৭ নভেম্বর গণতন্ত্রের প্রথম সুর্যোদয়
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩০:২২ অপরাহ্ন

\ সালেহ আহমদ খসরু \
আজ ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবস। সিপাহী জনতা তথা বাংলাদেশের প্রথম মুক্তির দিনরাত্রী। সেদিনের সূর্যোদয় মানুষের স্বস্তি এনে দিয়েছিল, বুকের উপর নতুন করে চেপে থাকা পাথর নেমে গেল – মানুষের মুক্তির আনন্দে ঢাকাসহ সারাদেশে অভূতপূর্ব উচ্ছাস দেখে পৃথিবী বুঝতে সক্ষম হয়েছিল এটি নতুন দিগন্তের উন্মোচন। সেই সকাল যেন আদিগন্ত বিস্তৃত এক সোনালি কিরণ যা থেকে আবাল বৃদ্ধ বনিতা জানতে পেরেছিল ধর্ম বর্ণ জাত কুল নির্বিশেষে সকলে সমস্বরে বলতে পেরেছিল আমরা বাংলাদেশি।
ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর এ দেশের জনগোষ্ঠীর কাছে ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ ছিল এবং বহমান। অনেকেই সেদিন সিপাহী জনতার মিলনমেলার চিত্রে মনে করেছিল একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ ও রক্তাক্ত বিপ্লবের স্বপ্নীল ফসল ঘরে উঠবে। সেদিন দেশের কোটি কোটি মানুষের আনন্দাশ্রু কেবলই হাওরের জলের মতো ভাসিয়েছে অন্তর। সাতই নভেম্বরের বিপ্লব পরবর্তীতে যে রাজনৈতিক মেরুকরণ হয় এবং তার ফলে গড়ে ওঠা একটি রাজনৈতিক দল বিএনপি কেমন করে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর সমর্থন পেয়ে আজও সাগরের উর্মিমালার নৃত্যের ছন্দে রাজপথে বিচরণ করে যায় সেটি যেমন একটি দিক, তেমনি অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশের মান মর্যাদা যে উচ্চমার্গে পৌঁছেছিল ঐ শাসনব্যবস্থা তার বিষয়বস্তু কী আজ চিন্তার খোরাক দেয় না? ঠিক এরকম কিছু ভাবনা থেকেই আমার কলমকে বলে দিলাম-একটু পথ হেঁটে আসো।
এবার আসি সেদিন কী ঘটেছিল, কোন প্রেক্ষাপটে তা জানার জন্য সেই সময়ে ফিরে যাবার চেষ্টা করি। মেজর জেনারেল রুহুল আলম চৌধুরীর লেখা ‘সিপাহী জনতার বিপ্লব’ গ্রন্থ থেকে বেশকিছু কথা উদ্ধৃত না করলে সত্যাসত্য না ভেবে যে কেউ এই লেখা কাল্পনিক ফানুস মনে করে বসতে পারেন। এই সকল বিষয় নিয়ে পল্টনের জোয়ান ছাড়া খড়ম টানা কারও ভাববিলাসী কথা বলা মানে সত্যকে অস্বীকার করে পালানো মানুষ, আমি কিন্তু তা হতে পারি না।
তাই এ বিষয় নিয়ে লিখতে গিয়ে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত সৈনিককে বেছে নিলাম কারণ- সিপাহী বিদ্রোহ করে বটে, কিন্তু মিথ্যাশ্রয়ী হয় না এবং হলে সে আর বিপ্লবী হয় না। তিনি বলেছেন-“০২ নভেম্বর ১৯৭৫ দিবাগত রাত শেষে ভোর সাড়ে চারটায় রেসকোর্স ক্যাম্প থেকে বেঙ্গল ল্যান্সার্সের একজন জেসিওর নেতৃত্বে তিন চারজন এনসিও আমার বাসায় দেখা করে জানান যে, চিফ অব দি জেনারেল স্টাফ ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ এবং ৪৬ ব্রিগেড কর্ণেল শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বে একটি অভ্যুত্থান হয়েছে। তারা সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহ অন্তরীণ এবং আমার ইউনিটের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোমেনকে সেনানিবাসে অন্তরীণ করেছে। একইসঙ্গে তারা জানায়, আমাকেও গ্রেপ্তারের জন্য একটি দল মহাখালীতে আমার শ্বশুর বাড়ির দিকে রওয়ানা