বই উৎসব নিয়ে শঙ্কা!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ ডিসেম্বর ২০২২, ৪:০০:১৫ অপরাহ্ন
অনেক উপজেলায় এখনও পৌঁছায়নি নতুন বই
এমজেএইচ জামিল : মাত্র ৪ দিন পর ১ জানুয়ারী বই উৎসব। অথচ এখনও সিলেটের অনেক উপজেলায় পৌঁছায়নি প্রাথমিক স্তরের বই। শুধু সিলেট বিভাগই নয়, সোমবার পর্যন্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে সারাদেশে প্রায় ১০ কোটি বই পৌঁছানো বাকি রয়েছে। ফলে নতুন বছরের প্রথম দিন সিলেটের সব প্রাথমিক শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তারা এমনটাই জানিয়েছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী সিলেট বিভাগের বিভাগের ৭ হাজার ৭৮১ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইবতেদায়ী মাদ্রাসা ও কেজি স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭ লক্ষ ১১ হাজার ৩২ জন। বিভাগে ১ম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছেন ১৪ লক্ষ ৮৪ হাজার ৩৪৩ জন। এছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষার্থী আছেন ২ লক্ষ ২৬ হাজার ৬৮৯ জন। ২০২৩ সালে নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। ফলে এর সাথে বেড়েছে বইয়ের চাহিদাও।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী বিভাগের ১৭ লক্ষ ১১ হাজার ৩২ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৭২ লক্ষ ৯৫ হাজার ৫৯৬ টি বইয়ের চাহিদা থাকলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত বিভাগের সব উপজেলায় বই অর্ধেকেরও কম বই সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া অনেক উপজেলায় এখনো বই পৌঁছায়নি। যদিও সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা আশ^াস দিয়েছেন ৩০ ডিসেম্বরের আগে শতভাগ বই পৌঁছে যাবে। ১ জানুয়ারী শতভাগ বই নিয়ে তারা বই উৎসবের ব্যাপারেও শতভাগ আশাবাদী। অথচ সংশ্লিষ্ট বিভাগের খোদ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিজেই ১ জানুয়ারীর আগে শতভাগ বই প্রাপ্তি নিয়ে সন্দিহান রয়েছেন।
জানা গেছে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে সারাদেশে ৩৪ কোটি ৬১ লাখ ৬৩ হাজার পাঠ্যবই বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরে ৯ কোটি ৯ লাখ ৫৩ হাজার এবং মাধ্যমিক স্তরে ২৪ কোটি ৬৩ লাখ ১০ হাজার বিতরণ হবে। সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) পর্যন্ত দেশের প্রাথমিক স্তরে সাড়ে ৬ কোটি বই বিভিন্ন উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। আর মাধ্যমিক স্তরে ১৮ কোটি বই পাঠানোর কাজ শেষ হয়েছে।
এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন বছরের প্রথম দিনে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হবে না। তবে কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসে যেন খালি হাতে বাসায় ফেরত না যায় সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে ৮০ শতাংশ নতুন বই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পৌঁছানোর সর্বাত্মক প্রস্তুতি চলছে। মাধ্যমিকে ৮০ শতাংশ বই পৌঁছানো গেলেও প্রাথমিক স্তরে এই পরিমাণ বই পাঠানো নিয়ে শঙ্কায় এনসিটিবির কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে এনসিটিবি চেয়ারম্যান মো. ফরহাদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রাথমিক স্তরে বই ছাপানোর কাজ দেরিতে শুরু হয়েছে। প্রাথমিকের বই ছাপানোর সাথে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কিছু ঝামেলা ছিল। তারা বই ছাপানোর কাজ দেরিতে শুরু করায় এই স্তরের বই পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরে ৬৮ শতাংশ বই পৌঁছে গেছে। আর মাধ্যমিকে এই সংখ্যা ৭৭ শতাংশ। আমরা আশা করছি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ৮০ শতাংশ বই সব উপজেলায় পৌঁছে যাবে।
শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী সিলেট বিভাগে ১ম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক, ইবতেদায়ী মাদ্রাসা ও কেজি স্কুল মিলে শিক্ষার্থী রয়েছেন ১৪ লক্ষ ৮৪ হাজার ৩৪৩ জন। এছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষার্থী আছেন ২ লক্ষ ২৬ হাজার ৬৮৯ জন। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ৫ লক্ষ ৮৮ হাজার ৮৮৬ জন, সুনামগঞ্জ জেলায় ৩ লক্ষ ৯৭ হাজার ৯০৪ জন, হবিগঞ্জ জেলায় ৪ লক্ষ ৩ হাজার ৩০৭ জন ও মৌলভীবাজার জেলায় ৩ লক্ষ ২০ হাজার ৯৩৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১ম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত ১৪ লক্ষ ৮৪ হাজার ৩৪৩ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৬৭ লক্ষ ৯৯ হাজার ৩৬৬ কপি বইয়ের চাহিদা রয়েছে। ২ লক্ষ ২৬ হাজার ৬৮৯ জন প্রাক প্রাথমিক শ্রেণী শিক্ষার্থীদের জন্য বইয়ের চাহিদা ৪ লক্ষ ৯৬ হাজার ২৩০ কপি। এছাড়া বিভাগে ১ম শ্রেণীর জন্য ৯ লক্ষ ৫৪ হাজার ১৩৯ কপি, ২য় শ্রেণীর জন্য ৯ লক্ষ ১৫ হাজার ১৭৪ কপি, ৩য় শ্রেণীর ১৭ লক্ষ ২৩ হাজার ৭২৭ কপি, ৪র্থ শ্রেণীর ১৬ লক্ষ ৭৩ হাজার ৭৮৬ কপি ও ৫ম শ্রেণীর ১৫ লক্ষ ৩২ হাজার ৮৪০ কপি বইয়ের চাহিদা রয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) পর্যন্ত বিভাগে কি পরিমাণ বই এসে পৌঁছেছে এব্যাপারে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনই বই আসছে। তাই এখনো মোট হিসাব করা যায়নি। তবে বেশীর ভাগ জেলা উপজেলায় বই চলে আসছে। বাকী ৩ দিনের মধ্যে অন্যান্য উপজেলায়ও বই চলে আসবে বলেও আশ^স্ত করেন তারা।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাখাওয়াত এরশেদ দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৬টি উপজেলায় প্রাথমিকের বই চলে আসছে। বাকী ৭ উপজেলার বই ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তবে মাত্র ৪ দিনের মধ্যে সব উপজেলায় শতভাগ বই প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দিতে পারেন নি এই কর্মকর্তা।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দুর রহমান দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, জেলার সব উপজেলায় এখনো প্রাথমিকের বই পৌঁছেনি। কিছু কিছু উপজেলায় বই মঙ্গলবার পর্যন্ত বই পৌঁছেছে। আবার কিছু উপজেলায় সব নয়, কিছু বই এসেছে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শামসুর রহমান দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, মৌলভীবাজারের সব উপজেলায় এখনো সব বিষয়ের বই পৌঁছেনি। তবে কিছু উপজেলায় কিছু বিষয়ের বই এসেছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যেই শতভাগ বই পৌঁছানোর আশ^াস দিয়েছেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
হবিগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. গোলাম মওলা দৈনিক জালালাবাদকে জানান, জেলার সকল উপজেলায় মঙ্গলবার পর্যন্ত বই পৌঁছেনি। তবে প্রতিদিনই বিভিন্ন উপজেলায় বই আসছে। মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) ৩টি উপজেলায় নতুন করে বই এসেছে। ১ জানুয়ারীর আগে তার জেলায় শতভাগ বই পৌঁছানোর ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
সার্বিক বিষয়ে জানতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় অফিসের উপ পরিচালক জালাল উদ্দিন দৈনিক জালালাবাদকে জানান, বিভিন্ন কারণে এবছর বই ছাপাতে বিলম্ব হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) পর্যন্ত বিভাগের অধিকাংশ উপজেলায় বই পৌঁছেছে। কিছু উপজেলায় বই পৌঁছেনি, আবার কিছু উপজেলায় বই পৌঁছলেও সব বিষয়ের বই পৌঁছেনি। তবে অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব উপজেলায় বই পৌঁছে যাবে। ১ জানুয়ারী যথারীতি বই উৎসব হবে। সঙ্কট থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শতভাগ বই পৌঁছে দিতে আন্তরিক রয়েছে।