বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ে মূল্যবান পরামর্শ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩০:৫০ অপরাহ্ন
যুক্তরাজ্যের ব্যাংক অব ইংল্যান্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে দেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একইভাবে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক ও এদেশের ব্যাংকখাতসহ অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভ‚মিকা রাখে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, গত দেড় দশকের স্বৈরশাসনামলে দেশের এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তি, পরিবার ও দল বিশেষের আজ্ঞাবহ ব্যক্তিগত অফিস বা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছিলো। এর ফলে রিজার্ভ চুরি, ঋণ খেলাপী কর্মকাÐ সর্বোপরি ব্যাংক খাত ধ্বংসসহ অর্থনীতিতে বিপর্যয় সৃষ্টি করা হয় সীমাহীন লুটপাটের মাধ্যমে। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের দক্ষ ও করিৎকর্মা বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্ণরসহ অন্যান্য কর্মকর্তা উপদেষ্টাদের প্রচেষ্টার ফলে ব্যাংক খাত আবার অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও এখন যথেষ্ট, প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার। ক্রমশ তা বাড়ছে। এখন আর কোন খেলাপী হওয়ার মতো ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে না। বরং চেষ্টা করা হচ্ছে খেলাপী ঋণ আদায়ের। স্বৈরশাসকের সীমাহীন লুটতরাজের ফলে দেউলিয়া হওয়া ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। এজন্য কয়েকটি ব্যাংককে একত্রিত করে সচল করার চেষ্টা চলছে। এসবের পেছনে সবচেয়ে বড়ো ভ‚মিকা পালন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংককে কীভাবে আরো শক্তিশালী করা যায়, কীভাবে এর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়, এ নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ লেখা প্রকাশিত হয়েছে দেশের শীর্ষ স্থানীয় মিডিয়ায়। লিখেছেন ফাইন্যান্স ও বিজনেস স্ট্রাটেজিস্ট সাইফুল হোসেন। ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ও জবাবদিহির উর্ধে নয়’ শিরোনামে প্রকাশিত এই লেখায় বলা হয়েছে, এখন সময় এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংককে শুধু স্বাধীন নয়, বরং কার্যকরভাবে জবাবদিহির আওতায় আনার। বিশ্বব্যাপী চর্চা থেকে আমরা বুঝতে পারি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা ও জবাবদিহি একে অপরের পরিপূরক। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ১৯৯৮ সালে সরকারের প্রভাবমুক্ত হয়ে মনিটারি পলিসি কমিটি গঠন করে, যারা সংসদের কাছে নীতি নির্ধারণে জবাবদিহি করে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ প্রতি ত্রৈমাসিকে মুদ্রানীতি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে তাদের সিদ্ধান্তের প্রভাব ও যুক্তি ব্যাখ্যা করা হয়। মালয়েশিয়ার ব্যাংক নেগারা ১৯৯৭ সালের আর্থিক সংকটের পর রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত সংস্কার বাস্তবায়ন করে এখন স্থিতিশীল ব্যাংকিং খাত গড়ে তুলেছে। এসব উদাহরণ থেকে স্পষ্ট যে, যেখানে জবাবদিহি ও দক্ষতা আছে সেখানেই আর্থিক শৃংখলা দৃঢ়।
স্বৈরশাসনামলের অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, আমাদের দেশের চিত্র ভিন্ন। ব্যাংক অনুমোদন, পরিচালনা পর্ষদ গঠন, ঋণ বিতরণ এমনকি মুদ্রা বিনিময় হার পর্যন্ত রাজনৈতিক প্রভাব লক্ষণীয়। অনেক ক্ষেত্রেই অদক্ষ, অনাভিজ্ঞদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেয়ার ফলে নীতিগত সিদ্ধান্তে পেশাদারিত্ব থাকে অনুপস্থিত। ব্যাংকগুলো যখন ঋণ পুনঃতফসিল করে দায় এড়িয়ে যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তখন পর্যবেক্ষণ হিসেবে নীরব থাকে। এই সংস্কৃতির পরিবর্তন করা না গেলে পুরো ব্যাংকিং খাতের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরে আসবে না। সদ্য বিতাড়িত হাসিনা সরকার দেশের ব্যাংকিং খাতকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলো যা স্থিরচিত্তে ভাবলে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠবে যে কোন সচেতন মানুষের। প্রতিবেদনে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে উপসংহারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত এক দিনে ঠিক হবে না। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রেগুলেটর হিসেবে যথাযথ অবস্থান নিতে হবে, যেখানে নীতি, প্রয়োগ, শাস্তি পুরস্কারÑ সবই ভারসাম্যপূর্ণভাবে পরিচালিত হবে। দক্ষতা, সততা ও প্রযুক্তি নির্ভর সংস্কারের মধ্য দিয়েই সম্ভব বাংলাদেশ ব্যাংককে সত্যিকারের আধুনিক ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা।