হয়েছে। তারা আমাকে গ্রেফতার করবেই বলে বুঝতে সক্ষম হই। আরেক জায়গায় বলছেন “০৩ নভেম্বর সকাল পৌঁনে সাতটা থেকে সকাল দশটা পর্যন্ত বিমান বাহিনীর দুটো জঙ্গি বিমান রেসকোর্সে আমাদের অবস্থান লক্ষ্য করে ডাইভ দিয়ে আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছিল। এদের নেতৃত্বে ছিল খালেদ মোশাররফের অনুসারী স্কোয়াড্রন লিডার লিয়াকত এবং ফ্লাইট লে. জামাল। এইসব উদ্ধৃতিসমূহ অনেক বড়, তাই তাঁর সবটুকু লেখা আমি ছেপে দিলে আমার ভাবনা তিমিরেই থেকে যাবে।
কিন্তু যে কথা বলা ও ছাপানো নৈতিক ও অবশ্যম্ভাবী জরুরী তা হলো- “আমরা মঈনুল রোডে পৌঁছানোর আগেই পথে নজরে এলো সৈনিকরা পাঞ্জাবি পরিহিত জেনারেল জিয়াকে কাধে তুলে নারায়ে তাকবির, আল্লাহ আকবর, জেনারেল জিয়া জিন্দাবাদ’, ‘সিপাহী সিপাহী ভাই ভাই’ শ্লোগান মুখে ক্যান্টনমেন্টের মূল সড়কের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আমরা তাদের অনুসরণ করলাম। জেনারেল জিয়াকে নিয়ে সেকেন্ড ফিল্ড আর্টিলারি গেইটে যখন পৌঁছলাম তখন বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা ও সাধারণ সৈনিকদের মধ্যে কথা কাটাকাটি করতে দেখা যায় জেনারেল জিয়াকে নিয়ে।
বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার দাবি হলো, তিনি তাদের সঙ্গে ক্যান্টনমেন্টের বাইরে যাবেন। অপর দিকে বিপুল সংখ্যক সাধারণ সৈনিকদের দাবি তিনি সেকেন্ড ফিল্ড আর্টিলারিতে অবস্থান নেবেন।
জেনারেল জিয়া সেকেন্ড ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসারের অফিসে অবস্থান নিলেন। তাঁর এক সিদ্ধান্তেই পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টাতে লাগলো। উপস্থিত সবার মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইতে শুরু হলো। এ সময় হাজার হাজার সৈনিক “জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ- সিপাহী সিপাহী ভাই ভাই শ্লোগানে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে তুলছিল।”
এই ঘটনাপঞ্জি উল্লেখপূর্বক একেবারে শেষ পর্ব কিছু উল্লেখ না করলে হয়তো অধরা থেকে যাবে ভাবনার ডালপালা।
তাই আরও একটু সময় নিই প্রিয় পাঠক, তিনি লিখেছেন-“একটু পরেই উনার সঙ্গে দেখা করি। আরও অফিসার উপস্থিত হন। এ সময় জেনারেল জিয়া, তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার মীর শওকত আলীকে সেনাবাহিনীর সিনিয়র অফিসারদের তাঁর কাছে নিয়ে আসার জন্য বললেন। একই সময় বাসা থেকে উনার ইউনিফর্মও নিয়ে আসতে বলে দেন। তাঁর নির্দেশ মোতাবেক মীর শওকতকে নিয়ে এলাম। এরপর ভোর হতে হতে বাকিরাও চলে এলেন। আমার যতদূর মনে পড়ে, মীর শওকতের সঙ্গে জেনারেল জিয়া একান্তে কিছুক্ষণ আলোচনা করেন। এরমধ্যে হাসানুল হক ইনুও ছিলেন। জেনারেল জিয়া ও কর্ণেল তাহের একান্তে কিছুক্ষণ আলাপ করেন। আমরা পাশের রুম থেকে দেখতে পাই কর্ণেল তাহের বেশ চিন্তাগ্রস্ত হয়ে দুই-তিনবার উঠে গিয়ে বাইরে থাকা ইনুদের সঙ্গে কথা বলছেন। আর ফিরে এসে জেনারেল জিয়ার সঙ্গে বসছেন। এভাবে ঘণ্টাখানেক আলাপ আলোচনা শেষে তাহের তার সঙ্গীদের সহ সেখান থেকে চলে গেলেন, সময় তখন ভোর চারটা। (তথ্যসুত্র: সিপাহী জনতার বিপ্লব মেজর জেনারেল রুহুল আলম চৌধুরী)।
