আওয়ামীলীগ ফ্যাসিস্ট, এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য : লন্ডনে ডাঃ শফিক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৯:২৮:৫৯ অপরাহ্ন
এনাম চৌধুরী লন্ডন থেকে: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সত্য একবার বললেই প্রতিষ্ঠিত হয় কারণ সেটা সত্য। আর মিথ্যা প্রতিষ্ঠিত করতে বারবার বলতে হয়। আওয়ামীলীগ ফ্যাসিস্ট, এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য। তিনি ১৭ নভেম্বর রোববার লন্ডনে এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ১৬ বছর দেশের মানুষের সাথে আওয়ামীলীগ যে আচরণ করেছে তার জন্য তাদের বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে। আমরা চাই ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের বিচার হোক। ডাঃ শফিক বলেন, অন্যায় বিচার কি সেটার আমি নিজেও একজন ভিকটিম। আমাকে গ্রেফতার করে বলা হয়েছে, আমি নাকি বিছানার নিচে ককটেল নিয়ে ঘুমিয়েছি ! তিনি বলেন ২০০৬ সালে লগিবৈঠার তান্ডব করে নিরস্ত্র ছাত্র জনতাকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করে। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর সেনাবাহিনীর ৫৭জন কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে। ২০১৩ সালে হেফাজতের নিরিহ কর্মীদের রাতের আঁধারে খুন করা হয়। এই খুন মিশনের পর তারা প্রচ- আঘাত করে জামায়াতে ইসলামীর উপর। আমাদের উপর যখন আঘাত আসে, তখন জাতির বিবেকবান নেতৃবৃন্দ উপলব্ধি করতে পারেননি যে এই আঘাত শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে। ডাঃ শফিক ভারাক্রান্ত কন্ঠে সে পরিস্থিতির বর্ণনা করে বলেন, আমরা যখন কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছি তখন আমাদের অনেক বন্ধুকে বলেছিলাম, আসুন একসাথে লড়াই করি। তা না হলে ফ্যাসিবাদের কবলে সবাইকে পড়তে হবে। কিন্তু অনেকেই ভেবেছিলেন, এ রকম পরিস্থিতি যদি জামায়াতের উপর দিয়ে যায় তবে দেশ বুঝি শান্ত হয়ে যাবে। কিন্তু না, সেটার পরিণতি আজ দেশবাসীর কাছে একটি জ্বলন্ত ইতিহাস। আমরা হয়ত সেদিন বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলাম।
পূর্ব লন্ডনের দ্যা রয়েল রিজেন্সি হলে ‘কোয়ালিশন ফর পিস এন্ড জাস্টিস ইন বাংলাদেশ’-এর আয়োজনে কয়েক সহস্রাধিক জনতার উপস্থিতিতে সংবর্ধনায় ডাঃ শফিক যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমরা যখন আওয়ামীলীগের অনেক অপরাধ-অপকর্মের প্রতিবাদ করতে পারিনি, তখন আপনারা তাদের প্রত্যেকটি অপকর্মের সর্বোচ্চ প্রতিবাদ করেছেন। আমি ও আমার দল আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আপনারা দেশ ও জাতির পক্ষে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আপনাদের দেশপ্রেম ও দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসার সর্বোচ্চটুকু ঢেলে দিয়েছেন। আপনার রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছেন, এখন মেধার রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশ পুনর্গঠনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
জামায়াতের আমীর ডাক্তার শফিকুর রহমান বলেন, আমরা একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে দেশের প্রত্যেক নাগরিক স্বীয় মর্যাদার সাথে বসবাস করবে। আমরা এমন সমাজ চাই যেখানে মসজিদ পাহারার প্রয়োজন না হলে মন্দির পাহারারও প্রয়োজন হবে না। যেখানে আমাদের নারীরা মর্যাদা ও নিরাপত্তার সাথে বসবাস করবে। রাসূল (স.) এর সময় নারীরা যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছিল। তিনি আরও বলেন, আমাদের বিশাল ম্যানপাওয়ারকে আমাদের জন্য আশির্বাদ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। যারা প্রবাসে নাগরিকত্ব পান না এবং ইন্তেকালের পর যাদের আত্মীয়রা তাদের লাশ দেশে নিতে চান, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে তারা যেন তা করতে পারেন তার জন্য আমরা তাদের সহযোগিতা করব।
