সাঁতার শেখায় উদাসীনতা
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:৩০:১৪ অপরাহ্ন
বৃষ্টি ও বন্যার কারণে সিলেট অঞ্চলের নিম্নাঞ্চল যেমন প্লাবিত তেমনি প্রতিটি নদী নালা খাল বিল ও জলাশয় এখন পানিতে টুইটুম্বুর। এ অবস্থায় অন্যান্য দুর্ভোগ দুর্ঘটনার পাশাপাশি পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত শনিবার হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে পুকুরে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর আগের দিন সিলেটের গোয়াইনঘাটের রাতারগুল পর্যটন কেন্দ্রে বেড়াতে গিয়ে পানিতে ডুবে এক কিশোরের মৃত্যু হয়। এভাবে দেশের কোথাও না কোথাও প্রায়ই পানিতে ডুবে মৃত্যুর মর্মান্তিক ঘটনা ঘটছে।
দেখা যাচ্ছে, পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারীদের শতকরা নব্বই ভাগেরও বেশী শিশু। বাকীরা সাঁতার না জানা লোক। এখন দেশজুড়ে, বিশেষভাবে সিলেট অঞ্চলে বন্যার তান্ডব চলছে। নিম্নাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ পানিবন্দী। অনেক স্থানের রাস্তাঘাট মাঠ প্রান্তর পানিতে তলিয়ে গেছে। এ অবস্থায় সাঁতার না জানা মানুষ বিশেষভাবে শিশুদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। চলাচলের জন্য নৌকাসহ বিভিন্ন নৌযানের ব্যবস্থার বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়া খারাপ থাকলে কিংবা বন্যার পানির তোড়ে নৌকাসহ এসব নৌযান ডোবার আশংকা রয়েছে।
একথা সর্বজনবিদিত যে, বদ্বীপ বাংলাদেশ খাল-বিল-হাওরে পূর্ণ নদীবহুল দেশ। তাই প্রায় প্রতি বছরই এদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা-জলোচ্ছ্বাস সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। নদীর উপকূলবর্তী জনপদসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে যায়। এ অবস্থায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে বন্যার পানির সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়। বন্যার পানিতে বন্দী থেকে কিংবা বন্যায় ভাসতে ভাসতে দুর্ভোগের দিনগুলো কাটাতে হয়। পরিস্থিতি যখন এমন তখন ধারণা বা প্রত্যাশা করা হয় এসব বন্যাপ্রবণ বা বন্যা উপদ্রুত এলাকার মানুষ সবাই সাঁতার জানে। শুধু বয়স্ক লোকজন নয়, শিশুরাও সাঁতার জানবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এদেশের শহরাঞ্চল তো বটে গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ শিশু কিশোর সাঁতার জানে না। বিষয়টি রীতিমতো বিস্ময়কর ও উদ্বেগজনক। ফলে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন গ্রাম ও প্রত্যন্ত এলাকা থেকে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর খবর আসছে বিভিন্ন মিডিয়ায় তা প্রকাশিত হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি এলাকায়ই হয় পুকুর, জলাশয় খাল বিল কিংবা নদী আছে। তা সত্বেও কোন গ্রামের ৮/১০ বছরের একটি শিশু সাঁতার জানবে না কেনো? এমন প্রশ্ন অপ্রাঙ্গিক বা অযৌক্তিক নয়। এজন্য পিতা মাতা ও অভিভাবকরাই দায়ী। শিশু কিশোররা প্রতিদিন যখন পুকুরে বা অন্যান্য জলাশয়ে গোসল করতে যায়, তখন পিতা মাতা ও অভিভাবকরা একটু মনোযোগ ও তাগিদ দিলেই তারা সাঁতার শিখে ফেলতে পারে। সাঁতার শেখা আদৌ কোন কঠিন কাজ নয়। আর একবার সাঁতার শিখলে সে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তা ভুলবে না। বলা যায়, সারাজীবনের জন্য অহেতুক ‘পানি ভীতি’ থেকে মুক্ত থাকবে। ইদানিং শহরাঞ্চলে অনেক পিতামাতা ও অভিভাবকরা সুইমিং পুল বা অন্যান্য পুকুর জলাশয়ে গিয়ে ছেলেমেয়েদের সাঁতার শেখানোর চেষ্টা করতে দেখা যাচ্ছে। তবে এই সংখ্যা অত্যন্ত কম। এখনো সিংহভাগ শহর নগরবাসী এ বিষয়ে উদাসীন। শহরাঞ্চলের আশি নব্বইভাগ শিশু কিশোর কিশোরী এখনো সাঁতার জানে না। এ অবস্থায় বড় হচ্ছে। বিষয়টি রীতিমতো উদ্বেগজনক। বিশেষভাবে বাংলাদেশের মতো নদীবহুল ও খাল বিল জলাশয়ে পরিপূর্ণ একটি দেশের জন্য তা শংকা সৃষ্টিকারী। আশা করবো শহর ও গ্রামাঞ্চলের পিতামাতা ও অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের শৈশবেই সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা করবেন। এছাড়া প্রশাসন, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও কর্তৃপক্ষসমূহের উদ্যোগে প্রতি বছর বিভিন্ন এলাকায় স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস কিংবা নববর্ষ উপলক্ষে ‘সাঁতার শেখা’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারেন।
আর এটা অব্যাহত রাখলে প্রতি বছর পানিতে ডুবে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর ঘটনা যে প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে, এতে কোন সন্দেহ নেই।