেডিওলজি, আইসিইউ, অ্যানেস্থেশিয়া, নিউরোসার্জারি ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসক ও সাপোর্টিভ স্টাফদের অসাধারণ ও মানবিক অবদানের জন্য এই মেডিকেল বোর্ড তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। বর্তমানে রোগীর সার্বিক অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।
এই মেডিকেল সামারি রোগীর ভাই ও নিকটাত্মীয়দের বিস্তারিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। তাঁরা চাইলে গণমাধ্যমের মাধ্যমে দেশবাসীকে এ বিষয়ে অবহিত করতে পারেন। মেডিকেল টিমের পক্ষ থেকে সকলের প্রিয় শরীফ মো. ওসমান হাদির জন্য বিনীতভাবে দোয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
ইনকিলাব মঞ্চের দোয়া কামনা: এরআগে শনিবার সকালে ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হাদি এখনো আশঙ্কামুক্ত নন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ৪৮ ঘণ্টা না পেরোনো পর্যন্ত তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাবে না।
শনিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, ‘ওসমান হাদির ইন্টারনাল রেসপন্স আছে। তবে তিনি এখনো আশঙ্কামুক্ত নন। চিকিৎসকেরা তাকে ৪৮ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। এর বেশি কিছু বলার মতো অবস্থা এখনো হয়নি।’ তিনি ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে হাদির সুস্থতার জন্য দোয়া চান।
এদিকে সকাল থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে ইনকিলাব মঞ্চ, মঞ্চ-২৪ এবং আরও কিছু প্ল্যাটফর্মের নেতা-কর্মীদের জড়ো হতে দেখা যায়।
সকাল সাড়ে ১০টায় হাসপাতালের সামনে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন মঞ্চ-২৪ প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ফাহিম ফারুকী। তিনি বলেন, ‘এই হামলা পরিকল্পিত। বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা প্রমাণ পেয়েছি, হামলাকারীরা কার্যক্রমনিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সদস্য। অথচ সরকার তাদের গ্রেপ্তারে অনীহা দেখাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে যারা অংশ নিয়েছেন, তারা সবাই এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।’ তিনি জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবি করেন।




