ক্ষমতা বাড়ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৯:২৮:১৮ অপরাহ্ন
দিতে পারবে রাজনৈতিক দলকে শাস্তির সুপারিশ
জালালাবাদ ডেস্ক: ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধনের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এতে আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারের জন্য ঢাকায় গঠিত ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা বাড়ছে। এ সংশোধনী কার্যকর হলে কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে গণহত্যা, গুম, অপহরণসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হলে যে কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ দিতে পারবে।
বুধবার (২০ নভেম্বর) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদন হয়। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে এ বৈঠক হয়। আইন মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাবটি উত্থাপন করে।আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও আন্তর্জাতিক আইনের আওতাধীন অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে এ প্রণয়ন করা হয়। রোম সংবিধির আলোকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা আনয়ন, আন্তর্জাতিক আইনের প্রচলিত বিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং এই আইনের বিচারকাজ নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন কর্তৃক উত্থাপিত বিভিন্ন সুপারিশের আলোকে ১৯৭৩ সালের এ আইনের অধিক সংশোধন সমীচীন ও আবশ্যক।
প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে, আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক আন্তর্জাতিক অপরাধসমূহের সংজ্ঞা যুগোপযোগীকরণ, অপরাধের দায় নির্ধারণ, অডিও ও ভিডিওর মাধ্যমে বিচারকাজ ধারণ ও সম্প্রচার, বিদেশি কাউন্সেলের বিধান, বিচারকালে অভিযুক্তের অধিকার, অন্তর্বর্তী আপিল, সাক্ষ্যের গ্রহণযোগ্যতা ও প্রাসঙ্গিকতা সংক্রান্ত বিধান, তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক তল্লাশি ও জব্দ করার বিধান, পর্যবেক্ষক, সাক্ষীর সুরক্ষা, ভিকটিমের অংশগ্রহণ ও সুরক্ষার বিধান সংযোজন করে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশ, ২০২৪ এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়। এ খসড়া নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ, দপ্তর, বিশ্ববিদ্যালয়, মানবাধিকারকর্মী, মানবাধিকার সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, আন্তর্জাতিক আইনে বিশেষজ্ঞ এবং অংশীজনের সঙ্গে বিভিন্ন সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং তাদের মতামত ও পরামর্শ পর্যালোচনাপূর্বক আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক প্রণীত খসড়ায় সংযোজন ও পরিমার্জন করা হয়েছে।
অধ্যাদেশ জারির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে সংসদ ভেঙে যাওয়া অবস্থায় রয়েছে এবং গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও আন্তর্জাতিক আইনের আওতাধীন অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের লক্ষ্যে বিদ্যমান আইন যুগোপযোগীকরণের বিষয়ে আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে। সেহেতু আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ শীর্ষক অধ্যাদেশের খসড়া উপদেষ্টা পরিষদের নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়।
ব্যাপক আলোচনার পর খসড়া লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে। এদিকে, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিধান আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে থাকছে না। তিনি বলেন, ‘খসড়ায় বলা হয়েছে, আদালত যদি মনে করেন তাঁরা রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কনসার্নড অথোরিটির (সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ) কাছে সুপারিশ করতে পারেন।’ উপদেষ্টা বলেন, প্রস্তাবে যেটি আছে, সেখানে আদালতকে সেভাবে সরাসরি ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে, আদালত যদি মনে করেন, তাহলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তাঁরা সুপারিশ করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করবেন।
এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আরও বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট যেসব কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক দলের বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমোদন রয়েছে—স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আছে, নির্বাচন কমিশন আছে…এগুলোর কথা খসড়ায় উল্লেখ করা নেই। কিন্তু যদি মনে করে, তাহলে করতে পারে। এটা এমন না যে আদালত শাস্তি দেবেই। আদালত যদি মনে করে, শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করবে শুধু। এটা খসড়ায় রাখা হয়েছে।’