ফেরানো হলো কলকাতা ও আগরতলার মিশন প্রধানকে, কূটনৈতিক পাড়ায় কৌতূহল
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯:৪৬:১৪ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের প্রধানরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বৃহস্পতিবার ঢাকায় ফিরেছেন। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষাপটে তাদেরকে ঢাকায় আনার উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা ও কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
ঢাকায় আসা এ দুজন কর্মকর্তা হচ্ছেন কলকাতায় বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত উপহাইকমিশনার শিকদার মো. আশরাফুর রহমান এবং ত্রিপুরার আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্বরত আরিফ মোহাম্মদ। গত দশ দিনের মধ্যে এই দুটি কূটনৈতিক মিশন বিক্ষোভ ও হামলার শিকার হয়।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে এবং সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিতে ২৮শে নভেম্বর কলকাতার উপ-হাইকমিশনের সামনে ‘বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ’ নামে একটি সংগঠন বিক্ষোভ পালন করে। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা ‘সহিংস’ হয়ে পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে উপ-হাইকমিশনের সীমানায় পৌঁছে যায়। এর পাঁচ দিন পর ২ ডিসেম্বর আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, ভাঙচুর ও পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ঘটে। ভিডিও ফুটেজে একটি পতাকা পোড়াতেও দেখা যায়। এসব ঘটনায় বক্তব্য-বিবৃতি দিতে দেখা যায় দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। কয়েকদিনের মাথায় ডেকে আনা হলো সংশ্লিষ্ট মিশনগুলোর প্রধানদের।
স্থানীয় কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, কলকাতায় নিযুক্ত ডেপুটি হাই কমিশনার বৃহস্পতিবার বিকেলেই পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে দেখা করেন। তবে তাদের ‘প্রত্যাহার করা’ বা ‘ফিরিয়ে আনা হয়েছে’ কি না তা স্পষ্ট এখনো স্পষ্ট নয়।
কোন প্রেক্ষাপট থাকলে ফিরিয়ে আনা হয়?
দু’টি দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে কূটনীতিকদের পদায়ন ও প্রত্যাহারের বিষয়টি নির্ধারিত হয়ে থাকে।বিভিন্ন কারণে কোনো কূটনীতিককে ‘ফিরিয়ে আনার’ প্রয়োজন পড়তে পারে বলে জানান বাংলাদেশের একজন সাবেক কূটনীতিক মুন্সী ফয়েজ আহমদ। প্রথমত, কূটনৈতিক মিশনটি যেখানে অবস্থিত সেখানকার পরিস্থিতি যদি বিপজ্জনক হয়ে যায় তাহলে কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে আনা জরুরি হয়ে পড়ে। তখন পুরো মিশনকেই সাধারণত সরিয়ে আনা হয়।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট দেশের কোনো কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ স্বরূপ প্রতিনিধি প্রত্যাহার করার কূটনৈতিক রেয়াজ আছে।কূটনীতিক ফয়েজ আহমদ বলেন, প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে লেভেল অফ দ্য মিশন ডাউনগ্রেড (অবনমন) করাও একটি চর্চা।যেমন – কোন হাইকমিশনার বা রাষ্ট্রদূত পদমর্যাদার কর্মকর্তার বদলে ‘চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স’ দিয়ে কূটনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করা।তৃতীয়ত, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের যদি কোনো ব্যর্থতা থাকে তাহলেও ফিরিয়ে আনা বা প্রত্যাহার করা হয়ে থাকে। করণীয় ছিল এমন কিছু করতে পারেন নি বা এমন কিছু করেছেন যেটাতে সরকার খুশি নয় সেক্ষেত্রে তাদের ফেরানো হয়।
‘টেম্পোরারি মুভ’ :
কলকাতার উপ-হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভের ঘটনা এবং আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনা সম্পর্কে ‘বিস্তারিত আলোচনার’ জন্যই ওই দুই মিশন প্রধানকে ডাকা হয়েছে।এটি ‘টেম্পোরারি মুভ’ (সাময়িক স্থানান্তর) বলে বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছে ভারতে বাংলাদেশের একটি কূটনৈতিক সূত্র। এ ধরনের তলব করে কথা বলাকে ‘কনসালটেশন’ (পরামর্শ) হিসেবে অভিহিত করে থাকেন কূটনীতিকরা।
কূটনীতিক মুন্সী ফয়েজ আহমদ বলেন, কোনো বিষয় বা ঘটনা সামনাসামনি ভালো করে জেনে নেয়ার জন্য ‘কনসালটেশন’ একটি ‘রুটিন ওয়ার্ক’। বাংলাদেশের আরেকজন সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বিবিসিকে বলেন, মিশনগুলোতে দুটি বড় ধরনের ঘটনা ঘটেছে, বিষয়টি কী অবস্থায় ঘটেছে বা সেখানকার অবস্থাটা এখন কী সেটা লিখে সবসময় প্রকাশ করা যায় না। কাজেই আমার ধারণা মন্ত্রণালয় মিশন প্রধানদের কাছ থেকে শুনতে চায় আসল সমস্যাটা কীরকম ছিল, এখন কোথায় আছে, ভবিষ্যতের জন্য তাদের প্রেডিকশন কী, তারা কী ভাবছে। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সরকারের কী করা উচিত তাও আলোচনা হয়ে থাকে কনসালটেশনে। ওদেরকে ডেকে আনার মধ্যে বাড়তি কিছু চিন্তার অবকাশ আছে বলে মনে হয় না।