নগরীতে অবৈধ পশুর হাটের পায়তারা!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জুন ২০২৪, ৬:০৬:৪০ অপরাহ্ন
এমজেএইচ জামিল : প্রতিবারের ন্যায় এবারও আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে সিলেট নগরী ও শহরতলীজুড়ে অবৈধ পশুর হাট বসানোর তোড়জোড় চলছে। ইতোমধ্যেই শহরতলী ও নগরীর কয়েকটি স্থানে খুঁটি গেড়ে জায়গা দখল প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
নগরীতে কাজিরবাজার হচ্ছে একমাত্র ও সবচেয়ে বৃহৎ স্থায়ী পশুর হাট, যা ব্যক্তি মালিকানাধীন। ঈদের ১০দিন বাকী থাকলেও কাজিরবাজার এখন জমে ওঠেনি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু, ছাগল ও ভেড়া নিয়ে আসা ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা দু’এক দিনের মধ্যে বাজার জমে ওঠবে।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও জেলা প্রশাসন, সিলেটে সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশের পক্ষ হতে আগে থেকে বলা হচ্ছে- কেউ অবৈধ হাট বসালে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতি বছরই সিলেটে অবৈধ হাট না বসাতে নির্দেশনা দেয় প্রশাসন। কিন্তু বাস্তবে তাদের এই নির্দেশনা তোয়াক্কা না করে অবৈধ পশুর হাট বসায় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা। সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসনের নির্লিপ্ততার সুযোগে যত্রতত্র বসে অবৈধ হাট। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের একই কাতারে দেখা যায়। এবারও ব্যতিক্রম নয়। এসব প্রভাবশালীরা অবৈধ হাট বসানোর তোড়জোড় শুরু করেছেন।
নগরীর আখালিয়া, টিলাগড় পয়েন্ট, সুবিদবাজার, রিকাবিবাজার, বাইপাস রোড়, হুমায়ুন রশীদ চত্বর, কাজির বাজার সেতুর মুখ ও কাজিটুলাসহ বেশ কিছু জায়গায় অবৈধ পশুর হাট বসানোর তৎপরতা চলছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে ঈদুল আজহা এলে প্রতিবছরই নগরীতে যত্রতত্র কোরবানির পশুর অবৈধ হাট নিয়ে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু রাজনৈতিক নেতাসহ প্রভাবশালীরা এর নেপথ্যে থাকায় প্রশাসন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে না। তাই শেষ মুহূর্তে নগরীর প্রতিটি পাড়া-মহল্লার রাস্তা যেন পশুর হাটে পরিণত হয়। এবারও এর আলামত দেখা যাওয়ায় জনমনে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। আতঙ্কে রয়েছেন পশু ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ১১টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাটের প্রস্তুতি নিলেও শেষ পর্যন্ত ৯টি স্থানে হাট বসানোর জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে অনুমতি চেয়েছে। শনিবার পর্যন্ত হাটের লিখিত অনুমতি পাওয়া না গেলেও মৌখিকভাবে হাট বসানোর প্রস্ততি নিতে বলা হয়েছে। সিসিক কর্তৃপক্ষ আশা করছে, আজকালের মধ্যে অনুমতি পাওয়া যাবে এবং দ্রুত টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। ঈদের আগে এক সপ্তাহ সময় হাতে রেখে হাট বসাতে চান তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর ঈদুল আজহা উপলক্ষে সিলেট জেলায় স্থায়ী হাটের পাশাপাশি অস্থায়ী ৩৮টি পশুর হাট বসেছিল। পাশাপাশি নগর এলাকায় ৭টি অস্থায়ী অনুমোদিত হাট বসে। কিন্তু জেলায় অনুমোদিত হাটের বাইরে অবৈধ হাট খুব একটা না বসলেও সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩০ থেকে ৪০ স্থানে হাট বসে। ঈদের তিন দিন আগে মহানগর পুলিশের আওতাধীন এলাকায় ২২টি হাটের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। প্রতিবছর নির্ধারিত পশুর হাটের বাইরে কোনো হাট বসতে দেওয়া হবে না- এমন ঘোষণা দিলেও মূলত কার্যকর হয় না। যত্রতত্র হাটের কারণে মূল হাটগুলোতে ট্রাকভতি পশু নিয়ে পাইকার কিংবা ব্যবসায়ীরা প্রবেশ করতে পারেন না। এ নিয়ে মারামারিও হয়। এবারও এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সিসিক সূত্র জানায়, সিলেট নগরীর কাজিরবাজার একমাত্র স্থায়ী পশুর হাট। সেটি ব্যক্তি মালিকানাধীন। কাজিরবাজার হাটের বাইরে প্রতিবছর ৬ থেকে ৮টি স্থানে অস্থায়ী হাট বসায় সিসিক। এবার দক্ষিণ সুরমায় কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন খালি জায়গা, ভার্থখলা ঝালোপাড়া মসজিদ সংলগ্ন খালি জায়গা, মিরাপাড়ার আব্দুল লতিফ প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন জায়গা, নতুন টুকের বাজার, মাছিমপুর কয়েদির মাঠ, মেজরটিলা বাজার, শাহি ঈদগাহ মাঠের পেছন ও শাহপরান বাজারসংলগ্ন খালি জায়গায় হাটের অনুমতি চেয়েছে সিসিক।
