দেশে বাড়ছে থ্যালাসেমিয়া রোগী
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ মে ২০২৫, ১১:০৯:২৪ অপরাহ্ন
বছরে থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্ম ৬ থেকে ৮ হাজার শিশুর
জালালাবাদ রিপোর্ট : দেশে উদ্বেগজনক হারে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিবছর থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্ম নেয় ৬ থেকে ৮ হাজার শিশু। দেশে ১ কোটি ৮২ লাখের বেশি মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক, যা মোট জনসংখ্যার ১১ দশমিক ৪ শতাংশ (বিবিএস)। বাহকের এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে রোগীর সংখ্যাও।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন এ তথ্য জানায়। আগামীকাল ৮ মে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। এ উপলক্ষে দেশের থ্যালাসেমিয়ার চিত্র প্রকাশ করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘থ্যালাসেমিয়ার জন্য সামাজিক ঐক্য গড়ি, রোগীর অগ্রাধিকার নিশ্চিত করি’।
থ্যালাসেমিয়া রোগটি নিয়ে রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ও মুগদা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রোগ। এ রোগে হিমোগ্লোবিনের গঠন নির্ধারণকারী জিন ত্রুটিযুক্ত হয়। এই জিনের একটি অংশ যদি ত্রুটিযুক্ত হয়, তখন সেই ব্যক্তি হবেন বাহক। তাই বাবা ও মা দুজনই যদি থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, শুধু তখনই তাঁদের সন্তান থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মানোর ঝুঁকি থাকে। একজন বাহক কিন্তু অন্যজন বাহক না হলে সন্তানের থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জরিপের বরাত দিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, বাংলাদেশের ১ কোটি ৮২ লাখের বেশি মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক, যা মোট জনসংখ্যার ১১ দশমিক ৪ শতাংশ (বিবিএস)। বাহকের এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে রোগীর সংখ্যাও।
এই রোগের লক্ষণ নিয়ে অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস তাঁর উপস্থাপনায় বলেন, শিশুর জন্মের এক থেকে দুই বছরের মধ্যেই এই রোগের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। যেমন শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি না হওয়া, শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, দুর্বলতা, ঘন ঘন রোগসংক্রমণ, খেতে না চাওয়া, ওজন না বাড়া, জন্ডিস, খিটখিটে মেজাজ ইত্যাদি। এ রোগে অনেক সময় শিশুর পেট অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যেতে পারে।
এই চিকিৎসক বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগীকে সারা জীবন ভুগতে হয়। মাসে মাসে রক্ত নেওয়া ছাড়াও নিতে হয় অন্যান্য অনেক চিকিৎসা। থ্যালাসেমিয়ার রোগীরা হৃদ্রোগ, যকৃতের রোগ, ডায়াবেটিস-এমনকি বন্ধ্যাত্বেও ভোগেন। তাই শিশুর জন্মের এক থেকে দুই বছরের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া শনাক্ত করে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট (অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন) করে শিশুকে সম্পূর্ণ সুস্থ করা সম্ভব বলে জানান এই চিকিৎসক।
থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে দুজন বাহককে বিয়ে করতে নিরুৎসাহিত করেন চিকিৎসক জান্নাতুল। তবে দুজন বাহকের বিয়ে হয়ে গেলে এবং তাঁরা সন্তান নিতে চাইলে তাঁদের অবশ্যই প্রি–ন্যাটাল বা প্রসবপূর্ব পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসাধীন থাকার পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, গর্ভাবস্থার ১২ থেকে ১৮ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভের শিশুর থ্যালাসেমিয়া আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
থ্যালাসেমিয়া রোগীদের সারা জীবন রক্ত নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। চিকিৎসায় ন্যূনতম মাসিক খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। সম্পূর্ণ সুস্থ হতে যে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করতে হয়, তাতে খরচ ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দা মাসুমা রহমান বলেন, যিনি থ্যালাসেমিয়ার বাহক, তিনি কিন্তু রোগী নন। এটি অবশ্যই ভালো যে রোগটির কোনো লক্ষণই বাহকের শরীরে প্রকাশ পায় না। কিন্তু বাহক যদি না জেনে আরেকজন বাহককে বিয়ে করেন, তাহলে তাঁদের সন্তান গুরুতর থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মাতে পারে। এটি প্রতিরোধে তাই ব্যক্তিপর্যায়ের জনসচেতনতা প্রয়োজন।