আহলান সাহলান মাহে রমজান
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ৪:৩০:২৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: রোজা আত্মা পরিশুদ্ধ করে আর যাকাত বিত্তশালীদের সম্পদ পরিশুদ্ধ করে। যাকাত দেওয়ার ফলে যাকাত দাতার সম্পদের পরিমাণ বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যাকাত আদায় করতে হয়। রমজান মাস আল্লাহর মাস। রমজান মাসে যেকোনো ফরজ, ওয়াজিব সুন্নত ও নফল কাজ আদায় করলে আল্লাহ এর সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করে বান্দাকে নিজ হাতে প্রতিদান প্রদান করবেন। যাকাত বছরের যেকোনো সময় দেওয়া যায়। তবে রমজান মাসে যাকাত আদায় করতে পারলে বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে।
এরশাদ হয়েছে- ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তোমরা যে যাকাত দাও, প্রকৃতপক্ষে সেই যাকাত তোমাদের সম্পদ বৃদ্ধি করে’। (সূরা রোম :৩৯)। রমজান যেমন জাহান্নামের ঢালস্বরূপ তেমনি যাকাত সম্পদের বালা মুসিবতের ঢালস্বরূপ। যাকাত প্রদানের মধ্যে দিয়ে এক মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের হক আদায় হয়। যাকাত ধনী-গরিবের মধ্যে সম্পদের বৈষম্য দূর করে। যাকাত সমাজের অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে শক্তিশালী করে।
এরশাদ হয়েছে- ‘আল্লাহপাক জনপদের মানুষদের কাছ থেকে নিয়ে তাঁর রাসূলকে দিয়েছেন, তা হচ্ছে আল্লাহর জন্যে, রাসূলের জন্যে, আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিন ও পথচারীদের জন্যে, সম্পদ যেন বিত্তশালী লোকদের মধ্যে আবর্তিত না হয়।’ (সূরা হাশর: ৯)।
দান করা বাধ্যতামূলক নয় কিন্তু যাকাত আদায় করা বাধ্যতামূলক। এরশাদ হয়েছে- ‘আর তোমরা নামাজ কায়েম কর এবং যাকাত প্রদান কর’। (সূরা বাকারা: ১১০)। সম্পদ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নেয়ামতস্বরূপ। আল্লাহ যাদের সম্পদ দান করেছেন তাদের সম্পদের মধ্যে গরিব-দুখী মানুষের হক রয়েছে। যাকাত কোনো করুণার বিষয় নয়, এটি দুখি-দুস্থ মানুষের অধিকার। এরশাদ হয়েছে- ‘তাদের ধন-মালে ভিক্ষুক ও বঞ্চিতদের সুস্পষ্ট ও সুপরিজ্ঞাত অধিকার রয়েছে’। (সূরা যারিয়াত: ১৯)।
যাকাত কোনো করুণার বিষয়বস্তু নয়। যাকাত আদায় না করলে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হয় এবং সম্পদের পরিমাণ কমে যায়। এরশাদ হয়েছে- ‘সেসব মুশরিকদের জন্য ধ্বংস অনিবার্য, যারা যাকাত দেয় না’। (সূরা হামিম আস সাজাদা:৭-৮)। বুখারি শরিফে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সা. বলেছেন, ‘যারা আল্লাহর দেওয়া ধন-মালে কার্পণ্য করে, তারা যেন মনে না করে যে, তাদের জন্য তা মঙ্গলময় বরং তা তাদের জন্য খুবই খারাপ। তারা যে মাল নিয়ে কার্পণ্য করেছে, তাই কিয়ামতের দিন তাদের গলার বেড়ি হবে’। নামাজ ও যাকাত একটি অপরটির পরিপূরক। হজরত আবু বকর রা. তার খেলাফতের সময়কালে ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমি অবশ্যই সেসব লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব, যারা নামাজ ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে। আল্লাহর কসম, তারা যদি একট উটের রশিও দিতে অস্বীকার করে, যা রাসূল সা. এর জমানায় তারা দিত।
যাকাত আদায়ের পদ্ধতি নিয়ে সমাজে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। অভাবগ্রস্ত কিংবা দরিদ্র লোকের মধ্যে এক ’দুটি লুঙ্গি শাড়ি অথবা দু’তিন কেজি চাল গম দিলে যাকাত আদায় হয় না। যাকাত আদায়ের সুনির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি রয়েছে। যে সব লোকের নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে, কেবল তাদের যাকাত আদায় করতে হবে। নিসাব হলো- শরিয়তের নির্ধারিত সম্পদের নিম্নতম সীমা বা পরিমাণ। সাধারণত, ৫২.৫ তোলা রূপা বা ৭.৫ তোলা সোনার সমমূল্যের সম্পদকে নিসাব বলে। ওই পরিমাণ সম্পদ থাকলে যাকাত আদায় করতে হবে। যে ব্যক্তির ঋণ বা দেনার পরিমাণ নিসাব পরিমাণ সম্পদের চাইতে বেশি, তার ওপর যাকাত ফরজ নয়।