নিজে একজন কলাম লেখক হয়েও প্রথমেই রেফারেন্স নিয়ে শুরু করলাম এজন্য যে, কতিপয় দুষ্ট প্রতিবেশী চর লেখক এমন উল্লাসে ফেটে পড়া বিপ্লবকে মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস হিসেবে লিখার ধৃষ্টতা করেছেন এবং হয়তো করেছেন কারণ সময়ে অনেক সত্য তিরোহিত। যারা ইতোমধ্যে শারমিন আহমদের ‘নেতা ও পিতা’ বইটি পড়েছেন তারা বলবেন নিশ্চয়ই একাত্তরের অনিশ্চিত যাত্রায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা কি অসহায়ের মতো জাতিকে দিকভ্রান্ত করেছেন। এবং কেউ এটাও বলতে পারেন জনাব তাজউদ্দিন আহমেদকে ঘোষণাপত্র না দিয়ে তিনি রক্তাক্ত স্বদেশ হতে দেশকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন। হতে পারে এ ভাবনাও যে, আমিতো প্রধানমন্ত্রী হতে চাইছি- তাই যুদ্ধ কেন! কিন্তু নাচতে নেমে যে ঘোমটা দেয়া যায় না,এবং গেলেও মুখ থুবড়ে পড়তে হয় সে কথা যেকোনো নির্বোধ বুঝতে সক্ষম।
তারপরও যে ঐশী বাণী মানুষকে স্পন্দিত করেছে, তা হলে মেজর জিয়াউর রহমানের ছাব্বিশে মার্চের ডিক্লেয়ারেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্স। হ্যাঁ এ কথাও সঠিক সেদিনের মেজর বিচক্ষণতার সঙ্গে পুরো বিষয় নিয়ে কোনো অনাহুত বিষয় যাতে না হয় অথবা যুদ্ধ যেনো স্বাধীনতার সূর্য উদিত করতে বিলম্ব না করে তারজন্য কোনো বিতর্কের জন্ম না দিয়ে পরবর্তীতে ঙহ নবযধষভ ড়ভ ড়ঁৎ মৎবধঃ ষবধফবৎ ইধহমধনধহফযঁ ঝযবরশয গঁলরনঁৎ জধযসধহ উল্লেখ করেন। এ থেকেই বুঝতে কোন অসুবিধা হয় না যে তিনি রাষ্ট্রের প্রধান নয় বরং মরণপণ যুদ্ধে যোদ্ধা হয়ে জীবন বাজি ধরেছিলেন। এবং স্বাধীনতার সূর্য উদিত হলে ব্যারাকের সন্তান মূল জায়গায় ফিরে যান।
মানুষ ভাবে এক অথচ বিধাতা তৈরি করে রাখেন তাঁর ভূমিপুত্রকে সময়ে জমিনের উপর দাঁড়িয়ে জানান দিতে- আমার জন্ম হয়েছে দেশের মানুষ ও মাটির তরে। তাই একাত্তর পরবর্তী অনিয়ম, অভাব, অন্যায়, অবিচার, অনৈতিক কর্মকাণ্ডে যখন দেশের মানুষ দিশেহারা এবং রাজনীতি কুক্ষিগত- তখন জাসদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে কার্যকরী না হলেও সময়োপযোগী আওয়াজ তুলতে সক্ষম হয় যে, এ রাজনীতি বা রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য দেশের লক্ষ মানুষ প্রাণ দেয়নি।
একদিকে রক্ষীবাহিনী অপরদিকে আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতি তথা অজানা চক্রের গুপ্তহত্যা যেন বাকশালের বিপক্ষে নকশালি কায়দায় প্রতিরোধ করার যে রাজনৈতিক কার্য তাই চলে এবং সম্ভবত তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে পঁচাত্তরের দুঃখজনক ঘটনায়। যা কোনো বিবেকবান মানুষের কাছে কাম্য নয় এবং আজও তা কল্পনাতীত। সেই পট পরিবর্তন তাৎক্ষণিকভাবে মানুষের মধ্যে স্বস্তি সহ মিশ্র প্রতিক্রিয়া হলেও যতই দৃশ্যপটে সময় গড়াতে থাকে ততই মোশতাক গং মানুষের নিকট অবিশ্বাসী এবং অনাস্থার কারণ হয়ে দাড়ালে দেশের আপামর জনতা সেদিন ভাবনার অতলে হারায়- আসলে কী হতে যাচ্ছে দেশজুড়ে! পরিবর্তন পিয়াসী মানুষ তখন অনেকটা ঘোরের মধ্যে চুপচাপ অবলোকন করছে কার হাতে দেশ! শঙ্কিত মনে ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান। এবং ২রা নভেম্বর হতে ৭ নভেম্বরের আগ মুহূর্ত অবধি এ দেশে কোনো সরকার ছিল বলে কেউ মনে করেনি। ঠিক তেমনই এক যুগসন্ধিক্ষণে মানুষ দেখলো সেই ২৬শে মার্চ একাত্তরের একই কণ্ঠ, যেন ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ-মেজর জিয়া হতে জেনারেল জিয়া বীর উত্তম। সিপাহী জনতা ভাই ভাই দেশমাতৃকার মুক্তি চাই’, ‘জেনারেল জিয়া জিন্দাবাদ।
