অধিকাংশই পায়নি ৯ম শ্রেণীর গণিত, বাংলা ও ইংরেজীসহ গুরুত্বপূর্ণ ৭ বই
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ মার্চ ২০২৩, ৩:০০:৫৪ অপরাহ্ন
এমজেএইচ জামিল :
সিলেটজুড়ে মাধ্যমিকের বই নিয়ে হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিভাগের ৯ম শ্রেণীর ৭৫ ভাগ শিক্ষার্থী এখনো পায়নি গণিত, ইংরেজী ও বাংলাসহ গুরুত্বপূর্ণ ৭টি বই। নতুন শিক্ষা বছরের ৩ মাসেও গণিত-ইংরেজীর মতো গুরুত্বপূর্ণ বই না পাওয়ায় বাজার থেকে গাইড বই কিনতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক অভিভাবক। এ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা তাদের।
এদিকে এমন পরিস্থিতিতে মাধ্যমিকের বইয়ের চাহিদা পূরণে সোমবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর মাউশি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে জরুরী সভায় মিলিত হন মাউশি’র বিভাগীয় ও জেলা কর্মকর্তাবৃন্দ। সোমবার দিনব্যাপী অনলাইনে অনুষ্ঠিত সভায় অংশ নেন মাউশি’র সিলেট বিভাগীয় পরিচালক, উপ পরিচালক ও ৪ জেলার শিক্ষা অফিসারবৃন্দ। সভায় জরুরী ভিত্তিতে বই প্রেরণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাকী থাকা বই প্রেরণের ব্যাপারে সিলেটের কর্মকর্তাবৃন্দকে আশ^স্ত করেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে ঠিক কখন মিলবে বই সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না কেউ। ফলে বই প্রাপ্তির সময় আরো দীর্ঘায়িত শঙ্কায় উদ্বিগ্ন অভিভাবকমহল।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সিলেট সূত্র জানিয়েছে, সিলেট বিভাগে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণী পর্যন্ত মাধ্যমিক স্কুল (ইংরেজী ও বাংলা ভার্সন), দাখিল মাদ্রাসা, কারিগরি বোর্ড ও ইবতেদ্বায়ি ১ম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত ১২ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর জন্য বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ১ কোটি ৫৮ লক্ষাধিক কপি বইয়ের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে দাখিল মাদ্রাসা, কারিগরি বোর্ড ও ইবতেদ্বায়ি ১ম থেকে ৫ম শ্রেণীর শতভাগ বিতরণ করা হয়েছে। তবে শেষ বেলায় এসে আটকে গেছে ৯ম শ্রেণীর ৭টি বই। সোমবার (৬মার্চ) পর্যন্ত বিভাগের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় ৯০ বই বিতরণ করা হলেও এখনো বাকী ৯ম শ্রেণীর বই। এছাড়াও বিভিন্ন উপজেলায় ৬ষ্ট থেকে ৮ম শ্রেণীর কিছু বই এখনো বাকী রয়েছে। তবে প্রতিদিনই বই আসা অব্যাহত রয়েছে। তবে থমকে আছে কেবল ৯ম শ্রেণীর বই।
(মাউশি) সিলেট অফিস সূত্র জানিয়েছে, প্রতিদিনই বিভিন্ন উপজেলায় বই আসছে। ৯ম শ্রেণীর গণিত, ইংরেজী, বাংলাসহ বাকী থাকা ৭টি বইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের যোগাযোগ করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বই চলে আসার কথা রয়েছে।
সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, প্রায় প্রতিটি উপজেলায়ই মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণীর একাধিক বই বাকী রয়েছে। যদিও ৯ম শ্রেণী বাদে অন্যান্য শ্রেণীর বই স্কুল ভিত্তিক বিষয়ের আলোকে বিতরণ করা হয়েছে। সিলেট নগরীর প্রায় সব স্কুলে ৯ম শ্রেণীর বই বাকী থাকায় অভিভাবকমহলে বাড়ছে ক্ষোভ। শিক্ষা বছরের ৩টি মাস চলে যাচ্ছে এখনো শিক্ষার্থীদের শতভাগ বই না পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের উপর ক্ষোভ ঝাড়ছেন তারা।
তবে এক্ষেত্রে অসহায়ত্ব প্রকাল করেছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ। তারা জানান, বইয়ের বিষয়টি দেখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর মাউশি। আর বই সরবরাহ করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি)। আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে বইয়ের চাহিদাপত্র প্রেরণ করেছি এবং বই প্রেরণের জন্য চাপ দিচ্ছি। কিন্তু জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) বই ছাপা শেষ করতে না পারলে আমাদের কি করার আছে। সোমবারের সভায় এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। সিলেট অঞ্চলের মাউশি ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাবৃন্দ বই প্রেরণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এদিকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানিয়েছে, শুধু সিলেট বিভাগ নয়, সারাদেশেই মাধ্যমিকের বইয়ের ঘাটতি রয়েছে। তবে শেষ সময়ে এসে ৯ম শ্রেণীর বইয়ের সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এব্যাপারে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) এর একটি সূত্র জানিয়েছে যে, সিলেট অঞ্চলের অবশিষ্ট থাকা ৯ম শ্রেণীর বইয়ের ছাপা শেষ হয়েছে। এখন বাঁধাই চলছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই শতভাগ বই চলে আসবে। তবে শতভাগ বই প্রাপ্তিতে পুরো মার্চ মাস চলে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ। তারা বলছেন, বিষয়টি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি)’র উপর নির্ভর করছে। তারা যদি ছাপা শেষ না করেই বলে যে ছাপা শেষ সেটা না দেখেই বিশ^াস করতে হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে বইয়ের সঙ্কট সমাধানের পুরো বিষয়টি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি)’র হাতে। তাই এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না শিক্ষা বিভাগের কেউ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার (৬মার্চ) পর্যন্ত নগরীর উপশহরস্থ শাহজালাল আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর কোন শিক্ষার্থী গণিত, ভূগোল, পৌরনীতি ও ইতিহাসের কোন বই পায়নি। বছরের ৩ মাস অতিবাহিত হতে চললেও বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান নিয়ে চিন্তিত অভিভাবকগণ।
সিলেট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় লাক্ষাতুরার ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা গণিত ও ইসলাম শিক্ষার বই এখনো পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজার ইউনিয়নের জাফরাবাদ দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক দৈনিক জালালাবাদকে জানান, তাদের সন্তানরা ৬ মার্চ পর্যন্ত ‘শিল্প সংস্কৃতি’, ‘জীবন ও জীবিকা’ এবং ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি’ বিষয়ের কোন বই পায়নি। বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ জানিয়েছেন বই এখনো আসেনি, আসলে পাবেন।
বিশ^নাথ উপজেলার ওমর ফারুক একাডেমীর ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা গণিত, ইতিহাস ও ইসলাম শিক্ষাসহ কয়েকটি বিষয়ের বই এখনো পায়নি বলে জানিয়েছেন।
সিলেট সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অভিজিৎ কুমার পাল দৈনিক জালালাবাদকে জানিয়েছেন, সিলেট নগরী সহ সদর উপজেলার অধিকাংশ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিকের ৯ম শ্রেণীর গণিত, ইংরেজী ও বাংলাসহ কয়েকটি বই এখনো বাকী রয়েছে। আমরা উর্ধ্বতনমহলে যোগাযোগ করেছি। তারা জানিয়েছেন আগামী সপ্তাহে শতভাগ বই চলে আসবে।
বিশ^নাথ উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, তার উপজেলায় মাধ্যমিকের গণিত, ইংরেজী, বাংলা, ইতিহাস ও পৌরনীতি সহ কয়েকটি বিষয়ের বই বাকী রয়েছে।
বালাগঞ্জ উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সমীর কান্তি দেব জানিয়েছেন, তার উপজেলায় মাধ্যমিক স্কুলের ৯ম শ্রেণীর গণিত, ইংরেজী ও বাংলাসহ ৭টি বই এখনো বাকী রয়েছে।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো: আব্দুল ওয়াদুদ দৈনিক জালালাবাদকে জানান, জেলার মাধ্যমিক স্কুলের প্রায় সকল শ্রেণীর অধিকাংশ বই চলে আসছে। ৯ম শ্রেণীর কয়েকটি বই বাকী রয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বই চলে আসার কথা রয়েছে।
সিলেট বিভাগীয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অফিস (মাউশি) এর আঞ্চলিক উপপরিচালক জাহাঙ্গীর কবীর আহাম্মদ দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, মাধ্যমিক স্তরের ৯ম শ্রেণীর গণিত, ইংরেজী, বাংলা সহ কয়েকটি বই নিয়ে সঙ্কট চলছে। বিষয়টি নিয়ে সোমবার আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অফিস (মাউশি) ও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি)’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দের সাথে জরুরী সভায় মিলিত হয়েছি। কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্কটের কথা শুনেছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বই পাঠানোর কথা জানিয়েছেন। সোমবার (৬ মার্চ) পর্যন্ত বিভাগের মাধ্যমিক স্তরে ৯০ ভাগ বই বিতরণ শেষ হয়েছে। ১০ ভাগ বাকী আছে। এরমধ্যে ৯ম শ্রেণীর বই কিছুটা বেশী বাকী রয়েছে।
তিনি জানান, ৯ম শ্রেণীর বইয়ের সঙ্কট শুধু সিলেটের নয়, সারাদেশেই রয়েছে। কাগজ সঙ্কটসহ জাতীয় কয়েকটি কারণে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) বই ছাপাতে দেরী করেছে। তাই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করছি আগামী সপ্তাহের মধ্যেই সিলেট বিভাগের মাধ্যমিকে শতভাগ বই বিতরণ সম্পন্ন হবে।