চমৎকার ব্যবস্থাপনায়ও অস্থির হকাররা, সন্ধ্যা নামলেই ফুটপাতে উঁকিঝুকি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩০:২৬ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার: সিলেট নগরীর লালদীঘি হকার মার্কেট এখন যেন ছিমছাম এক গ্রামীণ বাজার। চিকন বাঁশের খুঁটি, উপরে ত্রিপল টাঙিয়ে গ্রামীণ হাট-বাজারের মতো করে ছোটো ছোটো দোকানে নানান পদের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানীরা। সাঁঝের বেলা পশ্চিমাকাশে লালিমা যতই কালো রং ধারণ করতে শুরু করে ধীরে ধীরে বাড়ে ক্রেতার সংখ্যা।
একসময়ের ময়লা-আবর্জনা, দুর্গন্ধময় পরিবেশের এই জায়গা এখন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। ছন্নছাড়ার মতো ব্যবসা করতে থাকা হকারদের প্রশাসন এখানে ব্যবসার জন্য স্থান করে দিয়েছে। হকাররা যাতে নির্বিঘ্নে শান্তিমতো ব্যবসা করতে পারেন এজন্য মাটি ভরাট করে দোকানের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, ইটের পটাতন দিয়ে বানিয়ে দেওয়া হয়েছে রাস্তা। ফলে দোকানীরা এখানে সুন্দরভাবে বসতে পারেন, ক্রেতারাও আরামে বাজার করতে পারছেন।
এসব দোকানে তরিতরকারি, মাছ-মাংস, কাপড়, জুতাসহ বিভিন্ন পদের নিত্যপণ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ ফুটপাত ও রাস্তায় হকারদের কাছে যা পাওয়া যেতো সেখানে এখন সেই পণ্যগুলোই পাওয়া যায়। যারা রাস্তায় এসব বিক্রি করতেন তাদেরই এখানে জায়গা দেওয়া হয়েছে। এক সময় তাদের এসব পণ্য রাস্তায় হৈ-হল্লার মধ্যে ধাক্কাধাক্কি করতে কিনতে হতো। প্রশাসনের এই ব্যবস্থাপনায় ক্রেতারা সাচ্ছন্দে করছেন বাজার। নেই গাড়ির উচ্চ শব্দ, নেই পথচারী-ক্রেতা-বিক্রেতার ধাক্কাধাক্কি।
যেসব ক্রেতারা ফুটপাতে বাজার করতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন, তারাই এখন যাচ্ছেন লালদিঘীর পাড়ে। ক্রেতারা বলছেন, এখানে পণ্য ক্রয়ে যেমন সুন্দর পরিবেশ, তেমনি নিরাপদও। এই অবস্থা যেন স্থায়ী থাকে দাবি তাদের।
ক্রেতা বাড়ায় বিক্রেতাদের বেশিরভাগও খুশি। বিশেষ করে তরকারি ও মাছ বিক্রেতারা এই ব্যবস্থায় অনেক খুশি। কিন্তু এতো চমৎকার এই ব্যবস্থাপনায়ও অনেক হকারের মধ্যে অস্থিরতা কাটছে না। সুযোগ পেলেই তারা রাস্তায় ফুটপাতে উঁকিঝুকি মারে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর অনেক রাস্তায় হকাররা বস্তা, ঝুড়ি, ছোটো ভ্যানে করে বসার চেষ্টা করে। এছাড়া প্রতিটি বড়ো রাস্তার আশপাশের গলিতেও অনেক হকার ভ্যান নিয়ে অবস্থান করে থাকে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন অভিযান চললেও ফাঁক পেলেই তারা রাস্তায় বসার চেষ্টা করে। তাদের ভাবনা এমন যে- বর্তমান জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম বদলি হলেই তারা আবারও রাস্তায় বসার চেষ্টা করবে। এজন্য তাদের অনেকে হকার শেডে জায়গা পেলেও দোকান না করে ফেলে রেখেছে। তারা আছে সময়-সুযোগের অপেক্ষায়। তবে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও নগর কর্তৃপক্ষ ফুটপাত ও রাস্তা দখলমুক্ত রাখাতে অটল। প্রায় প্রতিদিনই মোবাইল কোর্ট বসিয়ে জরিমানা করা হচ্ছে। গতকালও হয়েছে।
বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, লালদীঘি হকার মার্কেটে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে ক্রেতার আনাগোনা বাড়ছে। ভেতরের দিকে কাপড় পট্টিতে ক্রেতার সংখ্যা কম ছিল। তবে সামনের দিকে তরকারি, নিত্যপণ্য ও মাছের বাজার ছিল জমজমাট।
বিক্রেতারা বলেন, রাস্তায় জায়গা কম ছিল তাই ক্রেতা বেশি মনে হতো। মূলত বিক্রির চেয়ে হৈ-হল্লা বেশি হতো, মানুষ-যানবাহন সব মিলিয়ে ভিড় বেশি হতো। তবে হকার মার্কেটের শুরুতে ক্রেতা খুব কম ছিল, দিনের বেলা একেবারে শূণ্যের কোঠায় ছিল। কিন্তু এখন ক্রেতা বাড়ছে। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তরকারি ও মাছ বাজারে ক্রেতার ভিড় থাকে।
তবে কাপড় পট্টির ব্যবসায়ীরা বলেন, তাদের ক্রেতা মূলত রাতে কাজ ফেরত লোকজন। যারা রাস্তা থেকে কাপড় কিনে অভ্যস্ত। হকার মার্কেটে কাপড় পট্টি ভেতরে থাকায় অনেকে ভেতরে আসতে চান না। শীত বাড়ায় গরম কাপড়েরর দোকানে অল্প ক্রেতা আসলেও বিক্রি কম।