এখনকার অনেক তরুণ নানাভাবে ভুল আওয়াজের ভিত্তিতে এবং মিথ্যা রাজনৈতিক ভাষনে প্রেক্ষাপট থেকে মানুষের তথা তরুণ সমাজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়েছিলো। কারণ বিগত সতেরো বছরের কালো অধ্যায় যা কখনো কাম্য নয় বরং এর থেকে বিভ্রান্ত হয়ে আজ রাজনীতিতে হাতাহাতির চেয়েও ভয়ংকর বিষয় ঘটেছে সতেরো বছর যা এই সমাজের জন্য অন্ধকার ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিয়েছিল। তবে সেই সময় এখন অনেকটা দূরীভূত।
যেমন বিগত সতেরো বছরে একটি ভয়ঙ্কর অভিযোগ তুলেছিলো যে, এদিনটি মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস। তাহলে কি মুক্তিযুদ্ধে গড়ে ওঠা সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা নিয়মানুবর্তিতা ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার তেজস্বী মনোবল ভেঙে দিয়ে ফেরিওয়ালা বানিয়ে দিয়ে বাজারে পণ্য বিক্রির হাতিয়ার হিসেবে অথবা একটি দুর্বল বাহিনী হয়ে স্বাধীনতার তেজ ও চেতনাবিরোধী একদল কশেরুকাবিহীন মাংসপিণ্ডে রুপান্তরিত হবে!! নিশ্চয়ই কোনো দেশপ্রেমিক মানুষ এটি চাইবে না এবং হয়নি। ঠিক তখন ওই উশৃঙ্খল ও অনিয়মের বিরুদ্ধে দায়িত্বশীল কাজটিই জেনারেল জিয়া প্রথম করেছেন। বাহিনীর মধ্যে নিয়মানুবর্তিতা ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার তেজস্বী একটি সেনাবাহিনী গড়ে তুলেন। যে ঐতিহ্য আজও দেদীপ্যমান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে তথা অভ্যন্তরীণ রাষ্ট্র ব্যবস্থায়। সেনাবাহিনীর ট্রেনিং হতে পোশাক সমরাস্ত্র সব নতুন করে ঢেলে সাজান এবং সাজাতে আরম্ভ করেন রাজনীতি ও অর্থনীতি। তাঁর আমলেই মধ্যপ্রাচ্যের রেমিট্যান্স, পোশাক শিল্প, খাল খনন কর্মসূচির সুফলে ধান রপ্তানিতে যুগান্তকারী ফলাফল পেতে থাকে বাংলাদেশ। সেই সময়ে জাপানে পর্যন্ত বাংলাদেশ ধান রপ্তানি করে।
মানুষ খুঁজে পায় তার ভূমিপুত্র, দেশ হয়ে ওঠে সুজলা সুফলা সবুজ বাংলাদেশ। এবং অর্থনৈতিক সুফলসহ সততার যে নজির সৃষ্টি করে গিয়েছেন ০৭ই নভেম্বরের বিপ্লবী সিপাহী জনতার নেতা জিয়াউর রহমান বীর উত্তম তা নিয়ে অনেক বই লেখা হয়েছে আরও হবে, আমারও হয়তো এ বিষয় নিয়ে বিশাল ব্যাপ্তির অবকাশ আছে।
দেশের সামষ্টিক স্থিতিশীল অর্থনীতি রাজনীতি সমরনীতি তথা আমার মুক্তাঞ্চল প্রথম আলোর মুখ দেখে ৭ নভেম্বর ১৯৭৫। একজন দেশপ্রেমিক দায়িত্বশীল হয়ে কেবল ভালোবাসার কথামালায় বিকিয়ে দিতে পারে না স্বদেশ।
কারণ বুঝতে হবে দেশপ্রেম মা’য়ের প্রেমের চেয়ে কম নয় বরং অনেক বেশি। সেই পরিপ্রেক্ষিত প্রেক্ষাপটে অনেক দয়ামায়া গোপন করেই এগিয়ে যেতে হয়। একটি সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনী প্রত্যেক দেশের গর্বের ধন। তাই এ দিবস এক দু’জন যদি বিপ্লব নাও বলে তা ইতিহাসের পাতায় বিপ্লব বলেই রচিত। আর ইতিহাসের অমোঘ বিধান হলো ইতিহাস হতে শিক্ষা না নেওয়া। আমার বিশ্বাস এমন সুযোগ এবার চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর হাতছাড়া
