মোবারক হো মাহে রমজান
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ মার্চ ২০২৫, ১২:৫৭:৫৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: আগের পর্বে আমরা তাওবার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছি। আজ আমরা তাওবা কীভাবে করতে হয় সে সম্পর্কে আলোচনা করবো। ইমাম নববী র. তার বিখ্যাত হাদিস সংকলন রিয়াদুস সালেহীন এর বাবুত তাওবা অধ্যায়ে কীভাবে তাওবা করতে হয় তা নিয়ে সুন্দর একটি আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, গুনাহ যদি আল্লাহ এবং বান্দার মধ্যে হয় তবে তাওবা করার শর্ত তিনটি।
এক গুনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে, দুই গুনাহ এর জন্য অনুতপ্ত হতে হবে এবং তিন পুনরায় গুনাহ না করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে। এর বাইরে আরেকটি শর্ত হলো তাওবাকারীকে হকদার ব্যক্তির হক আদায় করতে হবে। অর্থাৎ প্রথম তিন শর্ত হলো কেবল আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত গুনাহের বেলায়। কেউ যদি আল্লাহর সাথে নাফরমানি করে, যেমন সালাত আদায় করলো না, সাওম পালন করলো না, ইসলামের কোনো আকিদাগত বিষয়ে সন্দেহ সংশয় বা বিরূপ কিছু করলো ইত্যদি ধরনের গুনাহের মাধ্যমে আল্লাহর হুকুম অমান্য করলো যা শুধু আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত। এধরনের গুনাহ হলে আল্লাহর কাছে তাওবা করলে আল্লাহ মাফ করে দেবেন। এটা আল্লাহর বিষয়। তবে তাকে এই তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে।
আর চার নম্বর যে শর্তটি তা হলো বান্দার সম্পর্ক। বান্দার হক মেরে থাকলে যতক্ষণ এই তিনটি শর্তের সাথে সাথে বান্দার সেই হক আদায় না করা হবে না ততোক্ষণ তাওবা কবুল হবেনা। তাই কেউ যদি কারো হক মেরে থাকে তবে তার সেই হক আগে পূরণ করতে হবে। কেউ যদি কাউকে ঠকিয়ে থাকে, কারো সাথে প্রতারণা করে তবে যার সাথে প্রতারণা করেছে তার হক আদায় করতে হবে অথবা সেই ব্যক্তির কাছ থেকে মাফ করিয়ে নিতে হবে। এছাড়া কেউ যদি কারো গীবত করে কারো কাছে কারো বিরুদ্ধে কিছু লাগিয়ে থাকে তাহলে যার বিরুদ্ধে এসব করেছে তার কাছ থেকে মাফ চেয়ে নিতে হবে।
মনে রাখতে হবে যদি কেউ গুনাহ করে তাওবা না করে মারা যায় তবে তাকে আখিরাতে জাহান্নামে যেতে হবে। আর যদি তাওবা করে নেয় তবে গুনাহ মাফের সাথে সাথে তার সব গুনাহ মুছে ফেলা হবে, তার মর্যাদা বাড়িয়ে তাকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হবে। এটা আল্লাহর ওয়াদা। সূরা তাহরীমের ৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলছেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর বিশুদ্ধ তাওবা। তাহলে তোমাদের রব তোমাদের মন্দ কর্মগুলো মুছে দেবেন এবং তোমাদের প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যারা পাদদেশে নদী প্রবাহিত।”
কাজেই কোনো ধরনের সংশয় বা সংকোচের বশবর্তী হয়ে আমাদের তাওবা থেকে দূরে না থেকে উচিত আল্লাহর তাওবাকারী বান্দায় নিজেদের পরিণত করা। কারো হক মেরে থাকলে, কারো বিরুদ্ধে বদনাম রটালে তার কাছে মাফ চেয়ে নিজেকে মুক্ত করা জাহান্নামের আগুনে জ্বলে পুড়ার চেয়ে অনেক ভালো। অনেকেই লজ্জায় কারো হক নষ্ট করে তার কাছে মাফ চাইতে সংকোচ বোধ করেন কিন্তু এমন মানুষ খুব কম কম আছে যাদের কাছে ভুল স্বীকার করলে তারা খুশি হন না। বরং আরো বিনয়ী হয়ে বলেন এতে ভুলের কিছু নেই, এটা হতেই পারে। আসলে ভুলকরা ব্যক্তি যে তার ভুল বুঝতে পেরেছে এতেই ঔ ব্যক্তি যার হক নষ্ট করা হয়েছে তিনি খুশি হয়ে যান। আর তার খুশির সাথে সাথে আল্লাহ ও খুশি হয়ে যান। আর আল্লাহর কাছে তো বান্দার লজ্জার কিছু নেই। তিনি সব জানেন সব দেখেন সব শুনেন।
তিনি তো মহান রব। তাঁর রহমত আর মাগফিরাতের হাত বিশাল, বিস্তৃত। ইমাম নববী র. রিয়াদুস সালেহিনের বাবুত তাওবা অধ্যায়ের ১৬ নম্বর হাদিসে মুসলিম শরীফের একটি হাদিস হজরত আবু মূসা আবদুল্লাহ ইবনে কায়েস আশআরী রা. থেকে বর্ণনা করেছেন। তিন রাসূল সা. থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় না হওয়া পর্যান্ত অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত প্রতিরাতে তাঁর ক্ষমার হাত প্রসারিত করতে থাকেন। যাতে দিনের গুনাহগার তাওবা করে। আর তিনি দিনে তাঁর ক্ষমার হাত প্রসারিত করেন যাতে রাতের গুনাহগার তাওবা করতে পারে। আল্লাহ সম্পর্কে ধারণার জন্য বান্দার উদাহরণ এর চেয়ে বেশি দরকার হয় না। বান্দার জন্য আল্লাহর টান কিংবা মায়া কতোটা তা এরচেয়ে সহজ করে বলার আর দরকার হয়না। যে বুঝতে চায় তার জন্য এটাই যতেষ্ট। মহান আল্লাহ আমাদের সবার হৃদয়ের বদ্ধ দ্বার উন্মুক্ত করে দিন, প্রসারিত করে দিন জান্নাতি আবহে। মাগফিরাতের দশকে এই হোক আমাদের চাওয়া। আমীন!