সিলেটে অবৈধ হাটের ছড়াছড়ি, বৈধ ৪৬
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জুন ২০২৩, ৮:৫০:৪৭ অপরাহ্ন
এমজেএইচ জামিল :
ঈদুল আযহার বাকী ২ দিন। ঈদকে সামনে রেখে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো নগরীতে ৮টি ও জেলায় ৩৮টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর অনুমতি দিয়েছে সিলেটের জেলা প্রশাসন। অনুমোদিত স্থানসমূহে পশুর হাট বসানোর প্রস্তুতি চলছে। আবার কিছু অস্থায়ী হাটে ইতোমধ্যে পশু বিক্রি শুরু হতে দেখা গেছে। কিন্তু প্রতিবছরের ন্যায় এবারো নগরীর একাধিক স্থানে অবৈধ পশুর হাট বসানোর তোড়াজোড় শুরু হয়েছে। যদিও জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধ হাটের ব্যাপারে কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, প্রতিবছর পবিত্র ঈদুল আযহা এলে জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত পশুর হাটের অনুমতি দিলেও ঈদ ঘনিয়ে আসতেই সড়ক, বিদ্যালয় মাঠ, খোলা স্থানে অবোধে পশুর হাট বসানো হয়। সেসব হাটে বিক্রেতারা গরুর চালান তুলতে না চাইলেও জোর পূর্বক ট্রাক আটকিয়ে গরু নামাতে পাইকারদের বাধ্য করা হয়, বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া রাস্তাঘাটে যত্রতত্র পশুরহাট বসানোর কারণে নগরজুড়ে দেখা দেয়া তীব্র যানজট। এবার এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সেদিকে নজর দিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন সচেতন নগরবাসী।
এদিকে সিলেট জেলা ও মহানগরে ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৪৫টি কোরবানির পশুর হাট বসানোর অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় ৭ টি এবং জেলায় ৩৮টি পশুর হাটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন। তিনি বলেন, ‘অনুমোদনের বাইরে কোথাও কোরবানির পশুর হাট বসানো যাবে না। কোথাও অবৈধভাবে হাট বসলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
সিসিক সূত্রে জানা গেছে, এবছর ঈদুল আযহা উপলক্ষে জেলা প্রশাসন থেকে নগরীর ৭টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাটের লিখিত অনুমতি দেয়া হয়। পরবর্তীতে আরো ১টি স্থানে অস্থায়ী হাটের অনুমতি নেয় সিসিক। স্থানগুলো হলো- ১। দক্ষিণ সুরমাস্থ কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন খালি জায়গা, ২। ভার্থখলা ঝালোপাড়া মসজিদ সংলগ্ন খালি জায়গা, ৩। মিরাপাড়াস্থ আব্দুল লতিফ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন খালি জায়গা, ৪। নতুন টুকেরবাজার সংলগ্ন খালি জায়গা, ৫। মদীনা মার্কেটস্থ নবাবী জামে মসজিদ সংলগ্ন খালি জায়গা, ৬। মেজরটিলা (ইসলামপুর) বাজার সংলগ্ন খালি জায়গা, ৭। চৌকিদেখী পয়েন্ট সংলগ্ন খালি জায়গা ও ৮। শাহী ঈদগাহ রাবার বাগান সংলগ্ন খালি জায়গা।
এদিকে জেলা প্রশাসন অনুমোদিত সিসিকের ৮টি পশুর হাটের মধ্যে ৫টিতে কার্যক্রম শুরু হলেও বাকী ৩টিতে কোন আবেদন না পড়ায় সোমবার পর্যন্ত কার্যক্রম শুরু হয়নি। কার্যক্রম শুরু না হওয়া অনুমোদিত ৩ টি হাট হলো- ১। ঝালোপাড়া মসজিদ সংলগ্ন খালি জায়গা, ২। মিরাপাড়া আব্দুল লতিফ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠ ও ৩। মদীনা মার্কেট নবাবী মসজিদ সংলগ্ন খালি জায়গা।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমান দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে ৮টি অস্থায়ী পশুর হাটের অনুমতি মিলেছে। কিন্তু আবেদন অনুযায়ী ৫টি হাটের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কোন আবেদন না পড়ায় ৩টি হাটে কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগরীতে ৮টি হাটের অনুমতি দেয়া হলেও নগরীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবৈধ পশুর হাট বসেছে। নগরীর মাছিমপুর কয়েদীর মাঠে অবৈধ হাটে পশু বিক্রির ধুম চললেও এখনো প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এছাড়া নগরীর টিলাগড় পয়েন্ট, রিকাবীবাজার পয়েন্ট, সুবিদবাজার পয়েন্ট, মধুশহীদ, লামাবাজার, দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুল, বাইপাস রোড়, হুমায়ুন রশীদ চত্ত্বর, কদমতলী ফল মার্কেটের সামনে, টেকনিক্যাল রোড, কাজিটুলা, বাগবাড়ি, সোবহানীঘাট, বালুচর এলাকার খরাদিপাড়াসহ বেশ কিছু এলাকায় অবৈধ হাটে পশু