গাজা নিয়ে কুটিল কূটনীতি!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১০:৪৫ অপরাহ্ন
গাজা উপত্যকায় বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে এর সাথে শুধু দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধকালীন জার্মান কনসেনট্রেশন ক্যাম্প বা ইহুদী বন্দী শিবিরের তুলনা চলে। গাজায় অত্যন্ত পরিকল্পিত ও পদ্ধতিগতভাবে জাতিগত নির্মূল অভিযান ও গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরাইলী কর্তৃপক্ষ। গাজায় যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর দ্বিচারী আচরণও সন্দেহজনক ও বিভ্রান্তিকর। যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই ইসরাইলের পক্ষে রয়েছে এবং গণহত্যায় মদদ দিচ্ছে। ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণ গাজা দখল করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। পশ্চিমা ও অন্যান্য কিছু দেশ এমন জবর দখলের বিরোধিতা করলেও গাজাবাসীদের জানমাল ও ভূখন্ড রক্ষায় তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। আরব ও অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর ভূমিকা উদ্বেগজনক, অনেক ক্ষেত্রে নিন্দনীয়। কারণ এসব দেশ কোন জোরালো ভূমিকা না নিয়ে অনেকটা নির্বিকার ও উদাসীন গাজার ব্যাপারে।
শক্তিশালী মুসলিম দেশ তুরস্কের সদিচ্ছা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর চাপে থাকায় তেমন কিছু করতে পারছে না গাজাবাসীর জন্য। একের পর এক বেশ কিছু দেশ ফিলিস্তিনী রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিলেও গাজায় গণহত্যা বন্ধে তেমন কিছুই করছে না। এ অবস্থায় গাজায় অবর্ণণীয় বর্বরতা চালাচ্ছে ইসরাইল। বোমা গুলির পাশাপাশি ক্ষুধাকে তারা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার রছে গাজার লাখ লাখ নিরীহ বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে।
এদিকে যুদ্ধ বন্ধ নিয়েও কূটনৈতিক খেলা থেমে নেই। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ‘ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে পরিবর্তন, ক্ষুব্ধ সৌদিসহ আরব দেশগুলো’ শীর্ষক একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর সাথে গত সপ্তাহে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে তারা ২১ দফা নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর আরব নেতারা জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে এতে ধারণা করা হচ্ছে, গাজার যুদ্ধ বন্ধ হ বে। তবে আরব ও ইসলামী নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্প যেসব দফা নিয়ে আলোচনা করেন, সেগুলোতে বড়ো পরিবর্তন এনেছেন ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। আর এসব পরিবর্তনে সৌদী আরব, তুরস্ক, জর্ডান ও কাতারসহ অন্যান্য দেশ ক্ষুব্ধ হয়েছে বলে জানা গেছে। আরব আলোচকদের সূত্রগুলো জানিয়েছে, হামাসকে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের যে খসড়া দেয়া হয়েছে, এটি আরব-মুসলিম নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে তৈরী করা ট্রাম্পের খসড়ার চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন। তারা বলেছেন, প্রথমে এটি ছিলো একটি যৌথ প্রচেষ্টা। কিন্তু এখন এই বিষয়টিকে ইসরাইল শান্তির পরিবর্তে শুধুমাত্র নিজেদের নিরাপত্তার টুল বা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। সবচেয়ে বড়ো যে পরিবর্তনটি এনেছেন নেতানিয়াহু তা হচ্ছে, ইসরাইলী সেনাদের গাজা থেকে প্রত্যাহারের বিষয়ে। সেনা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে তিনি কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। এছাড়া প্রত্যাহারের নির্দিষ্ট সময়সীমারও উল্লেখ নেই। সেনা প্রত্যাহারের সাথে হামাসের সম্পূর্ণ নিরস্ত্রিকরণের শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ হামাস নিজেদের নিরস্ত্র না করলে দখলদার ইসরাইল তাদের সেনা গাজা থেকে প্রত্যাহার করবে না। সচেতন মহল ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইসরাইলী কর্তৃপক্ষ প্রকৃতপক্ষে গাজা যুদ্ধ বন্ধ কিংবা ফিলিস্তিনীদের সাথে কোন ধরনের শান্তি বা সমঝোতা চায় না। বরং গায়ের জোরে তাদের আধিপত্য ও রাষ্ট্রের সীমানা বৃদ্ধির পক্ষপাতী। তারা প্রতিবেশী বিভিন্ন আরব দেশের বেশ কিছু ভূখন্ড নিয়ে তাদের ‘গ্রেটার ইসরাইল’ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। তাই ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠা দুরুহ। তাদের মতে, পাগলা কুকুরকে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করা যখন প্রয়োজন, তখন তাকে কমান্ড বা নির্দেশনা দিয়ে নিবৃত্ত করা সম্ভব নয়। ইসরাইল এখন পাগলা কুকুরের ন্যায় আচরণ করছে।
এদিকে গাজাবাসীদের সমর্থনে ও তাদের সাথে সংহতি জানাতে প্রায় অর্ধশত দেশের প্রতিনিধিসহ ‘গাজা ফ্লোটিলা’ অর্থাৎ জাহাজ বহর স্পেন থেকে যাত্রা করে। বহরটি এখন গাজার কাছাকাছি রয়েছে। এটি একটি প্রতীকী প্রতিবাদ ছাড়া আর কিছুই নয়। এতে ইসরাইলের মতো নৃশংস ও বর্বর আগ্রাসী রাষ্ট্রকে তার অপরাধ অপকর্ম থেকে নিবৃত্ত করা সম্ভব নয়। ইসরাইলকে থামাতে হলে পশ্চিমা ও আরব দেশগুলোকে অস্ত্র রফতানী বন্ধ, বাণিজ্য শাটডাউনসহ শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কি আদৌ তা করবে নিজেদের স্বার্থ উপেক্ষা করে?