সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করলে আইনানুগ ব্যবস্থা : মতবিনিময় সভায় বক্তারা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ২:১০:১০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় ফ্যাসিবাদের দোসররা কোনো বিশৃংখলা সৃষ্টি করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সিলেটের বিশিষ্টজনেরা।
গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সম্মেলন কক্ষে ‘সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রেক্ষাপেট ও ভবিষ্যত করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব পরামর্শ দেয়া হয়। সমাজের বিশিষ্টজনেরা বলছেন, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সিলেটবাসীর স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের অগ্রযাত্রায় কেউ বিশৃংখলা সৃষ্টি করলে রুখে দেয়া হবে। যেসব দুর্বৃত্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌহাট্টাস্থ অস্থায়ী কার্যালয়ে ভাংচুর করেছে, ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বক্তারা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিভিন্ন আইন শৃংখলা বাহিনীর প্রতি আহবান জানান।
মতবিনিময় সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল পাটওয়ারী বলেন, প্রতিষ্ঠার ৮ বছর হতে চললেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অগ্রগতি নেই। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়। সাবেক ভিসি মোর্শেদ আহমদ চৌধুরীর সময়ে গণহারে নিয়োগ বাণিজ্যের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি হয়নি। তিনি বলেন, সাবেক উপাচার্য মোর্শেদ চৌধুরীর সময় অনিয়ম ও অনৈতিক উপায়ে গণহারে অবৈধ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যেখানে নিয়োগে সিন্ডিকেটের পূর্বানুমোদন ছিলো না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সংবিধিও ছিলো না। ফলে পরবর্তীতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা দেয়।
মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির নির্দেশে পূর্ববর্তী উপাচার্যের সময় থেকেই বেতন ভাতা বন্ধ রয়েছে। এখানে বিধির বাইরে গিয়ে কোনোভাবেই আমি বেতনভাতা চালু করতে পারবো না। উপাচার্য বলেন, আমি যোগদানের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। সংবিধি চ্যান্সেলরের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে, সেটা পাশ হলে সিন্ডিকেটে অনুরোধ করবো, পূর্বে যারা অস্থায়ীভাবে কর্মরত ছিলেন, তাদের বয়সের বিষয়টি শিথিল করার, সিন্ডিকেট অনুমতি দিলে সকলে আবেদন করতে পারবে। তখন যারা যোগ্য, চাকরির ধারাবাহিকতা আছে, তাদের বিষয়টি বোর্ড বিবেচনা করবে। তিনি বলেন, আমি যোগদান করে ইনভেনটরি করেছি। অনেক নথিপত্র গায়েব করে দেয়া হয়েছে, আপনারা জানেন, কারা এই লুটপাট, হামলা ও ভাংচুর করেছে, ইতোমধ্যে পত্রপত্রিকায় তাদের নাম এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় কেউ বাধাঁ সৃষ্টি করলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য সিলেটবাসীর সহযোগিতা প্রয়োজন। আপনারা জানেন, কারা এসব করছে, এরা ৫ আগস্টের পূর্বে ফ্যাসিবাদের সমর্থক ছিল, অনৈতিক উপায়ে চাকরি নিয়েছে, এখন আবার বৈষম্যবিরোধী সেজে আন্দোলন করছে। এরাই বিশৃংখলা সৃষ্টি করছে, অত্রএব বিশৃংখলা সৃষ্টি করলে এখন আর কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল পাটওয়ারী আরও বলেন, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুধু আন্ডার গ্র্যাজুয়েটের পরীক্ষা নেয়া নয়, এটি একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিধি বিশাল। বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ফ্যাকালটি ডেভেলাপ করার বিকল্প নেই। আপনারা সহযোগিতা করলে আমি রিসার্চ বেইজড একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলবো। ফ্যাকাল্টি ডেভেলাপ করবো। সেই সাথে ১২শ বেডের একটি আধুনিক হাসপাতালও থাকবে। স্বপ্নের এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সিলেটবাসীর সহযোগিতা প্রয়োজন।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. জিয়াউর রহমান চৌধুরীর উপস্থাপনায় স্বাগত বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন কোষাধ্যক্ষ মো. শাহ আলম। তিনি বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলো খুব জটিল। জনবল সমস্যা সমাধানে আইনি অনেক বাধা আছে। সংবিধির বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিধির মধ্য দিয়েই সমস্যা সমাধান করার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে দৈনিক জালালাবাদ সম্পাদক মুকতাবিস উন নূর বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম নিয়ে প্রথম বড় আকারে সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক জালালাবাদ। যেকোনা অনিয়ম অন্যায়ে জালালাবাদ আপোস করে না।
সিলেট জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে সিন্ডিকেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাই নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় জটিলতা সিন্ডিকেটে আলোচনা করে দ্রুত নিরসন করা হোক। যারা ক্যাম্পাসে ভাংচুরের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি সবধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, ১১তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত বহাল আছে কী না, আমি জানতে চাই। যদি সেটা বহাল থাকে, তাহলে যে ৫০জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে, তাদের নিয়োগ দেবেন কী না। আর নিয়োগ বাতিল হলে কোনো সমস্যা তৈরি হবে কী না। এগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় বাঁচাতে যেকোনো অপচেষ্টা রুখে দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, জনবলই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় সংকট। এখানে নিয়োগে অনেক অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছে, নতুন করে যাতে আর কোনো অনিয়ম দূর্নীতি না হয়। তিনি বলেন, ২০২২ সালে পূর্বে নিয়োগকৃতদের অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। পূর্বের উপাচার্যের সময় থেকে তাদের বেতনভাতা বন্ধ করা হয়েছে। তাই তাদেরকে নিয়োগ দিলে আইনের ব্যত্যয় ঘটবে। তবে যাদের চাকরির ধারাবাহিকতা আছে, তাদের বিষয়টি মানবিক। তিনি বলেন, আগে যারা জয়বাংলা স্লোগান দিত, এখন তারাই আবার বৈষম্যবিরোধী। এদের বিরুদ্ধে মামলা করা হোক। ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া না হলে বিশ্ববিদ্যালয় মুখ থুবড়ে পড়বে।
সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে, এটা সবাই অবগত। অনেক নিরীহ মানুষ ঘরবাড়ি বিক্রি করে এখানে চাকরি নিয়েছে, আপনারা জানেন, আমাদের দেশে কর্মসংস্থান কম, তাই অনেকে টাকা পয়সা দিয়ে চাকরি নেয়। যারা নিয়োগ পায় তারা নিরীহ, তাই যাতে কোনো নিরীহ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, আমরা ভিসি মহোদয়কে অনুরোধ করবো, সেটা বিচেনায় রাখতে। তবে যারা ভাংচুরসহ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ডা. ওয়েছ আহমদ চৌধুরী, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল উমর রাশেদ মুনির, সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. শাহানা ফেরদৌস চৌধুরী, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির, দৈনিক নয়াদিগন্তের ব্যুরো প্রধান আবদুল কাদের তাপাদার, দৈনিক সংগ্রামের ব্যুরো প্রধান কবীর আহমদ, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, জাতীয় নাগিরক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার জুনেদ, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলজার আহমদ হেলাল প্রমুখ।
এছাড়া মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রতিনিধি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বক্তব্য রাখেন।