সিলেটে বন্যার মাঝেও দু:সংবাদ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জুন ২০২৪, ৯:৫৭:২৮ অপরাহ্ন
এখনো পানিবন্দী প্রায় ৮ লাখ
জালালাবাদ রিপোর্ট : সিলেটে বৃষ্টি কমেছে। দুর্ভোগ-ভোগান্তি অবশিষ্ট রেখে বন্যার পানিও নামছে। কিন্তু এই অবস্থার মধ্যেও এলো দুঃসংবাদ। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এবং জলবায়ু গবেষকদের আশঙ্কা, দুই দফা বন্যার পানি সরে যাওয়ার আগেই জুনের শেষদিকে উজানের ঢলে ও ভারী বৃষ্টিতে আবারও হতে পারে বন্যা। জেলা প্রশাসকও ২৮ তারিখের পরে সতর্ক থাকার জন্য বলেছেন। আর এ খবর আতঙ্ক বাড়াচ্ছে সিলেটবাসীর মনে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, সুরমা-কুশিয়ারার তিনটি পয়েন্টে এখনো বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তুলনামুলক সুরমা তীরবর্তী এলাকার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও কুশিয়ারা তীরবর্তী মানুষ এখনও আছেন দুর্ভোগে। কুশিয়ারা নদীর পানি স্তব্ধ হয়ে আছে। গত তিনদিন বৃষ্টি না হলেও মন্থরগতিতে মাত্র এক সেন্টিমিটার করে পানি কমেছে এ নদীতে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের তথ্যমতে, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহমান ছিল।
অমলসিদ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহমান ছিল।কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিপদসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।এ অবস্থায় শেষ ২৪ ঘন্টায় সিলেটে ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে। এরমাঝে নতুন বৃষ্টির শঙ্কা ভাবিয়ে তুলেছে সবাইকে।বন্যা ও জলবায়ু গবেষকেরা বলছেন, এ মাসে দুই দফা বন্যার পানি সম্পূর্ণ নেমে যাওয়ার আগেই জুন শেষে আবারও পাহাড়ি ঢলের শঙ্কা রয়েছে।
এবারের জুনে সিলেটে স্বাভাবিক বৃষ্টি হয় ৮৪১ মিলিমিটার। সেখানে এ বছর ১৮ দিনে বৃষ্টি ঝরেছে ১৬শ মিলিমিটারেরও বেশি। সেই সঙ্গে পূর্বে আসাম, মিজোরাম, মণিপুর রাজ্যের ভারী বৃষ্টির পানি বরাক নদী দিয়ে সুরমা ও কুশিয়ারায় উপচে পড়ছে। ২০২২ এর জুনে সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছিল ১ হাজার ৪৫৬ মিলিমিটার। সম্প্রতি অস্বাভাবিক বৃষ্টি এই এলাকায় বন্যার প্রকোপ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা গবেষক আমীর হোসেইন বলেন, দুই দফা বন্যার পানি সরে যাওয়ার আগেই উজানের ঢলে আবারও বন্যা হতে পারে। যার ফলে ক্ষয়ক্ষতিও জ্যামিতিক হারে বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।আমীর হোসেইন বলেন, হাওরে বন্যা থেকে বাঁচতে সাধারণত ডুবন্ত বাঁধ নির্মাণ করা হয়। তবে অপরিকল্পিত আন্তঃসড়ক ও নাব্যতা সংকটে ঢলের পানি নামতে সময় নিচ্ছে।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, সিলেট-সুনামগঞ্জের জেলার হাওরসহ সিলেটের নিচু এলাকা পানিতে পরিপূর্ণ। অন্যদিকে মৌলভীবাজারের জুড়ী ও মনু নদের পানি সিলেটের কুশিয়ারা নদীতে যুক্ত হচ্ছে; তাই নদীর পানি নামছে ধীরগতিতে।জেলা প্রশাসনের গতকালের হালনাগাদ তথ্যমতে, এখনো সিলেটের ১৩টি উপজেলার ১১০টি ইউনিয়নের এক হাজার ৩৪৩টি গ্রাম প্লাবিত রয়েছে। এখনো প্লাবিত অবস্থায় আছেন ৭ লাখ ৮৯ হাজার ১৩১ জন। আর মহানগরসহ জেলার ৭৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্রের ২৫৮টিতে ১২ হাজার ৯০৫ জন অবস্থান করছেন।
বন্যা আক্রান্তদের অনেকে জানান, বন্যার পানি কমে যাওয়ায় বাড়ি ঘরে ফিরলেও ভারী বর্ষণ হলে আবারও আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে আসতে হবে। কিন্তু গবাদি পশু ও মালামাল টেনে নিয়ে আসা যাওয়াতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সেইসঙ্গে বন্যার পানিতে টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আর নগরের প্লাবিত এলাকাগুলোর বাসা-বাড়িতে সেফটিক ট্যাংকে ময়লা পানি প্রবেশ করায় খাবার পানির তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সিটি করপোরেশন থেকে বিভিন্ন এলাকায় পানি সরবরাহ করলেও তা অপ্রতুল বলেও জানান বন্যা আক্রান্তরা।
উল্লেখ্য যে, চেরাপুঞ্জি ও আসামে ভারী বৃষ্টির সঙ্গে উজানের ঢলে জুনে দুই দফা বন্যায় তলিয়ে যায় সিলেটের চার জেলা। পানিবন্দী হয়ে পড়েন ২২ লাখ মানুষ। নতুন করে বন্যা আক্রান্ত হলে ভোগান্তির সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।