আহলান সাহলান মাহে রমজান
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ মার্চ ২০২৩, ৪:০০:৫০ অপরাহ্ন
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে ঈমান ও সালাতের পরই রোজার অবস্থান। আর তাই রমজানের রোজা রাখা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ। রোজার গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ হলো সাহরি। রোজা রাখবার জন্য শেষরাতে যে খাবার খাওয়া হয় তাই সাহরি। সাহরি খাওয়া সুন্নত। এছাড়াও সাহরির যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। মহানবী সা. বলেছেন, মুসলমান এবং ইহুদী-খৃষ্টানদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরি। একথা কুরআন থেকেই আমরা জানি যে, রোজা কেবল আমাদের উপর নয়, আমাদের আগেকার নবীদের উম্মতদের উপরও ফরজ ছিল। তবে নবী করীম সা. এর একথা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের এবং তাদের রোজার মধ্যে পার্থক্য ছিল সাহরি খাওয়া।
এছাড়া সাহরির অনেক ফজিলত রয়েছে। রাসুল সা. বলেছেন, ‘তোমরা সাহরি খাও। নিশ্চয় সাহরির মধ্যে বরকত রয়েছে।’ কাজেই যারা কোনো কারণ ছাড়া অলসতা কিংবা অবহেলায় নানান অজুহাতে সাহরি এড়িয়ে চলেন, তারা মূলত: ইহুদী এবং খৃষ্টানদের অনুসরণ করেন। এছাড়া শারীরিকভাবেও সাহরির অনেক দরকার থেকে যায়। কেননা রোজা পালন করতে গিয়ে সারাদিন না খেয়ে থাকতে হয়। এখন কেউ যদি শেষরাতে সাহরি না খায় তো তার না খেয়ে থাকার সময়টা দীর্ঘ হয়ে পড়ে। এতে করে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাবার আশঙ্কা থেকে যায়। তাছাড়া সাহরির জন্য জেগে উঠা রোজার জন্য আগ্রহই প্রমাণ করে। এছাড়া এ সময়টি একটি মোবারকময় সময়। কাজেই চাইলে এ সময় যে কেউ তাহাজ্জুদসহ নানান নফল ইবাদাত বন্দেগী করে আল্লাহর নৈকট্য লাভে নিজেদের এগিয়ে নিতে পারেন। কাজেই সাহরিকে কোনোভাবেই অবহেলা করা ঠিক নয়। নবী করীম সা. হাদিসে বলেছেন, ‘তোমরা সাহরি খাও যদি তা এক ঢোঁক পানিও হয়।’ রমজানের রোজা যেহেতু ফরয রোজা তাই কোনো কারণে সাহরি খেতে না পারলেও রোজা রাখতে হবে।
রোজা পালনে আমাদের মনে রাখতে হবে কেবল খাবার, পানীয় গ্রহণ ও বৈধ যৌনবৃত্তি থেকে বিরত থাকলেই রোজার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। আল্লাহর ইচ্ছার সামনে নিজের বৈধ ইচ্ছা-চাহিদাগুলো জলাঞ্জলি দিয়ে পরকালমুখী নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের দীক্ষা নিয়ে একজন ব্যক্তি যাতে তাকওয়া অর্জনে সক্ষম হতে পারে সে উদ্দেশেই রমজানে রোজা ফরজ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন: ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর; সম্ভবত তোমরা মুত্তাকী হতে পার’। (সূরা আল-বাক্বারা : ১৮৩)। আয়াতে আল্লাহ বলেছেন: ‘সম্ভবত তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে’। এখানে সম্ভবতঃ শব্দটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। রোজার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া। কিন্তু রোজা রাখলেই সবাই তাকওয়া অর্জন করতে পারে না। রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ ছাড়লো না, তার খাবার ও পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (সুনানে ইবনে মাজাহ)। রাসূল (সা.) আরো বলেন, অনেক রোজাদার এমন রয়েছে যাদের রোজায় ক্ষুধার্ত থাকা ছাড়া অন্যকিছু অর্জিত হয় না এবং অনেক রাত্রি জাগরণকারী এমন রয়েছে যাদের রাত্রী জাগরণের কষ্ট ব্যতীত আর কিছুই অর্জিত হয় না। [মুসনাদে আহমাদ]।
এর কারণ হচ্ছে, তারা না তাকওয়ার অর্থ বুঝেন, আর না বুঝেন রমজানের উদ্দেশ্য। বুঝেন না বলেই রোজা শেষ হওয়ার পর কিংবা রমজানের মধ্যেই তারা আল্লাহর আদেশ অমান্য করেন এবং নিষিদ্ধ কাজ করে থাকেন। রোজা তাদের জীবনকে বিশুদ্ধ বা সংশোধিত করতে পারেনি। রোজার মাধ্যমে তাদের জীবন এবং আমলের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাই তারা রোজার কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ করতে সক্ষম হননি। তাই রমজানের রোজা এবং তাকওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে রোজা পালন করতে হয়।