শতভাগ বই ছাড়া ২ মাস পার
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৩:০০:৫৪ অপরাহ্ন
মাধ্যমিকে এখনো বাকী ২০ ভাগ
এমজেএইচ জামিল : নতুন শিক্ষাবর্ষের ২ মাস পার হতে চললেও সিলেট বিভাগে মাধ্যমিকে এখনো মিলেনি শতভাগ বই। ফলে পূর্ণাঙ্গ বই ছাড়াই চলছে পাঠদান। এমনিতেই বই প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা এর উপর বিতর্কের কারণে ৬ষ্ট ও ৭ম শ্রেণীর দুটি বই প্রত্যাহার শিক্ষার্থীদের উপর বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্তৃপক্ষ রোববার পর্যন্ত সিলেট বিভাগের মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ বই বিতরণের কথা বললেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন।
বিভাগের বিভিন্ন জেলা উপজেলা দূরে থাক খোদ সিলেট নগরীর অনেক মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীরাও পায়নি শতভাগ বই। ৬ষ্ট, ৭ম ও ৮ম শ্রেণীতে মোটামুটি বই মিললেও ৯ম শ্রেণীর বইপ্রাপ্তির অবস্থা করুণ। বিশেষ করে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার বিষয়ভিত্তিক বইয়ের প্রাপ্তি সবচেয়ে কম। কোন কোন স্কুলে ৯ম শ্রেণীর গণিতের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের বই না দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারী) পর্যন্ত নগরীর উপশহরস্থ শাহজালাল আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর কোন শিক্ষার্থী গণিত, ভূগোল, পৌরনীতি ও ইতিহাসের কোন বই পায়নি। বছরের ২ মাস অতিবাহিত হতে চললেও বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান নিয়ে চিন্তিত অভিভাবকগণ।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজার ইউনিয়নের জাফরাবাদ দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক দৈনিক জালালাবাদকে জানান, তাদের সন্তানরা রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারী) পর্যন্ত ‘শিল্প সংস্কৃতি’, ‘জীবন ও জীবিকা’ এবং ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি’ বিষয়ের কোন বই পায়নি। বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ জানিয়েছেন বই এখনো আসেনি, আসলে পাবেন।
শুধু শাহজালাল আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় কিংবা জাফরাবাদ দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়ের নয়, এমন চিত্র সিলেট নগরীর পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা উপজেলার বিদ্যালয়ের। জেলা শিক্ষা অফিস থেকে বই প্রাপ্তি ৯৮ ভাগের কথা বলা হলেও মাঠ পর্যায়ের চিত্র ভিন্ন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সিলেট সূত্র জানিয়েছে, সিলেট বিভাগে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণী পর্যন্ত মাধ্যমিক স্কুল (ইংরেজী ও বাংলা ভার্সন), দাখিল মাদ্রাসা, কারিগরি বোর্ড ও ইবতেদ্বায়ি ১ম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত ১২ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর জন্য বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ১ কোটি ৫৮ লক্ষাধিক কপি বইয়ের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে দাখিল মাদ্রাসা, কারিগরি বোর্ড ও ইবতেদ্বায়ি ১ম থেকে ৫ম শ্রেণীর শতভাগ বিতরণ করা হয়েছে। তবে আটকে গেছে ৬ষ্ট থেকে ৯ম শ্রেণীর বই। রোববার পর্যন্ত বিভাগের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় ৮০ থেকে ৯০ ভাগ বই বিতরণ করায় এখনো ২০ ভাগ বই বাকী রয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সিলেট অফিস সূত্র জানিয়েছে, প্রতিদিনই বিভিন্ন উপজেলায় বই আসছে। চলতি মাসের মধ্যে শতভাগ বই স্কুল-মাদ্রাসায় পৌঁছে যাবে। ইতোমধ্যে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার শতভাগ বই শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে গেছে। কেবল বিদ্যালয়ের নতুন কারিকুলামের ৬ষ্ট থেকে ৯ম শ্রেণীর বই আসতে দেরি হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে সিলেট বিভাগের একমাত্র সিলেট জেলায় ৯৫ ভাগের উপরে বই পৌঁছানো হলেও অন্যান্য জেলায় ৮০-৯০ ভাগ বই পৌঁছেছে।
