মোবারক হো মাহে রমজান
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ মার্চ ২০২৫, ১২:৫০:৩৬ অপরাহ্ন
রমজান মাস প্রশিক্ষণের মাস। এ মাস আত্মনিয়ন্ত্রণের এক মহা সুযোগ আমাদের সামনে নিয়ে আসে। এই মাসে আমরা নিজেদের শুধরে নেওয়ার সুযোগ পাই। রমজান আমাদের ধৈর্য্য এবং সংযম শিক্ষা দেয়। সবচেয়ে বড়ো যে শিক্ষা দেয় তা হলো তাকওয়া। এ মাসে আমরা আল্লাহর হুকুমে অনেক বৈধ কাজ থেকেও বিরত থাকি যে কাজ অন্য মাসে করা যায়। মূল কথা হলো এ মাসে আল্লাহর হুকুম মানার একটা পরিবেশ তৈরি হয়। আর এ পরিবেশের মূল কারণ আল্লাহর হুকুমের পাশাপশি আমাদের ইচ্ছাশক্তি।
মুসলমানরা সিদ্ধান্ত নিয়ে এ মাসে আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী নিজেদের পরিচালিত করতে দৃঢ় প্রত্যয়ী হোন। কাজেই দেখা গেলো আমরা যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো খারাপ কাজ থেকে নিজেদের বাঁচাবার জন্য প্রত্যয়ী হই, মনের ভেতর থেকে আল্লাহর হুকুমে নিজেদের চালাবার জন্য ইচ্ছা অনুভব করি তো আল্লাহর হুকুমে নিজেদের পরিচালিত করা অসম্ভব নয়। আর এজন্য আমাদের সাহায্য করবার বেলায় তো আল্লাহ সবসময় সাথে আছেনই। আসল কথা হলো আমাদের ইচ্ছা।
এজন্য হাদিসে বলা হয়েছে মানুষের প্রত্যেক কাজ তার নিয়ত বা ইচ্ছাশক্তির উপর নির্ভর করে। মানুষ চাইলে নিজেকে ভালো পথে চালাতে পারে, চাইলে নিজেকে খারাপ পথে চালাতে পারে। রমজানে আল্লাহর হুকুমের মধ্যে একটি হলো দিনের বেলা খাওয়া দাওয়া থেকে বিরত থাকা। এখন কেউ যদি লুকিয়ে লুকিয়ে কিছু খেয়ে নেয় তাহলে কেউ তো দেখবে না বা বাধা দিতে পারবে না। কিন্তু তারপরও তো কেউ লুকিয়ে কিছু খায় না। এটা কেবল আল্লাহর হুকুম পালনই নয় এর পাশাপাশি নিজের মধ্যে একটা দ্বিধা বা অপরাধ বোধ কাজ করে যে কি করে আমি রমজানে দিনের বেলা খাই, এটা তো আমার সাথে মানায় না।
এখান থেকে একটা সহজ কথা আমরা বুঝতে পারি আল্লাহর হুকুমে যদি আমরা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় খাওয়া দাওয়া থেকে কিছু সময়ের জন্য বা সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সময় বিরত থাকতে পারি তো অন্য সব খারাপ কাজ থেকে চাইলে কেনো বিরত থাকতে পারবো না?
সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সময় এজন্য বলা হলো যে মানুষের খাবার দরকার তো সবচেয়ে বেশি দিনের বেলাই হয়। রাতের বেশিরভাগ সময় তো বিশ্রাম বা ঘুমিয়ে চলে যায়। তাছাড়া খাবার সাথে তো মানুষের বেঁচে থাকার একটা সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু অন্য অনেক খারাপ কাজ যেমন ঘুষ খাওয়া, মানুষকে ঠকানো, কারো হক মেরে দেওয়া এগুলো তো এমন নয় যে এগুলো না করলে আমরা মরে যাবো। মূলত আমাদের লোভ আর খারাপ অভ্যেস শয়তানের প্ররোচনায় আমাদের এগুলো করায়।
রমজান থেকে আমাদের মূলত এই শিক্ষাই দেওয়া হয় যে আল্লাহর হুকুমে অবৈধ কাজ থেকে কেনো বিরত থাকা যাবে না, অবশ্যই যাবে। আসল কথা হলো সিদ্ধান্ত। আল্লাহর হুকুম পালনের বেলায় সিদ্ধান্ত নিয়ে মানুষ রমজানে যেমন তার অভ্যাসে একটা পরিবর্তন নিয়ে আসে, চাইলে সিদ্ধান্ত নিয়ে সেই অভ্যাসে পরের এগারো মাস অর্থাৎ গোটা বছর অটল অবিচল থাকতে পারে।
রমজান তো আমাদের সেই শিক্ষা দিতেই ফিরে আসে বাববার। বছরে একবার রমজানে আল্লাহ আমাদের এক মাসের জন্য সংযমের মহান প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন যেনো বান্দা সংযম ভুলে না যায় আর এ থেকে শিক্ষা নিয়ে তার সারাবছর এভাবেই পরিচালিত করতে পারে। কেননা সকল খারাপ কাজের পথে বড়ো একটা বাধা হলো সংযম বা নিয়ন্ত্রণের অভাব। মানুষ তার সীমাহীন লোভকে নিয়ন্ত্রণ করতে বেগ পায় বলেই নানান ধরনের অনৈতিক কাজ করে থাকে।
রমজানের মতো সারাবছর বেশি বেশি করে আল্লাহর স্মরণ আমাদের সংযমের দেওয়ালকে আরো শক্তিশালী করে। আর তাই আমাদের উচিত রমজানের সুন্দর সুন্দর আমলগুলো রমজানে সীমাবদ্ধ না রেখে সারাবছর অব্যহত রাখা। আর এতেই আমরা আমাদের জীবনকে সুন্দর এক মাত্রায় নিয়ে যেতে পারবো। আল্লাহও আমাদের সাহায্য করবেন। আমাদের ভুল মাফ করে দেবেন। আমাদের আগের ভুল যেনো আমাদের সামনের দিনগুলোতে ভালো কাজ থেকে ফিরিয়ে না রাখতে পারে।
হজরত আবু যার ও মুয়ায বিন জাবাল রা. বর্ণিত রিয়াদুস সালেহীন এর ৬১ নম্বর হাদিস। নবী সা. বলেছেন, ‘তুমি যেখানেই থাকো আল্লাহকে ভয় করো এবং অসৎ কাজ করলে তারপর সৎকাজ করো। তাহলে ভালো কাজ মন্দ কাজকে শেষ করে দেবে’। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন। আমীন!