প্রিপেইড মিটারের আওতায় নগরীর ১৫০০ গ্যাস গ্রাহক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ মে ২০২৩, ১:০৯:৪৯ অপরাহ্ন
ডিসেম্বরের মধ্যে ৫০ হাজার মিটার স্থাপন
এমজেএইচ জামিল : সিলেট নগরীর ৫০ হাজার গ্যাস গ্রাহককে প্রিপইেড মিটারের আওতায় নিয়ে আসার কাজ শুরু করেছে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ। গত এপ্রিল মাসের শেষের দিকে নগরীর উপশহর এলাকার কয়েকটি বাসায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন কাজ শুরু করে জালালাবাদ গ্যাস টিঅ্যান্ডডি সিস্টেমস লিমিটেড (জেজিটিডিএসএল)। ইতোমধ্যে মঙ্গলবার (২৩মে) পর্যন্ত নগরীর ১৫০০ গ্রাহক প্রিপেইড মিটারের আওতায় চলে এসেছেন। তারা নগরীর উপশহর, বাগবাড়ী ও আম্বরখানা বড় বাজার এলাকার বাসিন্দা।
এদিকে দ্রুত প্রিপেইড মিটারের আওতায় আসার জন্য নগরীর পাড়া-মহল্লায় মাইকিং চলছে। মঙ্গলবারও নগরীর রিকাবীবাজার, মধুশহীদ, ভাতালিয়া, কাজলশাহ ও শামীমাবাদ এলাকায় প্রিপেইড মিটারের আওতায় আসার জন্য মাইকিং করতে দেখা গেছে। এছাড়া জালালাবাদ গ্যাস টিঅ্যান্ডডি সিস্টেমস লিমিটেড (জেজিটিডিএসএল) এর পক্ষ থেকে পত্রিকায় নিয়মিত বিজ্ঞাপন ও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হচ্ছে।
কন্টাক্টলেস স্মার্ট কার্ডভিত্তিক উন্নত প্রযুক্তির এসব প্রিপেইড মিটার জালালাবাদ গ্যাসের পক্ষ থেকে গ্রাহকদের বিনামূল্যে দেয়া হবে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক লিটন নন্দী দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, মিটারের মূল্য মাসিক ভাড়া হিসাবে সমন্বয় করা হবে। নিকটস্থ রিচার্জ পয়েন্ট থেকে স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে ক্রেডিট কিনে প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করা যাবে। রিচার্জ শেষ হলেও এতে ইমার্জেন্সি ব্যালেন্সের সুবিধা থাকবে। তিনি বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রিপেইড গ্যাস মিটার থাকলেও সিলেটে প্রথমবারের মতো চালু হচ্ছে এ পদ্ধতি। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকাতে ৩ লাখ গ্যাসের চুলা প্রিপেইট মিটারের আওতায় এসেছে। রাজধানীতে প্রকল্পটি জনপ্রিয় হয়েছে। ঢাকায় অনেক গ্রাহক নিজ থেকে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হচ্ছেন। সিলেটেও আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। যারা আগ্রহ প্রকাশ করছেন আমরা আগে তাদের প্রিপেইড মিটার সংযোগ দিচ্ছি।
জালালাবাদ গ্যাস (জেজিটিডিএসএল) সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রতিটি আবাসিক গ্রাহকের মাসিক গড় গ্যাস ব্যবহার ৬৬ ঘনমিটার থেকে ৪০ ঘনমিটারে নেমে আসবে। ফলে গ্রাহকপ্রতি গ্যাস সাশ্রয় হবে গড়ে ২৬ ঘনমিটার। গ্যাস বিতরণ লাইন লিকেজজনিত অপচয়ও রোধ হবে। এবছরের শুরুতে ১ম ধাপে সিলেট নগরীর কিছু জায়গায় কাজ শুরু করতে সার্ভে করা হয়। জায়গাগুলো হচ্ছে, শাহজালাল উপশহর, হাউজিং এস্টেট, মিয়া ফাজিল চিশত, আম্বরখানা, মিরাবাজার, মেহেন্দীবাগ, লামাবাজার, মেজরটিলা সহ তৎপাশর্^বর্তী এলাকা। প্রথমেই শাহজালাল উপশহর এলাকায় পাইলটিং ভিত্তিতে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। কারণ সরকারি মালিকানাধীন এই আবাসিক এলাকা পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। তাই এখানে কাজ করা সহজ হবে।
এ ব্যাপারে জালালাবাদ গ্যাস টিঅ্যান্ডডি সিস্টেমস লিমিটেডের (জেজিটিডিএসএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুর আহমদ চৌধুরী দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, প্রিপেইড মিটারের কাজ আরো আগে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারীসহ বৈশি^ক সংকটের কারণে বিলম্বিত হয়েছে। এপ্রিলের শেষ দিকে কাজ শুরু হয়েছে চলতি ডিসেম্বরের মধ্যেই ১ম ধাপের ৫০ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ শেষ করা হবে। এরপর পরবর্তীতে আরেক ধাপে আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে বাকীদেরও প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, গ্যাসের চুলা প্রিপেইড