অতীতে হাট বসানোয় যুক্ত একাধিক রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এবারও তারা হাট বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে তা পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে বলে জানান এক নেতা। ওই সব এলাকার মধ্যে আছে টিলাগড় পয়েন্ট, সুবিদবাজার, রিকাবিবাজার, বাইপাস রোড়, হুমায়ুন রশীদ চত্বর, কাজির বাজার সেতুর মুখ, কাজিটুলা। এসব হাটের নেপথ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ছাড়াও রয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মী। এর বাইরে রয়েছেন কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিও। অবৈধভাবে হাট বসানো লোকজন রাস্তা থেকে পশু জোর করে তাদের হাটে নিয়ে যান। এ নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে।
কাজিরবাজার পশুর হাটের ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন লোলন দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, কাজিরবাজারে ইতোধ্যে পশু আসা শুরু হয়েছে। শীঘ্রই বাজার জমে উঠবে। অবৈধ পশুর হাট নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি। প্রতিবছর অবৈধ হাট বসবেনা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত পুরো নগরী পশুর হাটে পরিণত হয়। এতে ব্যবসায়ী ও কুরবানীদাতা সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এখন ইন্টারনেটের যুগ। রাস্তায় কোন পশুর গাড়ী আটক কিংবা চাঁদা দাবী করা হলে সেই খবর দ্রুত পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়বে। ফলে অনেক ব্যবসায়ী সিলেটে আসতে চাইবেনা। এতে চাহিদা মতো গরু না থাকায় বাড়বে দাম। এ বিষয়ে আগে থেকেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া উচিত।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম দৈনিক জালালাবাদকে জানান, অনুমতি ছাড়া নগরীতে কোন পশুর হাট বসতে দেয়া হবেনা। শেষ সময়ে অনেকেই বিশেষ অনুমতি নিয়ে আসে ফলে চাইলেও পুলিশ কিছু করতে পারেনা। অবৈধ হাটের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়সহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। কোনভাবেই নগরীতে অবৈধ হাট বসতে দেয়া হবেনা।
এ ব্যাপারে সিলেটে জেলার স্থানীয় সরকার উপপরিচালক সুবর্ণা সরকার দৈনিক জালালাবাদকে জানান, অস্থায়ী পশুর হাটের জন্য সিটি কর্পোরেশন থেকে ৮টি এবং বিভিন্ন উপজেলা থেকে আরো বেশ কয়েকটি হাটের অনুমোদন চেয়ে আবেদন আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। এখনো কাউকে অনুমতি দেয়া হয়নি। আবেদনগুলো যাছাই বাচাই করা হচ্ছে। অনুমতি দেয়া হলে অস্থায়ী হটাসমূহের তালিকা মিডিয়াকে জানানো হবে।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইখতেখার আহমেদ চৌধুরী দৈনিক জালালাবাদকে জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে নগর এলাকায় ৮টি অস্থায়ী পশুর হাটের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। আজকালের মধ্যে জেলা প্রশাসক থেকে অনুমতি পাওয়ার আশা রয়েছে। ইতোমধ্যে পত্রিকায় টেন্ডার শিডিউল আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। আজ রোববার ও কাল সোমবার (৯ ও ১০ জুন) টেন্ডার নেয়া হবে। মঙ্গলবার ১০ জুন টেন্ডার খোলা হবে। এরপর কম সময়ের মধ্যে ইজারাদারদের হাট এলাকা বুঝিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এর বাইরে যাতে কোনো হাট কেউ বসাতে না পারে, সেদিকে সিসিকের বিশেষ দৃষ্টি থাকবে।