‘সাংবিধানিক স্বীকৃতির’ অঙ্গীকারে জুলাই ঘোষণাপত্র: গণ-অভ্যুত্থানের শহীদরা ‘জাতীয় বীর’
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ৮:৫৪:৪৭ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ঘোষণা করা হলো ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’। চব্বিশের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতির অঙ্গীকার রেখে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ঘোষণা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একইসাথে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
২৮ দফার এ ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে যে, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত থাকবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এ ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। বৃষ্টিময় পরিবেশের মধ্যেই তিনি নিজ হাতে পাঠ করেন ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান-ভিত্তিক ঐতিহাসিক দলিল ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’। এ সময় তাঁর সঙ্গে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তবে জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে জামায়াতে ইসলামী।
জুলাই ঘোষণাপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সকল শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করে শহীদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে প্রয়োজনীয় সকল আইনি সুরক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।
এছাড়া ঘোষণাপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণ বিগত ১৬ বছরের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামকালে এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংঘটিত গুম-খুন, হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সকল ধরনের নির্যাতন, নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধসমূহের দ্রুত উপযুক্ত বিচারের দৃঢ় অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্খার প্রতিফলন হিসেবে এই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হলো বলেও উল্লেখ করা হয় ঘোষণাপত্রে।
পাশাপাশি জুলাই ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টিও। এতে বলা হয়, ‘অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারের পতন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জনগণ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে, পরবর্তী সময়ে ৫ আগস্ট ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ পরিচালনা করে এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনরত সকল রাজনৈতিক দল, ছাত্র-জনতা তথা সর্বস্তরের সকল শ্রেণি, পেশার আপামর জনসাধারণের তীব্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণভবনমুখী জনতার উত্তাল যাত্রার মুখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
ঘোষণাপত্রে গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে আছে এক-এগারো ও আওয়ামী লীগ আমলের তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গও।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘দেশি-বিদেশি চক্রান্তে সরকার পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় এক-এগারো এর ষড়যন্ত্রমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা, আধিপত্য ও ফ্যাসিবাদের পথ সুগম করা হয়।’
বলা হয়েছে, দীর্ঘ ষোল বছরের ফ্যাসিবাদী, অগণতান্ত্রিক এবং গণবিরোধী শাসনব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে এবং একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অতি উগ্র বাসনা চরিতার্থ করার অভিপ্রায়ে সংবিধানের অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক পরিবর্তন করা হয় এবং যার ফলে একদলীয় একচ্ছত্র ক্ষমতা ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। বিকেল পাঁচটার দিকে তিনি যখন মঞ্চের দিকে যাচ্ছিলেন তখন তার সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের তার সাথে দেখা যায়।
এসব নেতাদের মধ্যে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
তারা মঞ্চে পৌঁছানোর পর জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। পরে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন।
গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে আনে তারা, যেটি প্রকাশের কথা ছিল বছরের শেষ দিন; ৩১ ডিসেম্বর।
শুরুতে সরকার এর সঙ্গে যুক্ত ছিল না। পরে সরকারের তরফে ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগের কথা বলা হয়।
এরপর চলতি মাসের প্রথমার্ধে জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রাথমিক খসড়া তৈরি করে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেয় সরকার।