ইসরাইলের অপরিনামদর্শী হুমকি
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জুলাই ২০২৪, ১২:৩০:৫৭ অপরাহ্ন
সম্প্রতি একটি ইসরাইলি মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, ইসরাইলের অ্যারোস্পেস ইন্ড্রাস্ট্রির চেয়ারম্যান ইয়ের কাটজ বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশ যদি ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘ধ্বংসাত্মক’ আক্রমণ করে, তবে কেয়ামত নামিয়ে আনা হবে। এমন অস্ত্র ইসরাইলের কাছে আছে। ইয়ের কাটজ আরো বলেন, যদি আমরা বুঝতে পারি আমাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে এবং ইরান, ইয়েমেন, সিরিয়া, ইরাক ও মধ্যপ্রাচ্যের সবদেশ যদি সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা আমাদের বিরুদ্ধে বোঝাপড়া করার সময় এসেছে এই অবস্থায় আমি মনে করি, আমাদের কেয়ামত নামিয়ে আনার মতো অস্ত্র ব্যবহারের সক্ষমতা আছে।
ইসরাইলের এই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার উপরোক্ত বক্তব্য ইতোমধ্যে বিশ^ব্যাপী বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। কারণ তার বক্তব্যে ইসরাইলের পরমাণু অস্ত্রসহ এই জাতীয় মারাত্মক অস্ত্র ব্যবহারের শুধু প্রচ্ছন্ন নয়, স্পষ্ট ও প্রকাশ্য হুমকি দেয়া হয়েছে। একটি অবৈধ ও দখলদার রাষ্ট্র কর্তৃক মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর বিরুদ্ধে উচ্চারিত এমন ধৃষ্টতাপূর্ণ ও শংকা সৃষ্টিকারী বক্তব্যে বিশে^র মুসলিম জনগোষ্ঠীসহ সকল সচেতন ও বিবেকবান মানুষ উদ্বিগ্ন হলেও হতবাক নন। যে দেশটি আত্মরক্ষার যুদ্ধের নামে একটি ভূখন্ডের প্রায় ৩০ হাজার নারী ও শিশুকে হত্যা করতে পারে, সে দেশের একজন কর্মকর্তা বা নেতার মুখ থেকে প্রতিপক্ষের দেশগুলোর বিরুদ্ধে এমন ত্রাস সৃষ্টিকারী বক্তব্য ও হুমকি মোটেই অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে তারা মনে করেন, ইসরাইল যদি তার প্রতিপক্ষের দেশ বা যুদ্ধরত গোষ্ঠিগুলোর বিরুদ্ধে এমন ভয়ানক অস্ত্র ব্যবহার করে তাদের বিধ্বস্তও করে দেয়, তবুও সে নিজে কি এর ভয়াবহ ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবে, এমন প্রশ্ন থেকেই যায়।
ইসরাইল তার প্রতিবেশী শত্রুদেশে এ ধরণের ভয়াল অস্ত্র ব্যবহার করলে সে দেশের পরিবেশ যেভাবে দূষিত হবে সেই অস্ত্রের রেডিয়েশন বা প্রতিক্রিয়া থেকে, এতে ছোট্ট দেশ ইসরাইলের পরিবেশ ও এই তেজোস্ক্রিয়তা ও বিষক্রিয়ার বাইরে থাকবে না। এছাড়া প্রতিপক্ষের দেশ বা দেশগুলো ইসরাইলের এমন হামলার ক্ষেত্রে যে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে এমনটি ভাবা ইসরাইলের জন্য চরম বোকামী। ধরা যাক, ইসরাইলের একটি পরমাণু বা এ জাতীয় ধ্বংসাত্মক বোমা ইরানে একটি বা একাধিক শহরে আঘাত করলো, তখন ইরানের অক্ষত বা কম ক্ষতিগ্রস্ত শহর বা এলাকা থেকে যে সব মারাত্মক ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করা হবে, এতে ইরান, সিরিয়া, ইরাক এমন লেবাননের তুলনায় ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অবৈধ এমন কোন অংশ কি রক্ষা পাবে বা অক্ষত থাকবে? এমনটিও মাথায় রাখতে হবে ইসরাইলকে। সবচেয়ে বড়ো কথা, ইসরাইল বিশে^র মানচিত্রে অন্যায় ও বেআইনীভাবে বলপূর্বক প্রতিষ্ঠিত একটি অবৈধ রাষ্ট্র। সে যদি আধুনিক অস্ত্রের বদৌলতে যুদ্ধে জিতেও যায়, তবুও তার এ বিজয়ে কোন গৌরব নেই।
অপর দিকে দখলদার ইসরাইলের অবৈধ দখলদারিত্ব, নির্যাতিত ও গণহত্যার বিরুদ্ধে লড়াই করে ইরান, লেবানন, সিরিয়া কিংবা ইয়েমেন-ইরাকের মতো দেশগুলো ধ্বংসও হয়ে যায় কিংবা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবুও তাদের নৈতিক বিজয় হবে। ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হবে তাদের নাম। আর মুসলিম জাতিসহ গোটা বিশে^র সকল বিবেকগণ ও সচেতন মানুষের সীমাহীন ঘৃণা ও ধিক্কার নিয়ে বেঁচে থাকবে ইসরাইল। সর্বোপরি ইহুদীবাদী ইসরাইলদের এ ধরণের ঐতিহাসিক নির্মমতা নৃশংসতা ও গণহত্যার জন্য শুধু যুগ যুগ নয়, শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে মাশুল গুণতে হবে বিশে^র সকল ইহুদীকে। ঘৃণা ও গণত্যার অপবাদ নিয়ে তাদের বেঁচে থাকতে হবে পৃথিবী নামক এই উপগ্রহে। আশাকরি ইসরাইলের যুদ্ধবাজ নেতারা ও যুক্তরাষ্ট্রসহ তাদের গডফাদার দেশগুলো বিষয়টি সম্যকভাবে অনুধাবনে সক্ষম হবে।