লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনগণ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ জুন ২০২৪, ১২:৩৫:৩৯ অপরাহ্ন
সিলেটসহ সারা দেশে তীব্র লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ ও অস্থির দেশের মানুষ। বার বার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। আর একবার গেলে ঘণ্টা-দুই ঘণ্টা থাকছে বিদ্যুৎহীন। ফলে এই তীব্র গরমের সময় লোকজন অসহায় হয়ে পড়েছেন। ভ্যাপসা গরমে অস্থির অবস্থায় সময় কাটাচ্ছেন।
গত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ সিলেটে দৈনিক ৫/৬ বার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। অর্থাৎ লোডশেডিং করা হচ্ছে। এর আগে শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ গেলে কিছুক্ষণের মধ্যে আবার চলে আসতো। কিন্তু এখন একবার বিদ্যুৎ গেলে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় বিদ্যুতের জন্য। বার বার বিদ্যুৎ যাওয়া এবং দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকার ফলে নগরীসহ সিলেটের প্রায় সকলস্থানে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ব্যবসা বাণিজ্যে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে পারছে না। এর সাথে যুক্ত হয়েছে মশার জ্বালাতন। ভারী বর্ষণ হলে মশার উৎপাত কিছু কমে। কিন্তু বৃষ্টি থেমে গেলে মশার উৎপাত আবার বেড়ে যায়।
ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের ফলে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিশেষভাবে বয়োবৃদ্ধ ও শিশুরা বেশী দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। রাতে ঘুমাতে না পারায় অনেক লোকজন ব্যবসায় ও চাকুরীস্থলে যথাসময়ে উপস্থিত হতে পারছেন না। বাচ্চারা সকালে স্কুলে যেতে পারছে না। অনেকে বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে তারা মানসিক রোগী হয়ে যাবেন।
লোডশেডিং নিয়ে গত মাসে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, রেকর্ড উৎপাদনের মাঝেও সম্প্রতি ঘন ঘন লোডশেডিং দেখা গেছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বিশেষ করে লোডশেডিংয়ে বেশী সমস্যা ভোগ করছেন গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দারা। তবে শিগগিরই এ সমস্যা সমাধান হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। তিনি বলেন, বিদ্যুতের জন্য অর্থ ও তেলের সংস্থান দু’টোই আমাদের করতে হচ্ছে। এটা করতে গিয়ে কিছু বিদ্যুৎ প্লান্ট বন্ধ ছিল। তাছাড়া প্রাইভেট কোম্পানীগুলোও ঠিকভাবে তেল আনতে পারছিল না।
তিনি আরো বলেন, ৫০ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হবে এটা জানা ছিল না। কেউ সেভাবে প্রস্তুতও ছিল না। এ কারণে সারাদেশে কিছু কিছু জায়গায় লোডশেডিং হয়েছে। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।
প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য অনুসারে শিগগিরই লোডশেডিং দূর হওয়ার কথা ছিল। এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে তিনি দাবি করেছিলেন। কিন্তু এক/দুই মাস পর পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আসা দুরে থাক, অনেকটা নিয়ন্ত্রণহীন বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। আগে বিদ্যুৎ গেলে কিছুক্ষণের মধ্যে আবার চলে আসতো। কিন্তু এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।
অনেকের অভিযোগ, দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত জ্বালানী বিভাগ অবহেলার শিকার। টানা দুই অর্থবছর জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগের বরাদ্দ কমছে। চলতি অর্থ বছরের তুলনায় আগামী অর্থ বছরে এ খাতে বরাদ্দ কমেছে ৫৬ কোটি টাকা। তবে জ্বালানী বিভাগের বরাদ্দ কমলেও বিদ্যুৎ বিভাগের বরাদ্দ বেড়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিদ্যুৎ বিভাগের বরাদ্দ বাড়লেও এই খাতের সমস্যা কমছে না কেন? বরাদ্দকৃত অর্থ কি যথাযথভাবে ব্যয় করা হচ্ছে না? না-কি সিস্টেম লস, ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদান, ও এলএনজি ও কয়লা ক্রয়ে দুর্নীতির কারণে এর সিংহভাগই দুর্নীতিবাজদের পেটে যাচ্ছে।
অনেকে বিদ্যুৎ সমস্যার জন্য একটি স্থায়ী বিদ্যুৎ ব্যবস্থা গড়ে না তোলা এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে পিছিয়ে থাকাকে দায়ী করছেন। ঘন ঘন লোডশেডিং এবং এর ফলে দেশের শিল্প, ব্যবসা বাণিজ্য, গণস্বাস্থ্য, বিশেষভাবে অর্থনীতির ওপর এর যে মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার শংকা দেখা দিয়েছে, এর প্রেক্ষাপটে এ বিষয়ে অবহেলা বা উদাসীনতার কোন সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের দরুন। তারা অবিলম্বে এই অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে মুক্তি বা উত্তরণ চাইছেন।