সিলেটজুুড়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয়
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:১০:২৩ অপরাহ্ন
বরাদ্দ কম থাকায় ৪০% লোডশেডিং -বিদ্যুৎ বিভাগ
স্টাফ রিপোর্টার : শীত মওসুমে হঠাৎ করেই সিলেটজুড়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গতকাল সিলেট নগরীতে দিনের অধিকাংশ সময়ই বিদ্যুৎ ছিলনা। অনেক জায়গায় এক থেকে টানা ২-৩ ঘন্টা ছিল বিদ্যুৎবিহীন। আবার অনেক জায়গায় ১ঘন্টার মধ্যে একাধিকবার বিদ্যুৎ আসা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিভাগের জেলা উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। পূর্ব ঘোষণা না দিয়ে হঠাৎ অতিমাত্রায় লোডশেডিংয়ের ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন সিলেটের লাখ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহক। তবে বিদ্যুতের চলমান এই সমস্যা আরো ২/৩ দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রোববার দিবাগত রাত থেকে সিলেটসহ সারাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা দেখা দেয়। সোমবার থেকে দেশে প্রতিদিন ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। একই সাথে ভারত থেকে আমদানী করা এইচভিডিসি বিদ্যুৎ, রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎ থেকে নতুন মেগাওয়াট জাতীয় গ্রীডে সংযুক্ত হতে যাচ্ছে। তাই এসব লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ কাজ চলছে। যার ফলে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহে ত্রুটি দেখা দেয়ায় সঞ্চালনে বিঘ্ন ঘটছে। এই অবস্থা থেকে খুব শীঘ্রই মুক্তি মিলছেনা বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।
বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (৯ জানুয়ারী) রাত ৩টায় রামপাল ইউনিট-১ এর সঞ্চালন লাইনে ফল্ট দেখা দেয়। এছাড়া সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে ভোলা নতুন বিদ্যুৎ এর জিটি-২ ডিপি হাই দেখিয়ে লাইনটি বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে গত ২২ ডিসেম্বও হতে পায়রা ইউনিট-২ মাইনর মেইনটেনেন্সের কারণে বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও শনিবার (৭ জানুয়ারী) ভেড়ামারা এইচভিডিসি ব্লক-১ বাৎসরিক সংরক্ষণের জন্য বন্ধ আছে। এসব কারণে সর্বমোট দেশে বর্তমানে ৫৫০ (রামপাল), ১১০ (ভোলা নতুন বিদ্যুৎ), ৪৩০ (এইচভিডিসি) ও ৫০০ (পায়রা) মোট ১৫৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে রোববার থেকে শুরু হওয়া লোডশেডিং সোমবার কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। মঙ্গলবার লোডশেডিং ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। এদিকে রামপাল ইউনিটের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ রাতের মধ্যে সমাধান হওয়ার কথা। একই সাথে ভেড়ামারা এইচভিডিসির সংরক্ষণ কাজ আজ বুধবার (১১ জানুয়ারী) শেষ হবে এবং পায়রা ইউনিট-২ এর সংরক্ষণ কাজ আগামী ২৪ জানুয়ারী শেষ হবে।
এদিকে, জাতীয় গ্রীড থেকে দৈনিক বরাদ্দকৃত লোড কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য সিলেটসহ সারাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিভাগীয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট অফিস সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দিনের বেলায় সিলেট বিভাগে ৮০-৯০ মেগাওয়াট বিদু্যুতের চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ৫৩ মেগাওয়াট। এরমধ্যে ৪৪ মেগাওয়াট ছিলো বিপিডিবি’র ও ৯ মেগাওয়াট ছিল পল্লী বিদ্যুতের। বরাদ্দ না পাওয়ায় দিনের বেলায় সিলেট বিভাগে ৪০ শতাংশ লোডশেডিং করতে হয়েছে। ফলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা একটু বেশী ছিল।
জানা গেছে, শীতকালে সিলেটজুড়ে হঠাৎ করে বিদ্যুতের আসা-যাওয়া চলছে। ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিংয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের। নগর এলাকার বাইরে দিনে-রাতে কয়েক দফায় দেয়া হচ্ছে লোডশেডিং। জেলা ও উপজেলায় পরিস্থিতি ভয়াবহ। নগর ও জেলা শহরগুলোতে টানা ২ থেকে ৩ ঘন্টা লোডশেিিং হলেও উপজেলা গ্রাম এলাকায় টানা ৫ থেকে ৬ ঘন্টা লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানা গেছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে ছোট শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সীরা। অতিমাত্রায় লোডশেডিংয়ে ব্যাহত হচ্ছে শিল্প উৎপাদন। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। হিমাগারে খাবার সংরক্ষণে ঝামেলা হচ্ছে। কৃষকরা জমিতে সেচ দিতে সমস্যায় পড়ছেন। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মনোনিবেশ করতে কষ্ট হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারণে চিকিৎসা, শিক্ষা ও কৃষি কাজে বিঘ্ন ঘটছে।
নগরীর সুবিদবাজার এলাকার বাসিন্দা মিরা বেগম বলেন, কয়েকদিন লোডশেডিং ছিলনা। এখন হঠাৎ করে এত বেশী লোডশেডিংয়ের কারণে বাচ্চাদের লেখাপড়া ও গৃহস্থালির কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।
টিলাগড়ের বাসিন্দা ইছমত হোসেন বলেন, কিছুদিন থেকে তেমন লোডশেডিং হচ্ছে না। এখন হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া হওয়ায় অসুস্থ অনুভব করছি। সাধারণত রাতে ঘুমের সমস্যা হয় না; কিন্তু কয়েক দিন ধরে বিদ্যুতের আসা-যাওয়ায় রাতের ঘুমে খুব সমস্যা হচ্ছে।
এ ছাড়া লোডশেডিংয়ের কারণে বিপাকে পড়েছেন সাগরদিঘীর পাড় সহ বিভিন্ন এলাকার ফ্ল্যাটের বাসিন্দাগণ। তারা বলেন, ফ্ল্যাটে পানির মোটর দিয়ে দিনে কয়েকবার পানি তুলতে হয়। কিন্তু এখন লোডশেডিংয়ের কারণে ঠিকমতো পানি তোলা যাচ্ছেনা ও লিফট চালানো যাচ্ছেনা। ফলে বহুতল ভবনে বসবাসরতদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লোডশেডিংয়ে শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও। বিশেষ করে কম্পিউটারের দোকান, ব্যবসায়ী, টেইলার্স, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারে জড়িত ব্যবসায়ীদের কাজে সমস্যা হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারণে দোকানপাট, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানসহ অফিস-আদালতে কাজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
বিভাগীয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট অফিসের সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জারজিসুর রহমান রনি দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, দেশে বর্তমানে ১৫০০ মেগাওয়াটের বেশী বিদ্যুৎ ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া একসাথে কয়েকটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ যোগ করতে কয়েকটি সঞ্চালন লাইন মেরামত কাজ চলছে। ইতোমধ্যে একটি সমাধান হয়েছে। আরেকটি দ্রুত মেরামতের কথা রয়েছে। এটি হলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কমবে। পায়রা ইউনিট-২ এর সংরক্ষন কাজ ২৪ জানুয়ারী শেষ হবে। এরপর থেকে লোডশেডিং একেবারে কমে আসতে পারে।