ইনাম আহমেদ চৌধুরী আর নেই
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৮:৩০:২৮ অপরাহ্ন
জালালাবাদ সম্পাদকে শোক
স্টাফ রিপোর্টার: সিলেটে কৃতীসন্তান অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে সাবেক সচিব এবং প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ভাষাসৈনিক ইনাম আহমেদ চৌধুরী আর নেই। ৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিকাল ৫টার দিকে ঢাকার বাসভবনে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়াবদ্ধ হয়ে তিনি ইন্তেকাল করেন ( ইন্নালিল্লাহি….রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। মরহুমের ছোটোভাই জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও সাবেক পররাষ্ট্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী মৃত্যুর বিষয়টি দৈনিক জালালাবাদকে নিশ্চিত করেছেন।
অবসরপ্রাপ্ত এই সরকারি আমলা পবর্তীতে রাজনীতিবিদ ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবেও সমাদৃত ছিলেন। তিনি বিশ্বব্যাংক ও এডিবির বিকল্প গভর্নর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
সংক্ষিপ্ত জীবনী: ইনাম আহমদ চৌধুরী ২৯ জুন ১৯৩৭ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের আসামের সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জের বারোকোট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকার কমিশনার গিয়াসুদ্দিন আহমদ চৌধুরী ছিলেন তার পিতা এবং রফিকুন্নেছা খাতুন চৌধুরী তার মাতা ছিলেন।
ইনাম তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের আসামের শিলংয়ে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। তিনি ১৯৫২-৫৩ সালে ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের জেনারেল সেক্রেটারি থাকাকালে শহীদ মিনার নির্মাণ ও রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন সম্পর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্যে কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আইন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও স্নাতকোত্তর অধ্যায়ন করেন।
কর্মজীবনে ইনাম আহমদ চৌধুরী ১৯৬০ সালে সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তানে যোগদান করেন। ব্যাংককে জাতিসংঘের ‘এস্কাপ’ কমিশনের সেক্রেটারি, আই.ডি.বি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট, লন্ডনস্থ ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আই.এম.ও) সভাপতি, লন্ডনে ইকোনমিক মিনিস্টার পদে থাকাকালে লন্ডনস্থ অর্থনৈতিক প্রতিনিধিবর্গের এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে সচিব এবং বিশ্বব্যাংক ও এ.ডি.বি’র বিকল্প গভর্নরের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। এছাড়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবদানের জন্যে রাশিয়া থেকে ‘লিজিয়ন অব অনার’ লাভ করেন। তিনি কমনওয়েল্থ সোসাইটি অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও ঢাকাবাসী সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা, বাংলাদেশ-চীন গণমৈত্রী সমিতির উপদেষ্টা, এনাম বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন ক্যাপিটালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন।
ইনাম আহমদ চৌধুরী ১৯৯৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেন। তিনি জেনারেল জিয়াউর রহমানের বিএনপি প্রতিষ্ঠার পিছনে থাকা কয়েকজন আমলাদের একজন ছিলেন। তিনি ২০০১ সালে লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত নির্বাচন কর্মসূচির পিছনেও নায়ক। তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন। ২০১৩ সালে বিএনপির আন্দোলনের সময় একবার গ্রেফতারও হন। তিনি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় চারদলীয় জোট সরকারের প্রাইভেটাইজেশন কমিশনারের চেয়ারম্যান ছিলেন।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একাদশ সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে তিনি বিএনপি মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে একই বছর ১৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগে যোগ দেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন।
ইনাম আহমেদ চৌধুরী একজন সুবক্তা এবং লেখক হিসেবেও মেধার স্বাক্ষর রাখেন। তিনি ছাত্রজীবনে মাসিক প্রভাতী ও ছোটোগল্প সংকলন নতুন ছবি প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে মাসিক যমুনারও সম্পাদক ছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো- চিরঞ্জীব জিয়া, ধায় গাড়ি ধূম ছাড়ি, ভাবনায় বাংলাদেশ, নতুন ছবি, Genocide They Wrote, ছোটদের জিয়াউর রহমান ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা।
জালালাবাদ সম্পাদকের শোক: এদিকে বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ইনাম আহমেদ চৌধুরীর ইন্তেকালে গভীর শোক জানিয়েছেন দৈনিক জালালাবাদ সম্পাদক মুকতাবিস-উন-নূর। এক শোকবার্তায় তিনি মরহুমের নানান কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন ইনাম আহমেদ চৌধুরী একজন মেধাবী, সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন। পারিবারিকভাবেই তারা ছিলেন অমায়িক ও পরোপকারী। তারা প্রতিটি ভাইবোন নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি মরহুমের মাগফেরাত কামনা করেন।