হাদি ফিরলেন কফিনবন্দি হয়ে শোকস্তব্ধ দেশ, আজ রাষ্ট্রীয় শোক
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:১০:৪০ অপরাহ্ন
২টায় জানাযা, শায়িত হবেন জাতীয় কবির পাশে

জালালাবাদ রিপোর্ট : অজস্র মানুষকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র, জুলাই গণঅভ্যূত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদি। সব প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে সিঙ্গাপুর থেকে জুমআ’র দিনে ফিরলেন কফিনবন্দি হয়ে।
তাঁর শাহাদাতের পর যেন শোকে স্তদ্ধ হয়ে পড়েছে গোটা দেশ। ইন্তেকালের খবরে বৃহস্পতিবার ঢাকা তথা গোটা দেশ যেন ফেটে পড়েছিলো বিক্ষোভে। ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেই রাতভর এসেছে বিক্ষোভ-হামলা-ভাঙচুরের খবর। গতকাল শুক্রবারও রাজধানীর শাহবাগে শিক্ষার্থী ও সব স্তরের মানুষের ঢল নেমেছিলো। বিক্ষোভে উত্তাল ছিলো সিলেটও।
মৃত্যুকালে হাদির বয়স হয়েছিল ৩২ বছর। মৃত্যুর খবরটি প্রথমে জানানো হয় ইনকিলাব মঞ্চের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে। যেখানে বলা হয়, ভারতীয় আধিপত্যবাদের মোকাবিলায় মহান বিপ্লবী ওসমান হাদিকে আল্লাহ শহীদ হিসাবে কবুল করেছেন।
রাতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে তাৎক্ষণিক ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি সবাইকে ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, হাদি হত্যায় জড়িত সবার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। তিনি আজ শনিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা দেন।
হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, আমি শরীফ ওসমান হাদির মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে গভীরভাবে শোকাহত। আল্লাহ যেন তাঁর রুহের মাগফিরাত করে তাঁকে বেহেশত নসিব করেন। তাঁর এই অকাল শহীদি মৃত্যু আবারও মনে করিয়ে দিল- রাজনৈতিক সহিংসতা কত বড় মানবিক মূল্য দাবি করে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, হাদি শাহাদাত বরণ করায় সারা দেশে শোক, ক্ষোভ ও প্রতিবাদের আবহ তৈরি হয়েছে, এই প্রেক্ষাপটে সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক জনগণ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে শহিদ শরিফ ওসমান হাদির রূহের মাগফিরাত কামনা করছে। একই সঙ্গে তার জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থতার বিষয়ে গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করছে।
এদিকে, শুক্রবার সন্ধ্যায় হাদির লাশ দেশের মাটিতে পৌঁছেছে। তার মরদেহ বহনকারী বিমান সন্ধ্যা ৫টা ৪৯ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। হাদির লাশ বিমানবন্দর থেকে নেয়া হয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘরে। শুক্রবার বিকেলে ইনকিলাব মঞ্চের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়।
বিমানবন্দরের ৮ নম্বর হ্যাঙ্গার গেট দিয়ে হাদির কফিনবাহী গাড়িটি যখন বেরিয়ে আসে, সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। আগেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়; মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএন ও আনসার সদস্য।
ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজ শনিবার বেলা ২টায় মানিক মিয়া এভিনিউতে অনুষ্ঠিত হবে হাদীর নামাজে জানাজা। তাকে কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে সমাহিত করা হবে বলে জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।
এদিকে বিমানবন্দরে ওসমান হাদীর মরদেহ গ্রহণ করেন গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আক্তার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম প্রমুখ।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ১০টায় সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ওসমান হাদি। এ খবর দেশে পৌঁছতেই শুরু হয় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। হাদির মৃত্যুর খবর শুনে তাৎক্ষণিকভাবে রাজধানীর শাহবাগে জড়ো হন সহযোদ্ধা ও বিপুলসংখ্যক বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। ক্ষোভ-বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। হাদি হত্যার বিচার চেয়ে ‘তুমি কে, আমি কে, হাদি-হাদি’; ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরেসহ নানা স্লোগান দেন। উত্তাল হয়ে ওঠে শাহবাগসহ আশপাশের এলাকা। এ সময় শাহবাগে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এক কথায়, ওসমান হাদির মৃত্যুর খবরে পুরো দেশ যেন হঠাৎ থমকে দাঁড়ায়। রাত যত বাড়তে থাকে, বিক্ষোভে উত্তাল হতে থাকে চারিদিক। এভাবে বৃহস্পতিবারের রাত দেশজুড়ে ছাত্র-জনতার গগণবিদারী স্লোগানে প্রকম্পিত হতে থাকে। শুক্রবারও উত্তাল ছিলো রাজধানীসহ গোটা দেশ।
হাদি ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন এমন যুক্তিতে ভারতীয় আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে পথে নামেন মানুষ।