বিক্রি শুরু হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নগরীর বাইরে সিলেট সদর উপজেলার পীরের বাজার, শাহজালাল বাজার, বলাউড়া বাজার, বিশ^নাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের পনাউল্যা বাজার সংলগ্ন মাঠ, রামপাশা ইউনিয়নের রামপাশা নয়াবাজার, খাজাঞ্চি ইউনিয়নের রমনগঞ্জ বাজার ও স্টেশন বাজার, দৌলতপুর ইউনিয়নের সিংগেরকাছ বাজার, বিয়ানীবাজার পৌর এলাকার মুরাদগঞ্জ বাজার, নিদনপুর, বিয়ানীবাজার সদর, পিএইচজি সরকারি হাইস্কুল সংলগ্ন বাজারের একাংশ, বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাই ইউনিয়নের চারখাই বাজার (পূর্ব) সেন্ট্রাল জামে মসজিদ সংলগ্ন মাঠ, দিঘীরপার বাজার সংলগ্ন মাঠ, চারখাই বাজার (পূর্ব) কচকট খা মসজিদ সংলগ্ন মাঠ, তিলপাড়া ইউনিয়নের আছিরগঞ্জ বাজার সংলগ্ন মাঠ, মুড়িয়া ইউনিয়নের সারপার বাজার, জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল বাজার, জকিগঞ্জ উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের শাহবাগ ক্বাসিমূল উলুম মাদ্রাসা পয়েন্ট, কাজলসার ইউনিয়নের রতনগঞ্জ গোলাম মোস্তফা চৌধুরী একাডেমী স্কুল ও কলেজ পয়েন্ট, আটগ্রাম লুৎফুর রহমান স্কুল এন্ড কলেজ পয়েন্ট, বারঠাকুরী ইউনিয়নের শরীফগঞ্জস্থ চাপঘাট সুন্নী দাখিল মাদ্রাসা পয়েন্ট, সোনাসার স্টেশন নামক স্থান, কসনকপুর ইউনিয়নের ইউনিয়ন অফিস পয়েন্ট, ওয়াজেদ আলী মজুমদার উচ্চ বিদ্যালয় পয়েন্ট মুনশী পাড়া, বালাগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের বোয়ালজুর বাজার, দেওয়ান বাজার ইউনিয়নের আজিজপুর বাজার ও মুরার বাজার, বোয়ালজুর ইউনিয়নের কালিবাড়ী বাজার, পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের কুশিয়ারা বাজার ও হামছাপুর বাজার, ওসমানীনগর উপজেলার উছমানপুর ইউনিয়নের ময়নাবাজার, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার এমসি একাডেমী মডেল স্কুল এন্ড কলেজ মাঠের পূর্ব পাশের খালি জায়গা, গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম খয়রুগঞ্জ বাজার সংলগ্ন আব্দুল মুহিত চৌধুরীর মালিকানাধিন ভূমি, ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নের ঢাকা দক্ষিণ দারুল উলুম হুসাইনিয়া মাদ্রাসা মাঠ, ভাদেশ^র ইউনিয়নের মিরগঞ্জ মুজাহিরুল ইসলাম দাখিল মাদ্রাসা মাঠ, ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন মোকামবাজার এফডব্লিউসি সংলগ্ন স্থান, শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের জামেয়া ইসলামিয়া হাফিজিয়া শরীফগঞ্জ মাদ্রাসা মাঠ, কানাইঘাট উপজেলার ঝিঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের ঝিঙ্গাবাড়ী বাজারে অস্থায়ী পশুর হাটের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এর বাইরে অবৈধ পশুর হাট না বসানোর জন্য জেলা প্রশাসন থেকে সতর্ক করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেল বছর নগর ও জেলায় ৪১টি পশুর হাটের অনুমতি দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। এরমধ্যে নগরে ৬টি ও জেলায় ৩৫টি হাটের অনুমতি হলেও ঈদের আগের দিন পুরো নগরী পশুর হাটে পরিনত হয়ে যায়। ট্রাক থেকে ব্যবসায়ীদের গরু জোর করে নামানোর অভিযোগ উঠে তখন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন সুরাহা হয়নি। এবছরও শুরু থেকে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধ হাটের ব্যাপারে কঠোর বার্তা দেয়া হলেও নগরীর বিভিন্ন এলাকার চিহ্নিত ব্যক্তিবর্গ দলীয় প্রভাব খাটিয়ে একাধিক স্থানে অবৈধ হাট বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ-এসএমপির অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সুদীপ দাস দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, নগরী ছাড়াও এসএমপির আওতাধিন এলাকায় প্রায় ২২টি পশুর হাটের অনুমতি দেয়া হয়েছে। অনুমতি ছাড়া কোথাও অবৈধ পশুর হাট বসতে দেয়া হবেনা। অবৈধ পশুর হাট উচ্ছেদে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ঈদুল আযহার আগেরদিন নগরীতে এত মানুষের ঢল নামে যে, আড়াই হাজার পুলিশের পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এরপরও আমরা সামর্থ্যরে সবটুকু নিয়ে অবৈধ হাট উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে প্রস্তুত রয়েছি।