সিলেট জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলায় মাধ্যমিক স্কুল, দাখিল মাদ্রাসা, ইবতেদ্বায়ি (১ম থেকে ৫ম) ও কারিগরি শিক্ষা মিলে ৫৯ লাখ ৫৮ হাজার ১৪৪ কপি বইয়ের চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারী) পর্যন্ত ৫৮ লাখ ১৩ হাজার ৬৭ কপি অর্থাৎ ৯৭.৫৭ শতাংশ বই পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে জেলায় ইবতেদ্বায়ি ১ম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডের শতভাগ বই বিতরণ করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে মাধ্যমিক স্কুল, দাখিল মাদ্রাসা, ইবতেদ্বায়ি (১ম থেকে ৫ম) ও কারিগরি শিক্ষা মিলে ৩১ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৮ কপি বইয়ের চাহিদা রয়েছে। রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারী) পর্যন্ত প্রাপ্তি ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ লাখ ৯ হাজার ৫৪২ কপি। এক্ষেত্রে ইবতেদ্বায়ি (১ম থেকে ৫ম), মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডের শতভাগ বই বিতরণ করা হয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মাধ্যমিক স্কুল, দাখিল মাদ্রাসা, ইবতেদ্বায়ি (১ম থেকে ৫ম) ও কারিগরি শিক্ষা মিলে ৩১ লাখ ২ হাজার ৬৭৯ কপি বইয়ের চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে দাখিল মাদ্রাসা, ইবতেদ্বায়ি (১ম থেকে ৫ম) ও কারিগরি শিক্ষার শতভাগ বই বিতরণ করা হয়েছে। তবে মাধ্যমিক স্কুলের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ অর্থাৎ ২৭ লাখ ৯২ হাজার ৪০২ কপি বই বিতরণ করা হয়েছে। অধিকাংশ শ্রেণীর বই বিতরণ শেষ হয়েছে। তবে ৯ম শ্রেণীর মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার কিছু বিষয়ভিত্তিক বই বাকী রয়েছে। তবে প্রতিদিনই বই আসায় দুয়েকদিনের মধ্যে শতভাগ বই পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মাধ্যমিক স্কুল, দাখিল মাদ্রাসা, ইবতেদ্বায়ি (১ম থেকে ৫ম) ও কারিগরি শিক্ষা মিলে ৩৬ লাখ ৫৭ হাজার ৭৬২ কপি বইয়ের চাহিদা রয়েছে। রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারী) পর্যন্ত ৯৫ শতাংশ অর্থাৎ ৩৪ লাখ ৭৪ হাজার ৮৭৩ কপি বই বিতরণ করা হয়েছে। জেলায় মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডের শতভাগ বই বিতরণ হয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয়ে ৬ষ্ট থেকে ৯ম শ্রেণী পর্যন্ত মোটামুটি সকল বই বিতরণ করা হয়ে গেছে। শুধুমাত্র ৭ম শ্রেণীর কিছু বই বাকী রয়েছে। তবে বাকীগুলো আজকালের মধ্যে পৌঁছার কথা রয়েছে।
সিলেট সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অভিজিৎ পাল দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, সদর উপজেলায় অধিকাংশ বিদ্যালয়েই বই বিতরণ করা হয়েছে। ৯ম শ্রেণীর কিছু বইয়ের ঘাটতি রয়েছে যা বর্তমানে রাস্তায় আছে। আজকালের মধ্যেই পৌঁছে যাওয়ার কথা। বই আসা মাত্রই দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমরা শুন্য থাকা বিদ্যালয়ে বই পাঠিয়ে দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
সিলেট বিভাগীয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অফিস (মাউশি) এর আঞ্চলিক উপপরিচালক জাহাঙ্গীর কবীর আহাম্মদ দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, মাধ্যমিক স্তরের বই প্রতিদিনই আসছে। তাই প্রাপ্তির সংখ্যাটা প্রতিদিনই পরিবর্তিত হচ্ছে। আমাদের কাছে তথ্য আছে অধিকাংশ জেলায় ৯০-৯৮ শতাংশ বই চলে এসেছে। ইতোমধ্যে ইবতেদ্বায়ি (১ম থেকে ৫ম), কারিগরি ও মাদ্রাসা বোর্ডের সব জেলায় শতভাগ বই সরবরাহ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, চলতি বছরের বই প্রাপ্তি নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সঙ্কট তৈরী হয়েছে। তবে বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তাদের পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা মাঠপর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে রেখেছি যাতে বই পাওয়া মাত্রই শিক্ষার্থীদের মাঝে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। আমরা আশা করছি দুয়েকদিনের মধ্যেই মাধ্যমিকে শতভাগ বই পৌঁছে যাবে।