মোবারক হো মাহে রমজান
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ মার্চ ২০২৫, ১২:৫১:২৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: রমজানের সাথে কুরআনের রয়েছে গভীর এক সম্পর্ক। এ মাসেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন গোটা মানবজাতির হেদায়েতের জন্য মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাজিল করেন। সূরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, রমজান হলো এমন এক মাস যে মাসে কুরআন নাজিল করা হয়েছে। আর কুরআন হলো মানবজাতির জন্য হেদায়াত এবং হক ও বাতিলের মাঝে অর্থাৎ ভালো এবং খারাপের মাঝে পার্থক্যকারী। এই কুরআনের কারণেই রমজানের এত মর্যাদা। আর তাই রমজান হলো কুরআন চার্চার মাস। এ মাসে মুসলমানদের বেশি করে কুরআনের চর্চা করা উচিত। আল্লাহর নবী সা. এবং সাহাবারা এ মাসে কুরআনের চর্চা বাড়িয়ে দিতেন।
রাসূল সা. রমজানে জিবরাঈল আ. কে পুরো কুরআন একবার শোনাতেন এবং জিবরাঈল আ. ও নবী করিম সা. কে অবতীর্ণ পুরো কুরআন একবার শোনাতেন। জীবনের শেষ রমজানে অর্থাৎ দশম হিজরির রমজানে রাসূল সা. জিবরাঈল আ. কে পুরো কুরআন দু’বার শোনান এবং জিবরাঈল আ. ও রাসূল সা. কে পুরো কুরআন দু’বার শোনান। এতে বোঝা গেল রমজান শুধু কুরআন নাজিলের মাস নয় বরং রমজান মাস হলো কুরআন চর্চার মাস এবং সর্বোপরি রমজান মাস হলো জীবনের সর্বক্ষেত্রে কুরআনের অনুশীলন ও বাস্তবায়নের মাস।
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে যত নেয়ামত দান করেছেন তার মধ্যে সবচেয়ে বড়ো একটি নেয়ামত হলো আল কুরআন। কুরআনের কল্যাণ সাধারণভাবে সবার জন্য উন্মুক্ত। তবে কল্যাণ অর্জন করতে হলে নূন্যতম কিছু অধিকার রয়েছে যা আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে।
আল কুরআনের সেই অধিকার গুলো হলো-
এক. আল কুরআনের প্রতি ঈমান আনা। ঈমান আনার ক্ষেত্রে কিছু অংশে ঈমান আর কিছু অংশ অস্বীকার করা যাবেনা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা কী কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর, সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে! আর কিয়ামাতের দিন তাদের কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন’-(সূরা আল-বাকারাহ : ৮৫)।
দুই. শুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করা। কুরআন তিলাওয়াত করা কুরআনের একটি হক। কুরআন মাজীদে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এভাবে, ‘তোমার প্রতি যে কিতাব ওহী করা হয়েছে, তা থেকে তিলাওয়াত কর’ (সূরাহ আনকাবুত : ৪৫)।
তিন. মুখস্ত করা। কুরআন হিফজ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা আল্লাহ তাআলা নিজেই কুরআন হিফজের দায়িত্ব নিয়েছেন। এ হিফজেরই এক প্রকার হচ্ছে, বান্দাদের কুরআন হিফজ করানো। যার মাধ্যমে আল্লাহ্ তা’আলা কুরআনকে সংরক্ষণ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আমি কুরআন নাজিল করেছি, আর আমিই তার হিফাজতকারী’ (সূরা আল-হিজর : ০৯)।
চার. কুরআন নিয়ে তাদাব্বুর (চিন্তা, গবেষণা) বুঝে বুঝে পড়ার চেষ্টা করা। তিলাওয়াত ও শ্রবণ উভয় ক্ষেত্রেই কুরআনের অর্থ বুঝলেই শুধু পরিপূর্ণ সাওয়াবের আশা করা যায়। আল্লাহ তায়ালা বারবার বলেছেন যে, কুরআন নাজিলের উদ্দেশ্য হলো যেন মানুষেরা তা বুঝে, চিন্তা করে এবং উপদেশ গ্রহণ করে। এক আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘এক বরকতময় কল্যাণময়গ্রন্থ আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যেন তারা এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিগণ উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সূরা সাদ- ২৯ আয়াত)।
পাঁচ. কুরআন অনুযায়ী আমল করা। কুরআন অনুযায়ী নিজের জীবনকে গড়ে তোলা। এ বিষয়ে কুরআনে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ‘তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাজিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকদের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর’ (সূরা আল-আরাফ : ৩)।
ছয়. কুরআন প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করা। কুরআনের প্রচার, প্রসার ও তা প্রতিষ্ঠার কাজ করা কুরআনের একটি হক। কুরআনে বলা হয়েছে, ‘হে রাসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাজিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও’। (সূরা আল-মায়িদাহ: ৬৭)। অতএব, নিজ ব্যবস্থাপনায় কুরআন শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন, কুরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতা, হিফজ প্রতিযোগিতা, কুরআন বুঝার আসর, তাফসীর প্রতিযোগিতা, মক্তব চালু করা, কুরআনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত সংস্থাকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা এ কাজের অন্তর্ভুক্ত। সর্বোপরি কুরআনের বিধান সমাজে প্রতিষ্ঠার কাজ করতে হবে।
তাই আমাদের উচিত রমজানে বেশি বেশি করে কুরআনের চর্চা বাড়িয়ে দেওয়া। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের বেশি করে কুরআনের চর্চা করার তাওফিক দিন এবং কুরআনের মর্ম বুঝে সেই পথ ধরে নিজেদের জীবনকে সুন্দর করার নসিব তদান করুন। আমীন!