বায়ুদূষণে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮:৫৮:২৭ অপরাহ্ন
এ অঞ্চলে বছরে ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু

জালালাবাদ ডেস্ক : বায়ুদূষণে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদন ‘আ ব্রেথ অব চেঞ্জ: সলিউশনস ফর ক্লিনার এয়ার ইন দ্য ইন্দো-গাঙ্গেটিক প্লেইনস অ্যান্ড হিমালয়ান ফুটহিলস’ এ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষিত পরিবেশ ও বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষ সারির দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোয় বছরের অধিকাংশ সময়ই বায়ুর মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘অত্যন্ত ক্ষতিকর’ পর্যায়ে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে দ্রুত নগরায়ণ, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, নির্মাণকাজের ধুলাবালি ও পুরনো যানবাহনের ধোঁয়ার কারণে দেশের বড় শহরগুলো দূষিত হচ্ছে, যা দেশের উৎপাদনশীলতা ও স্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমি ও হিমালয়ের পাদদেশ (আইজিপি-এইচএফ) নামে পরিচিত অংশগুলোয় বায়ুদূষণ স্বাস্থ্য এবং উৎপাদনশীলতার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ক্ষতি করছে, যা এ অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুতর উন্নয়ন চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি। দক্ষিণ এশিয়ার এসব রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুতর উন্নয়ন চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো বায়ুদূষণ। বায়ুদূষণের ফলে এ অঞ্চলে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ অস্বাস্থ্যকর বা দূষিত বায়ুতে শ্বাস নিচ্ছে। যার ফলে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হচ্ছে।
বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের ফলে এ অঞ্চলের বার্ষিক জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর আগে ২০২৪ সালে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের ‘বৈশ্বিক বায়ু মান প্রতিবেদন-২০২৪’ অনুযায়ী বায়ুদূষণে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। শহর হিসেবে বিশ্বের রাজধানী ঢাকার অবস্থান ছিল শীর্ষ তিনে। এছাড়া আইকিউএয়ারের বৃহস্পতিবারের দৈনিক প্রতিবেদনে অস্বাস্থ্যকর বায়ুর দিক থেকে ঢাকার অবস্থান ছিল ১১তম। বায়ুদূষণে ঢাকার পাশাপাশি এগিয়ে রয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের রাজধানী দিল্লি, পাকিস্তানের লাহোরের মতো শহরও।
বায়ুদূষণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাঁচটি উৎস খুঁজে পেয়েছে বিশ্বব্যাংক। মূল উৎস হিসেবে বলা হয়েছে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল এবং পাকিস্তানের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত আইজিপি-এইচএফকে। বায়ুদূষণের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে রান্না ও গরম করার জন্য কঠিন জ্বালানি পোড়ানো, উপযুক্ত ফিল্টার প্রযুক্তি ছাড়াই জীবাশ্ম জ্বালানি ও জৈব বস্তুপুঞ্জ পোড়ানো, অদক্ষ অভ্যন্তরীণ দহন যানবাহন ব্যবহার করা, কৃষকরা ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানো এবং অদক্ষভাবে সার ও সার ব্যবস্থাপনা করা এবং পরিবার ও প্রতিষ্ঠানগুলো বর্জ্য পোড়ানো। এসব কারণে বাড়ছে দূষণ।
বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে দূষণরোধ করতে পরামর্শ দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা ও বিচার ব্যবস্থায় কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলে দূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সম্ভব। এতে জনস্বাস্থ্যের উন্নতি হবে ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও আরো শক্তিশালী হবে। সংস্থাটি প্রতিবেদনে কিছু সমাধানের কথা তুলে ধরেছে, যেগুলো সহজেই গ্রহণ করা ও বড় পরিসরে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুচ্চালিত রান্না ব্যবস্থা, শিল্প-কারখানার বয়লার, চুল্লি ও ভাটার বিদ্যুতায়ন ও আধুনিকীকরণ, অ-মোটরচালিত ও বৈদ্যুতিক পরিবহন ব্যবস্থা; ফসলের অবশিষ্টাংশ ও পশুবর্জ্যের উন্নত ব্যবস্থাপনা এবং বর্জ্য আলাদা করা, পুনর্ব্যবহার ও নিরাপদ নিষ্পত্তির উন্নত পদ্ধতি।
প্রতিবেদনে পরিষ্কার-বাতাস নিশ্চিত করতে তিনটি সমাধানের কথা বলেছে। প্রথমত, রান্না, শিল্প, পরিবহন, কৃষি এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তাদের উৎসে নির্গমন হ্রাস করে এমন সমাধান। দ্বিতীয়ত, সুরক্ষা ব্যবস্থা যা স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে। যাতে পরিষ্কার বাতাসে রূপান্তরের সময় শিশু এবং ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়গুলো সুরক্ষিত থাকে। শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান ও নীতিনির্ধারণী কাঠামো, বাজারভিত্তিক উপকরণ এবং আঞ্চলিক সমন্বয়ের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে বহু খাত ও বহু অঞ্চলীয় অগ্রগতি ধরে রাখা।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র পরিবেশগত অর্থনীতিবিদ মার্টিন হেগার বলেন, প্রতিবেদন দেখায় যে সমাধানগুলো নাগালের মধ্যে রয়েছে এবং নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের জন্য সমন্বিত, সম্ভাব্য এবং প্রমাণভিত্তিক সমাধানগুলো স্কেলে বাস্তবায়নের জন্য একটি বাস্তব রোডম্যাপ প্রদান করে। দক্ষিণ এশীয় উদ্যোগ, পরিবার এবং কৃষকদের জন্য পরিষ্কার প্রযুক্তি ও অনুশীলন গ্রহণের জন্য এবং সরকারগুলোকে তাদের সমর্থন করার জন্য শক্তিশালী আর্থিক ও অর্থনৈতিক যুক্তি রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিবেশবিষয়ক প্র্যাকটিস ম্যানেজার অ্যান জিনেট গ্লাউবার বলেন, পরিচ্ছন্ন বায়ু অর্জনের জন্য ধারাবাহিক সহযোগিতা, টেকসই অর্থায়ন এবং স্থানীয়, জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে শক্ত বাস্তবায়ন প্রয়োজন। সরকারগুলো একসঙ্গে কাজ করলে দূষণ কমানো, লাখো প্রাণ বাঁচানো এবং সবার জন্য পরিষ্কার বাতাস নিশ্চিত করার এ পথ অনুসরণ করা সম্ভব।