কেন করবেন! কারণ আপনি আপনারাও শিক্ষিত মানুষ। তাই দেশের বাহিনীর কলঙ্কিত লোকগুলো যতই বাহাদুরি দেখিয়েছে মানি কিন্তু অতীত সংগ্রামে দেখা যায় দেশ গড়ার সময় প্রতি বিপ্লবী হয়ে তারা নিজেরাই নিজেদের কবর রচনা করেছেন।
এখন এমনও হতে পারে যে, কেউ আমার সাথে একমত নাও হতে পারেন। এবং দ্বিমত করাও একটা শিল্প, যখন তা সত্যাসত্য প্রকাশ করে। কিন্তু কলমের জোরে বা সময়ের আবর্তিত প্রেক্ষাপটে অনেক কিছু চাপা দেয়া হতে শুরু করে বিবর্তন করে দেওয়া হয়েছিল অথচ ইতিহাসে তার স্থান হয়নি। বরং ভুলের আশ্রয়ে রচিত সব কথা একসময় নিজেই ঘুরপাক খেতে খেতে তিমিরেই হারায়।
প্রায়শই আমি আমাকে বলি শোনো লেখক, মতামতের চেয়ে জরুরি সত্যাশ্রয়ী হওয়া। আমি এখন বলি বিপ্লব ও সংহতি দিবস কেন নতুন মাত্রা যোগ করলো বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে।
মূলত রাষ্ট্র পেয়ে গেল সততার উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের এক প্রেসিডেন্ট এবং যুক্ত হলো বহুদলীয় গণতন্ত্র। এরই হাত ধরে বাকশাল নামক রাজনৈতিক একক দল পুনরায় আওয়ামী লীগে পুনর্জন্ম লাভ করলো। আজ এ কথা নিঃশঙ্কচিত্তে বলা যায় সিপাহী জনতার বিপ্লব না হলে আওয়ামী লীগ আর বেঁচে রইতো না এবং যে প্রলয়ঙ্কারী ভয়ানক আচরণে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন ছিল এ-ও ঐতিহাসিক কালো যুগ।
আরেকটু সম্পূরক করে যদি বলি বিএনপিসহ নতুন নতুন রাজনৈতিক দল যেভাবে আজ বহুমাত্রিক রাজনৈতিক ভাবনার দুয়ার খোলে নানান রস আস্বাদন করে উদ্দাম আভিজাত্যপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ কিংবা ভিন্ন মতের ময়দানে বিচরণ করছে তা শুধু ঐ সাতই নভেম্বর ১৯৭৫। এমন আরও রাষ্ট্রীয় কৃতিত্বের তথ্য-উপাত্ত দিয়ে দীর্ঘ করতে পারি এই লেখা, কিন্তু তা করার জন্য পত্রিকার কলেবর যে পরিমাণ বড় হওয়া উচিত তা কাগজেরও নেই আর আমারও বইয়ের পাতায় ছুটে যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। কিন্তু যে কষ্ট ২ নভেম্বর হতে ৭ নভেম্বরের আগ পর্যন্ত ঘটে গেছে তা ঐ জেলহত্যার মতো কলঙ্কিত অধ্যায়। যা এই মহান বিপ্লবের জন্য একটি বিতর্ক ও সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন হয়তা থেকেই যায়। আমি সেই দুঃখজনক হত্যাকাণ্ডের প্রতি ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করে ঐতিহাসিক সিপাহী জনতার বিপ্লবের সুফল একদিন দেশ পরিপূর্ণ করে উপভোগ করুক সেই প্রত্যাশা করে লেখাটি শেষ করতে চাই।
ভুলে গেলে চলবে না যে, একাত্তরের বীর শ্রেষ্ঠ হতে সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আমাদের গৌরবের তিলক ও সাতই নভেম্বর একইসূত্রে গাথা। একাত্তর আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন এবং সাত নভেম্বর ছিল অর্জনের পরবর্তী সময়ে দেশ গড়ার পথে হাঁটা প্রত্যেক দেশপ্রেমিক মানুষের দখিনার সমীরণ। এই সমীরণ চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান বাতায়ন খুলে দিয়েছে আরও একবার এবং সেই জানালায় সুবাতাস বইবেই আজ নয় কাল- বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।
স্বতন্ত্র পরিচালক (জেওসিএল)






