মা-বাবাকে মারধর : ১৭ জনের কারাদন্ড
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৩৯:৫৭ অপরাহ্ন
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : সারাদিন প্রশাসনিক কাজ সামলিয়ে ক্লান্ত শরীর। সন্ধ্যার পর তাই বাসায় ফেরার পালা। কিন্তু হঠাৎ করেই মোবাইল ফোনে কল আসল টাকার জন্য নিজের মা-বাবাকে মারধর করছে এক যুবক। থানায় কল দিয়ে পুলিশ ফোর্স নিয়ে ছুটে যান ঘটনাস্থলে। আটক করে আনা হয় শাস্তির আওতায়। এই তৎপরতা হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মহিউদ্দিন আহমেদের।
এমন ঘটনা কেবল একদিন বা দু’দিনের নয়; যখন শুনেছেন পারিবারিক দ্বন্দ্ব বা নেশার টাকার জন্য মা-বাবা-স্ত্রীকে মারধর করছেন কোন যুবক, সেখানে ছুটে গেছেন তিনি। আটক করে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে দিয়েছেন কারাদন্ড। দিন কিংবা রাত, যখনই এমন ঘটনার সংবাদ পেয়েছেন ছুটে গেছেন তিনি। গত দুই বছরের এমন তৎপরতায় মা-বাবার ওপর নির্যাতনের ঘটনা এখন অনেকটাই কমে এসেছে। ব্যতিক্রমি এই কর্মকান্ডে জেলাজুড়ে বেশ প্রশংসা খুড়িয়েছেন তিনি।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ৪ আগস্ট নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন শেখ মহিউদ্দিন আহমেদ। এরপর থেকে গত দুই বছরে এমন অসংখ্য অভিযান চালিয়েছে তিনি। এর মধ্যে ১৭টি ঘটনায় ১৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।
শেখ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি নবীগঞ্জে যোগদানের পর লক্ষ্য করলাম এখানে মানুষের সচেতনতার অনেক অভাব রয়েছে। অনেক মানুষের চাষ করার মতো জায়গা না থাকায় তাদের কারও কারও ছেলেরা বেকার অবস্থায় বিভিন্নভাবে বেলাইনে চলে গেছে। তারা বিভিন্ন সময় নেশার টাকার জন্য মা-বাবা-স্ত্রীকে মারধর করে। কিন্তু মা-বাবারা ছেলেদের বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা নেন না। বিষয়টি নিয়ে আমি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্যারের সাথে কথা বলি। তিনি আমাকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।’
ইউএনও বলেন, ‘ঘটনার পর খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে অনেককে আটক করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। ভ্রাম্যমান আদালতের নিয়ম অনুযায়ী ঘটনার সাথে সাথে আটক করা না গেলে পরে আটক করা যাবে না। তবে এ ব্যাপারে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সাধারণ মানুষের ব্যপক সহযোগিতা পেয়েছি। একজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পর সে বিষয়টি মসজিদের মাইকে অনেক সময় ঘোষণা করে দিয়েছেন স্থানীয়রা। যে কারণে অনেক যুবকরা এমনিতেই সংশোধন হয়ে গেছেন।’
ইউএনওর এমন ব্যথিক্রমী তৎপরতায় খুশি নবীগঞ্জের সুশীল সমাজ। তারা বলছেন, এমন তৎপরতায় মা-বাবাকে মারধরের ঘটনা অনেকটা কমে এসেছে।
নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম বলেন, ইউএনওর এই কাজটি বেশ প্রশংসনীয়। তিনি এই অভিযান নিয়মিত চালানোর কারণে অনেক বখাটে আইনের আওতায় এসেছে। এছাড়া এই অপরাধের প্রবণতাও অনেকটা কমে এসেছে উপজেলাজুড়ে। যারা আগে বিভিন্ন কারণে-অকারণে মা-বাবা-ভাই-বোন বা স্ত্রীকে মারধর করত তারা ভয়ে অনেকটা সংশোধিত হয়েছেন।
হবিগঞ্জের সিনিয়র আইনজীবি হাফিজুল ইসলাম বলেন, মা-বাবাকে মারধর করা একটি সামাজিব ব্যাধি। এই ব্যধি নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমান আদালত বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে। যেহেতু নবীগঞ্জের ইউএনও খুব গুরুত্বের সাথে এই কাজটি করেছেন নিশ্চই সমাজ উপকৃত হবে। আমি আশা করব, শুধু নবীগঞ্জের ইউএনও নয়, সকল ইউএনওরাই যেন এই কাজটি করেন। তাহলে সমাজের এই ব্যাধি দূর করা যাবে।