জামায়াতের নেতৃবৃন্দকে জুডিশিয়াল কিলিং এর মাধ্যমে শহীদ করা হয়েছে উল্লেখ করে ডা. শফিক বলেন, বেগম খালেদা জিয়া, সাবেক আমীরে জামায়াত প্রফেসর গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামীসহ জামায়াতের সকল নেতাদের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ ছিল মিথ্যা ও বানোয়াট। এটা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি ২০২৪ এর জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের ভয়াবহ স্মৃতি উল্লেখ করে বলেন, ছাত্ররা তাদের অধিকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিল, পরে জনতা তাদের সাথে রাস্তায় নেমে আসে। ডাঃ শফিক বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, অনেক জীবন দিতে হয়েছে, অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে, দফায় দফায় জেলে গিয়েছেন, চাকুরীহারা হয়েছেন এমনকি কারো কারো বুলডোজার দিয়ে ঘরবাড়ি ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়া হয়েছে। এই সবগুলোই ছিল বাস্তবতা। কিন্তু আমরা সে আন্দোলনের সরাসরি ফসল ঘরে তুলতে পারিনি। আমাদের ছেলে-মেয়েরা এই বছরের পহেলা জুলাই থেকে যে আন্দোলনের সূচনা করেছিল এবং তাদের ডাকে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসে দুঃশাসনকে চূড়ান্ত বিদায় জানিয়েছে।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার মুফতি শাহ সদরুদ্দিন, উলামা মাশায়েখ ইউকে’র সভাপতি শায়খ মওদুদ হাসান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইউরোপের মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা, শিক্ষাবিদ ডক্টর হাসনাত হোসাইন এমবিই, গ্রেটার সিলেট ডেভলাপমেন্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও চ্যানেল এস এর ফাউন্ডার মাহি ফেরদৌস জলিল, চ্যানেল আই ইউরোপের সাবেক এমডি রেজা আহমেদ ফয়সল চৌধুরী শুয়েব, ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ, মানবাধিকার সংগঠন মুসলিম ভয়েস এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মাহফুজ নাহিদ, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব মির্জা আসহাব বেগ, টাওয়ার হেমলেটস কাউন্সিলের স্পিকার ব্যারিস্টার সাইফুদ্দিন খালেদ, দৈনিক আমার দেশের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট অলিউল্লাহ নোমান, ইসলামিক স্কলার মাওলানা সাদেকুর রহমান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী পুত্র ব্যারিস্টার নাজিব মোমিন, কাউন্সিলর গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী ও দা সানরাইজ টুডে’র সম্পাদক সাংবাদিক এনাম চৌধুরী প্রমুখ।
সাবেক ছাত্রনেতা আবু সালেহ ইয়াহইয়া ও শামসুল আলম গোলাপ এর পরিচালনায় পূর্বলন্ডনের দ্যা রয়েল রিজেন্সি হলে অনুষ্ঠিত নাগরিক সংবর্ধনায় উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন সিলেট মহানগর জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারী সিরাজুল ইসলাম শাহীন। উপস্থিত ছিলেন টাওয়ার হেমলেটস কাউন্সিলের সাবেক স্পিকার কাউন্সিলর জাহেদ চৌধুরী, কাউন্সিলর কবির হোসাইন, কাউন্সিলর ফারুক খান এবং কাউন্সিলর আহমদ আল কবির প্রমুখ।
মাওলানা হাফিজ কাজি হামিদুল হক এর তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে শিল্পী নওশাদ মাহফুজ ও কামাল হোসাইনের নেতৃত্বে শিল্পীদের দুটি পৃথক দল ইসলামিক নাশিদ পরিবেশন করেন।