মিটারের আওতায় এলে গ্রাহকরাই সবদিক থেকে উপকৃত হবেন। বিল দেয়ার জন্য ব্যাংকে লাইন ধরতে হবেনা। ঘরে বসেই টাকা রিচার্জ করতে পারবেন। পুুরো মাস বন্ধ থাকলে বিল আসবেনা। এতে গ্যাসের সাশ্রয়ের পাশাপাশি গ্রাহকের অর্থ সাশ্রয় হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে বিদ্যুতের সাথে পাল্লা দিয়ে দফায় দফায় বাড়ছে গ্যাসের দাম। যা গ্রাহকদের ঘাড়েই পড়ে। কিন্তু লস ঠেকানোর উদ্যোগগুলো খুবই ধীরগতিতে চলে। রান্নার গ্যাস ব্যবহারে চুলাপ্রতি টাকা দেয়ার বদলে প্রিপেইড মিটারে খরচ ও গ্যাসের ব্যবহার দুটোই অনেক কম হয়। কিন্তু সিলেটে মিটার বসানোর এই প্রকল্পে শুরু থেকে দেখা দেয় ধীরগতি। তবে শেষমেষ আলোর মুখ দেখে মিটার স্থাপন প্রকল্প। এপ্রিলের শেষে নগরীতে শুরু হয় মিটার স্থাপনের কাজ। ইতোমধ্যে ১৫০০ গ্রাহক প্রিপেইড মিটারের আওতায় চলে এসেছেন। প্রতিদিনই এই সংখ্যা বাড়ছে। এর আগে চলতি বছরের মার্চের শুরুতে মিটারগুলো চীন থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। সেখান থেকে মার্চের শেষে রিসিভ করেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, সিলেটে বর্তমানে জালালাবাদ গ্যাসের প্রায় ৩ লাখ আবাসিক গ্রাহক রয়েছেন। এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে জালালাবাদ গ্যাস টিঅ্যান্ডডি সিস্টেমস লিমিটেডের (জেজিটিডিএসএল) এর আবাসিক পর্যায়ের ৫০ হাজার গ্রাহক প্রিপেইড মিটারের আওতায় আসবেন। পর্যায়ক্রমে বাকিদেরও মিটারের আওতায় আনা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেটে আবাসিক পর্যায়ে গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসার এটিই প্রথম উদ্যোগ। এতে গ্যাসের অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে এবং গ্রাহক অতিরিক্ত বিল দেয়ার হাত থেকে রেহাই পাবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটে গ্যাসের আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনতে এক বছর আগে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর গেল বছরের অক্টোবর মাসে চীনের দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড (জেজিটিডিএসএল)। এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনা প্রতিষ্ঠান দ্য কনসোর্টিয়াম অব জেনারেল মিটারিং টেকনোলজি (সাংহাই) লিমিটেড ও হেক্সিং ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে জেজিটিডিএসএল। এরপর শুরু হয় প্রকল্পের জরিপ কাজ। ইতোমধ্যে নগরীর ৫০ হাজার গ্যাসের চুলা বসানোর জরিপ কাজ শেষ হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, প্রথম ডিপিপি অনুযায়ী গেল বছরের নভেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। আর চলতি বছরের মার্চের মধ্যে কাজ শুরুর কথা। তবে ডিপিপি সংশোধন করে গেল বছরের মার্চে দরপত্র আহ্বান করে জালালাবাদ গ্যাস। এতে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
দেরিতে চুক্তি সম্পর্কে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ২০১৯ সালে এ ব্যাপারে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্প অনুমোদিত হয়। এরপর দরপত্র আহ্বান করা হলেও উপযুক্ত দরদাতা পাওয়া যাচ্ছিল না। এ ছাড়া প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয়েও কিছু অসামঞ্জস্য ছিল। তাই ডিপিপি সংশোধন করে গেল বছরে আবার দরপত্র আহ্বান করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে প্রিপেইড মিটার স্থাপন প্রকল্পে প্রায় ১২০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজ শেষ করা হবে। দুই চুলার গ্যাসের জন্য এখন প্রতি মাসে গ্রাহক এক হাজার টাকার ওপরে বিল দিচ্ছেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ছোট পরিবারের একজন গ্রাহক এক হাজার টাকায় ৩ মাস গ্যাস ব্যবহার করতে পারবেন। মাসে তার খরচ পড়বে ৩০০ টাকার মতো। এ ছাড়া গৃহস্থালি পর্যায়ে প্রিপেইড গ্যাস মিটার ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাহকদের মধ্যে গ্যাস ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বৃদ্ধি এবং মনিটরিং ব্যয়ও কমবে।