আহলান সাহলান মাহে রমজান
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ মার্চ ২০২৫, ১২:২০:৩২ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: একে একে আমরা রমজানের পাঁচটি রোজা শেষ করলাম। আজ আমরা রমজানের ষষ্ঠদিনে পদার্পণ করলাম। রমজান মাস বেশি করে ইবাদত বন্দেগীর মাস। এ মাসে ইবাদতের সওয়াবও বহুগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তাছাড়া ফরজের পাশাপশি বেশি বেশি নফল ইবাদাত বান্দাকে আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায়। রমজান মাস মুসলমানদের কাছে সে সুযোগকে বাড়িয়ে দেয় অনেক। আল্লাহর বেশি করে ইবাদাত বন্দেগী করার মতো সুযোগ রমজানের মতো অন্য কোনো মাসে পাওয়া যায় না। আর তাই আমাদের উচিৎ এ মাসের সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেদের সামনের দিনগুলো আরো সুন্দর করে নেওয়া। রমজানে নফল ইবাদাতের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো কিয়ামুল লাইল বা রাতের ইবাদাত। আল্লাহর নবী সা. রমজানে কিয়ামুল লাইলকে খুবই গুরুত্ব দিতেন।
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত রমজান মাসের একটি ঘটনা। রাসূল সা. এক রাতে মসজিদে সালাত আদায় করছিলেন, কিছু লোক তাঁর সাথে সালাত আদায় করলেন। পরবর্তী রাতেও তিনি সালাত আদায় করলেন এবং লোক আরো বেড়ে গেল। এরপর তৃতীয় কিংবা চতুর্থ রাতে লোকজন সমবেত হলেন, কিন্তু রাসূল সা. বের হলেন না। সকাল হলে তিনি বললেন, তোমাদের কার্যকলাপ আমি লক্ষ্য করেছি। তোমাদের কাছে বেরিয়ে আসার ব্যাপারে শুধু এ আশঙ্কাই আমাকে বাধা দিয়েছে যে, তোমাদের উপর তা ফরজ হয়ে যাবে।
কাজেই এখান থেকে বুঝা যায় কিয়ামুল লাইল কতোটা গুরুত্বপূর্ণ হলে পরে নবী সা. এটি নিয়মিত করে থাকেন। কিন্তু উম্মতের কষ্টের কথা বিবেচনা করে তিনি এটি সবার সাথে পালন করা এড়িয়ে গেলেন। এমনিতেই বলতে গেলে সারা দুনিয়ায় মুসলিম প্রধান দেশগুলো বিশেষকরে মধ্যপ্রাচ্যে রমজান মাসে কিয়ামুল লাইলকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। তারাবির সালাতের পরই কিছুটা সময় বিরতি দিয়ে যে যার মতো করে তারা তাহাজ্জুদে দাঁড়িয়ে যান।
তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। এ সালাত মানসিক প্রশান্তি দান করে। সম্মান এবং মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়। সাহাবিগণও রমজান মাসে নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। রমজান মাসে যেহেতু শেষ রাতে সাহরি খাওয়ার জন্য জাগতেই হয়, আর সাহরি খাওয়ার আগ পর্যন্ত শেষ রাত একান্ত দোয়া কবুলের সময়, তাই একটু আগেভাগে উঠে সাহরির আগে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে অশেষ সওয়াব অর্জনের সুযোগ কাজে লাগানো যায়। আরবি ‘তাহাজ্জুদ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ রাত জাগরণ বা ঘুম ত্যাগ করে রাতে নামাজ পড়া। বছরের অন্যান্য সময়ের মতো রমজান মাসে তাহাজ্জুদ নামাজের ব্যাপারে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। রমজান মাসে এর সুফল বহুগুণ বেড়ে যায়।
উম্মতে মুহাম্মদির জন্য এটা সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা অর্থাৎ এ নামাজ আদায় করলে অশেষ সওয়াব পাওয়া যায়, কিন্তু আদায় করতে না পারলে কোনো গুনাহ হবে না। নবী করীম সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়তের সঙ্গে সওয়াবের আশায় মাহে রমজানের রোজা পালন করে, তার বিগত জীবনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি ইমান ও সওয়াবের আশায় মাহে রমজানের রাতে কিয়াম করে, তার বিগত দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি ইমান ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে কিয়াম বা রাত জেগে ইবাদত করে, তার বিগত জীবনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ তাহাজ্জুদ নামাজ সাধারণত শেষ রাতের দিকে পড়তে হয়। এসময় পড়লে সওয়াব বেশি পাওয়া যায়।
রাসুল সা. তাহাজ্জুদ নামাজ কখনও ৪ রাকাত, কখনও ৮ রাকাত এবং কখনও ১২ রাকাত পড়েছিলেন। তাই রোজাদার ব্যক্তির তাহাজ্জুদ নামাজ কমপক্ষে ৪ রাকাত আদায় করা উচিত। কিন্তু যদি কেউ এ নামাজ ২ রাকাত আদায় করেন, তাহলেও তাঁর তাহাজ্জুদ আদায় হবে। ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এশার পর দুই বা ততোধিক রাকাত নামাজ পড়ে নেয়, সে হবে তাহাজ্জুদের ফজিলতের অধিকারী।’ তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সব নফল ইবাদত অপেক্ষা অধিক এবং এটি আল্লাহর কাছে খুব প্রিয়। রমজান মাসে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে নিজের গুনাহ মাফ করিয়ে নেওয়ার একটা সুন্দর সুযোগ মিলে।
রমজানের রাত জাগরণ করে যাঁরা তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন এবং অপরকে এ ব্যাপারে উৎসাহিত করেন, তাঁরা আল্লাহর অপার রহমতের মধ্যে বিচরণ করেন। রাসূল সা. বলেছেন, ‘আল্লাহ ওই ব্যক্তির ওপর রহমত নাজিল করেন, যিনি রাতে ঘুম থেকে জেগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন এবং তাঁর স্ত্রীকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেন। অতঃপর তিনি অর্থাৎ তাঁর স্ত্রী তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন।