নামেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, নেই বহুজাতিক এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ মে ২০২৫, ৭:৪০:১৫ অপরাহ্ন
তামিম মজিদ:
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেট। দেশের তৃতীয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এটি। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত হবার ২৩ বছরেও সত্যিকারের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে উঠতে পারেনি এটি। দেশীয় এয়ারলাইন্সের বাইরে এখানে নেই কোনো বহুজাতিক এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট। নেই সত্যিকারের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো কোনো ব্যস্ততা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের হাব হয়ে ওঠতে পারেনি ওসমানী বিমানবন্দর। ভারত, ভুটান ও চীনসহ দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন গন্তব্যে ফ্লাইট চালু করে আর্ন্তজাতিক বিমান চলাচলের হাব হয়ে ওঠতে পারত সিলেট। এখান থেকে কানেক্টিং ফ্লাইট চালু করে সহজেই সারা বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ হতে পারত সিলেট। এর ফলে কম খরচে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেতে পারতেন সিলেটিরা। এছাড়া বিদেশিরাও কানেক্টিং ফ্লাইটের মাধ্যমে সেই সুবিধা নিতে পারতেন। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ খাতে সঠিক বিনিয়োগ, দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও নীতিগত দিক দিয়ে উন্নতি করতে হবে। না হলে এভিয়েশন খাত যে জায়গায় আছে, সেখান থেকে উন্নতি হবে না।
প্রবাসীরা বলছেন, ওসমানীতে বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন্স ওঠানামা করলে এভিয়েশন চার্জ, ল্যান্ডিং চার্জ, তেল খরচ ও পার্কিং চার্জসহ বিভিন্ন খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ আয় করতে পারত। যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে সুযোগটি হাতছাড়া হচ্ছে। তথ্য মতে, জাপানের আগ্রাসন রুখতে বৃটিশ শাসনামলে সিলেট বিমানবন্দর তৈরি করা হয়। স্বাধীনতার পর সিলেটের কৃতিসন্তান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনী ওসমানীর নামানুসারে এটির নামকরণ করা হয়। সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের একান্ত প্রচেষ্টায় বিমানবন্দর ও রানওয়ে সম্প্রসারণ করে ২০০২ সালে এটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত হয়।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও বেসরকারি মালিকানাধীন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সিলেট থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডন ও ম্যানচেষ্টারে সপ্তাহে চারটি ফ্লাইট পরিচালনা করে। এর বাইরে মদিনা ও জেদ্দায় কয়েকটি ফ্লাইট এবং ঢাকা থেকে সিলেটে কয়েকটি ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। এছাড়া দেশিয় বেসরকারি মালিকানাধীন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে সিলেটে প্রতিদিন ৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। এর বাইরে বিদেশি কোনো এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ওসমানী বিমানবন্দর থেকে পরিচালিত হয় না।
বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাতার এয়ারওয়েজ, টার্কিশ এয়ারলাইন্স, ইত্তেহাদ এয়ারলাইন্স, এমিরেটস এয়ারলাইন্স, জেট এয়ারওয়েজ ও সৌদি এয়ারলাইন্সসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন্স যেখানে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করে, সেটাই সত্যিকারের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। কিন্তু সিলেটে বিদেশে কোনো এয়ারলাইন্সই ফ্লাইট পরিচালনা করে না। অথচ বিমানবন্দরটির রানওয়ের দৈর্ঘ্য ১০ হাজার ২৫০ ফুট। এই দৈর্ঘের রানওয়েতে বড় আকারের প্লেনগুলোও অবতরণ করতে পারে।
তবে সিলেটের প্রবাসীরা মনে করছেন, স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে ওসমানী বিমানবন্দর সত্যিকার অর্থে ও পূর্ণাঙ্গভাবে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে উঠছে না। এর ফলে বহির্বিশ্বে থাকা সিলেটের যাত্রীরা বৈষম্য ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তারা বলছেন, বৃটেন থেকে চড়া দামে প্রবাসীরা শুধুমাত্র বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট কিনে সিলেটে আসতে হয়। কাতার বা টার্কিশ এয়ারলাইন্সে যেখানে ৫০০ বা ৬০০ বৃটিশ পাউন্ডে লন্ডন থেকে ঢাকা যাওয়া যায়, সেখানে বিমানে লন্ডন থেকে সিলেটে সরাসরি ফ্লাইটে যেতে গুণতে হয় ১০০০ পাউন্ড থেকে ১৪০০ বৃটিশ পাউন্ড। অর্থাৎ দ্বিগুণ বা তার চেয়েও বেশি।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী মো. আব্দুল কাদির দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, ‘ইংল্যান্ড থেকে বিমান প্রথমে সিলেটে অবতরণ করে, তারপর ঢাকা যায়। এখানেও ঢাকা থেকে সিলেটের ভাড়া ২০০ থেকে ৩০০ পাউন্ড বেশি। এর কারণ মোটেই বোধগম্য নয়। এটা তো রীতিমত সিলেটের প্রতি বৈষম্য ও বিমাতাসুলভ আচরণ’।
আরেক যুক্তরাজ্য প্রবাসী মো. আব্দুল কালাম বলেন, ‘ওসমানীকে পূর্ণাঙ্গ ও সত্যিকার অর্থে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করতে হলে বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন্সকে অবতরণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। তাহলে সেবার মান ও ভাড়ার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা থাকবে। যার ফলে যাচাই করে যাত্রীরা অপেক্ষাকৃত ভালোটা বেছে নিতে পারবেন’।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মো. শাহপরান বলেন, শুধু নামেই নয় বরং পূর্ণাঙ্গভাবে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক করা হলে বাংলাদেশের জন্য অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতে পারে। এতে দেশ
লাভবান হবে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম জালালাবাদকে বলেন, ‘সিলেটকে বেইজড ধরে আপাতত কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা আমাদের নেই’।
জানতে চাইলে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমেদ দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, ‘আমাদের সক্ষমতা আছে বিদেশি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ওঠানামার। কিন্তু কোনো বিদেশি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করে না কেন, সেটা উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে’।