নগরে পানি সংকটে ফায়ার সার্ভিস
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:১০:১৮ অপরাহ্ন
পুকুর-দীঘি ভরাট করে বাসা-বাড়ি নির্মাণ
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেট নগরে জলাশয় ভরাট করে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন। এতে জলাশয়ের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে উৎস হারিয়ে যাওয়ায় কমছে অগ্নিনির্বাপণের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ সুবিধা। বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে পানির জন্য আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসকে বেগ পেতে হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের তথ্যমতে, সিলেট নগরে এক সময় দিঘিসহ ছোট-বড় পুকুর প্রায় অর্ধশতাধিক ছিল। এসবের নামে বিভিন্ন এলাকার নামকরণও হয়। এদিকে নগরায়ণের ফলে এলাকার নাম থাকলেও সেই পুকুর-দিঘির সিংহভাগই ভরাট হয়ে গেছে, নির্মাণ করা হয়েছে বাসাবাড়ি। অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে রামের দিঘি, লালদিঘি, মাছুদিঘি, সাগরদিঘি, চারাদিঘি নামের সঙ্গে ‘পার’ যুক্ত হয়ে শুধু টিকে আছে এলাকার নামগুলো। অন্যদিকে ভরাট করে গড়ে তোলা বহুতল ভবনের প্রায় ৭০ শতাংশ ভবনেই নেই অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা। ফলে অগ্নিকাণ্ডের সময় ফায়ার সার্ভিসকে পানি সংকটে পড়তে হয়। পানির যোগান দিতে ফায়ার সার্ভিস হাইড্রেন্ট পয়েন্ট তৈরির সুপারিশ করলেও বাসা-বাড়িতে হাইড্রেন্ট রিজার্ভ নিশ্চিতকে গুরুত্ব দিচ্ছে সিটি করপোরেশন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু ফায়ার হাইড্রেন্ট পয়েন্ট হলেই হবে না। পরিকল্পনা আর ইমারত নির্মাণ আইনের বাস্তবায়ন খুব জরুরী। কারণ এখন অধিকাংশ বাসা তৈরি হচ্ছে যেগুলোর রাস্তা একেবারেই ছোট। এতে আগুন লাগলে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে যেতে বাধাপ্রাপ্ত হবে। ভবন নির্মাণে পর্যাপ্ত রাস্তাসহ সঠিক পরিকল্পনার অভাবে দেখা দিতে পারে মহাবিপদ।
নগরের বন্দরবাজারস্থ লাল দিঘি। ঐতিহ্যবাহী এই দিঘিটি ভরাট করে গড়ে ওঠেছে হকার্স মার্কেট। চলতি বছরের মে মাসে ওই মার্কেটে স্মরণকালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এসময় নগরের বাসিন্দাসহ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা দিঘির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হয়েছে। পানির অভাবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা শতচেষ্টা করেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ৪ ঘণ্টা সময় লাগে। ততক্ষণে পুড়ে যায় অর্ধশত দোকান।
লাল দিঘির মতোই নগরের অধিকাংশ পুকুর, দিঘি ও জলাশয় ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবন। যার অধিকাংশতেই নেই অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা। ফলে কোথাও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে। এ অবস্থায় জরুরী মুহূর্তের বিবেচনায় ফায়ার সার্ভিস সিটি কর্পোরেশনকে ফায়ার হাইড্রেন্ট পয়েন্ট নির্মাণের প্রস্তাব দিলেও এখনো নেই দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি।
সিলেট ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, আগুন নেভানোর জন্য সবচেয়ে জরুরী পানি। কিন্তু মহানগরের অধিকাংশ এলাকাতে পানির উৎস নেই। ফলে কোথাও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে পানির তীব্র সমস্যায় পড়তে হয়। এজন্য গত দু’বছর আগে ফায়ার হাইড্রেন্ট পয়েন্ট নির্মাণের জন্য সিটি কর্পোরেশনের কাছে প্রস্তাবনা দিয়েছি। এটি বাস্তবায়ন করা খুবই জরুরী।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, হাইড্রেন্ট পয়েন্ট খুব কার্যকরী হবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ আমাদের এখানে পানির প্রেসার সব সময় সমান থাকে না। তাই আমরা হাইড্রেন্ট পয়েন্ট নির্মাণের বদলে বাসাবাড়িতে হাইড্রেন্ট রিজার্ভ নিশ্চিত করার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছি।