বাস্তব হচ্ছে বৈদ্যুতিক ট্রেনের স্বপ্ন!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩০:২০ অপরাহ্ন

সম্প্রতি জাতীয় মিডিয়ায় এক অসাধারণ আশাব্যঞ্জক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। ‘সত্যি হচ্ছে বৈদ্যুতিক ট্রেনের স্বপ্ন’ শিরোনামে এই সংবাদে রেলওয়ে উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবির খানের উদ্ধৃতি দিয়ে এই আলোকসঞ্চারী তথ্য প্রদান করা হয়েছে। রেলওয়ে উপদেষ্টা বলেছেন, যুগ এখন বৈদ্যুতিক ট্রেনের, বুলেট ট্রেনের। সাশ্রয়ী ও দ্রæত গতির ট্রেন পরিচালনায় এর বিকল্প নেই। দেশে বৈদ্যুতিক ট্রেনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নকশাও চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে। শুরুতে নারায়নগঞ্জ-ঢাকা-জয়দেবপুর পথে, এরপর ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে, পরে দেশের পুরো রেল লাইনই ইলেক্ট্রিক ট্র্যাকে রূপান্তরিত হবে।
সূত্র জানায়, রূপান্তর হলে চলমান রেলপথে নারায়নগঞ্জ-ঢাকা-জয়দেবপুর রুটে দৈনিক আরো দু’শো ট্রেন চলানো সম্ভব। এজন্য লাগবে ১০ হাজার কোটি টাকা। এতে কমবে পরিচালন ব্যয়, আয় বাড়বে। যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সময় সাশ্রয় হবে। বর্তমানে ট্রেন পরিচালনায় বছরে লোকসান হচ্ছে প্রায় পৌনে ৩ হাজার কোটি টাকা। রেলওয়ে পরিকল্পনা, অপারেশন ও পরিবহন দপ্তর সূত্র জানায়, বৈদ্যুতিক ট্রেন পরিচালনায় জ¦ালানী ব্যয় দেশের প্রচলিত ট্রেনের চেয়ে ৭৫ শতাংশ কম। ঢাকা-জয়দেবপুর রুটে ৫ থেকে ৭ মিনিট পর পর ট্রেন চালানো যাবে। বার বার ইঞ্জিন বদল করতে হবে না। তাছাড়া ডিজেল ইঞ্জিন, চলন্ত অবস্থায় মাঝে মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়, বৈদ্যুতিক ট্রেনে এমনটা হবে না। ট্রেনের শিডিউর রক্ষা সহজ হবে। নির্ধারিত স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি বসানো সহ ইলেক্ট্রিফিকেশনের মাধ্যমে রেলপথে পরিবর্তন আনা হবে। এতে ঘন্টায় ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে ট্রেন চালানো সম্ভব হবে।
লক্ষণীয় যে, দেশের রেলপথে চলবে বৈদ্যুতিক ট্রেন, এ স্বপ্ন বহু বছরের বিগত শেখ হাসিনা সরকার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলো। কিন্তু এটা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেনি। বরং অধিক সুবিধাজনক অন্যান্য লুটপাটের প্রকল্পে মনোযোগী হয় এই লুটেরা সরকার। গত ১৫ বছরে রেলে সোয়া লাখ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও তারা এড়িয়ে যায় বৈদ্যুতিক ট্রেন। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারতে একশ’ বছর আগে বিদ্যুৎ চালিত ট্র্যাকে ট্রেন চালানো শুরু হয়ে আজো চলছে। এছাড়া বিশে^র যে সব দেশে ট্রেন চলছে, সবখানেই এখন পুরোদমে চলছে বৈদ্যুতিক ট্রেন। অনেকে বলতে পারেন মেট্রোরেল তো বৈদ্যুতিক ট্রেনই। কিন্তু এটা বিশেষায়িত ট্রেন। সাধারণ রেলপথ বৈদ্যুতিক ট্র্যাকে রূপান্তরিত না হওয়া পর্যন্ত দেশে বিদ্যুৎ চালিত ট্রেন চালু হয়েছে বলা যাবে না। সূত্রটি আরো জানায়, ইলেক্ট্রিক ট্র্যাকে দুই ধরণের ট্রেন চালানো যাবে। একটি হচ্ছে ইলেক্ট্রিক মাল্টিপল ইউনিট, যা আমরা মেট্রোরেলে দেখছি। তবে এক্ষেত্রে হবে একটু বড়ো পরিসরে। দু’পাশে ইঞ্জিন থাকবে, যাত্রীবাহী কোচ থাকবে ১০টি। একটি সেটে ৩২০০ যাত্রী চলাচল করতে পারবে। দ্বিতীয়ত বর্তমানে চলমান ট্রেনের ইঞ্জিন, পাওয়ার কার ও কোচে কিছু পরিবর্তন অর্থাৎ বৈদ্যুতিক রূপান্তর আনা হবে। ঢাকা-জয়দেবপুর রুটে শুরুতে ইলেক্ট্রিক মাল্টিপল ইউনিট ট্রেন পরিচালনা করা হবে। প্রতিদিন ১০০ ট্রেন পরিচালনা করা হলে ৩ লাখ ২০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা যাবে।
দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা যখন ভঙ্গুর ও ত্রæটিপূর্ণ তখন ইলেক্ট্রিক ট্রেন চালুর এই উদ্যোগটি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমরা করিৎকর্ম ও দক্ষ রেল উপদেষ্টার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। রেলখাত লোকসান ও জরাজীর্ণ খাত থেকে আধুনিক ও লাভজনক খাতে রূপান্তরিত হোক, এমন স্বপ্ন ও প্রত্যাশা এ দেশের সকল হিতকামী জনগণের মতো আমাদেরও।







