সমাবেশের টুকিটাকি
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১০:৩৭ অপরাহ্ন
এ টি এম তুরাব :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটে নির্বাচনী প্রথম জনসভায় দেয়া ৩৫ মিনিটের বক্তব্যে পর্যটন নগরী সিলেটের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি তিনি সিলেটে প্রথম বেড়াতে আসার স্মৃতিচারণ করেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সিলেটে আগমন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ছিলেন উচ্ছ¡সিত।
আবার আসবো সিলেটে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৫৯ সালে প্রথম সিলেট এসেছিলাম। এরপর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে এসে সিলেট থেকেই শুরু করেছিলাম আমার প্রথম সভা। আমি প্রতিবার নির্বাচনের আগে সিলেটে আসি। এখান থেকেই প্রথম নির্বাচনে প্রচারণা শুরু করি, এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। আবার আসিব ফিরে পূণ্যভ‚মি সিলেটে।
নৌকায় ভোট দিতে ওয়াদা : বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে মঞ্চে উঠেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে জসনভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা শুরু করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি উপস্থিত জনতাকে নৌকায় ভোট দিতে ওয়াদা করান। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন- কারা কারা আগামী ৭ জানুয়ারী নৌকা মার্কায় ভোট দিবেন হাত তুলে দেখান এবং ওয়াদা করুন। এ সময় উপস্থিত সবাই নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হাত তুলে ওয়াদা করেন।
মিছিলের নগর : নগরীর সবকটি প্রবেশমুখে নেতা-কর্মীদের উন্মাতাল মিছিল। সব মিছিলের গন্তব্য আলিয়ার মাঠ। হাতে ব্যানার-ফেস্টুন, গায়ে জড়ানো নানা রঙের টি-শার্ট। ‘জয়বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগানের গগন বিদারী ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় রাজপথ। সব জনস্রোত এসে মিলে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে। সময় বাড়ার সাথে সাথে মাঠ নেতা-কর্মীতে ভরে যায়। এক পর্যায়ে তা ছড়িয়ে যায় মাঠের আশপাশের এলাকায়।
রঙের বাহারি জনসভা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেটে আগমন উপলক্ষে বিভাগের ১৯টি সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য ও স্থানীয় নেতাদের জনসভায় নিয়ে আসা কর্মী সমর্থকদের পোশাক ছিল বাহারি রঙের। জনসভা অভিমুখে রঙ-বেরঙের পোশাক পরে নেতা-কর্মীদের আসতে দেখা যায়। লাল, নীল ও হলুদ রঙের শাড়ি, টুপি ও গেঞ্জি পরে হাজার হাজার দলীয় নেতাকর্মী প্রধামন্ত্রীর জনসভায় যোগ দিতে ছুটে আসেন। অনেকে ঢোল-তবলাসহ নানা বাদ্যযন্ত্র নিয়ে নেচে-গেয়ে জনসভার উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় নেতাকর্মীদের মুখে শ্লোগান ছিল, ‘শেখ হাসিনার সরকার বারবার দরকার; শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই।
গানে গানে ভোটের প্রচার : নিজ খরচে গোটা দেশে নৌকার প্রচারণা করে বেড়াচ্ছেন গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার হিরণ গ্রামের শেখ মো. ইলিয়াস। তার সঙ্গে আছেন বরিশালের মজিবর বয়াতি ও রংপুরের মো. আলী । গানের এক ফাঁকে তাদের সাথে কথা হলে জানালেন, গানে-গানে ভোটের প্রচারে অংশ নিতেই তারা এসেছেন গোপালগঞ্জ, বরিশাল আর রংপুর থেকে।
গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার হিরণ গ্রামের ‘ভাইরাল ইলিয়াস’ নামে পরিচয় দেওয়া ৬৩ বছরের শেখ মো. ইলিয়াস বলেন, ঢাকাতে আওয়ামী লীগের বিজয় র্যালিতে অংশগ্রহণ করে মঙ্গলবার রাতে গাড়িতে উঠে সিলেটে এসেছি আমরা।
মো. মজিবর বয়াতি জানান, তারা সিলেট আসার আগে নৌকার প্রচারে খুলনা, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর ঘুরে এসেছেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের আগ পর্যন্ত তারা মাঠে প্রচারে করে বেড়াবেন। এজন্যই আমাদের সিলেট আসা। একই ভাষ্য রংপুরের মো. আলীরও। এ তিনজন জানান, তারা সিলেটের মেয়র সাহেবের সঙ্গে আলাপ করতে চান; উনি সুযোগ দিলে সিলেটে থেকে নৌকার উন্নয়ন প্রচার করতে চান।
একনজর দেখার আকুতি : পাঁচ বছর পর সিলেটে দলীয় জনসভায় উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সামনে থেকে তাকে একনজর দেখতে অনেকে এসেছিলেন জনসভায়। তবে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে সে আশা পূরণ হয়নি তাদের। জনসভায় উপস্থিত হয়েও নেত্রীকে না দেখেই ফিরতে হয়েছে অনেককে।
তেমনি একজন আব্দুল মান্নান (৬৭)। সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা থেকে অসুস্থ শরীর নিয়ে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে হাজির হয়েছিলেন তিনি। বলেন, আমি ৫ বছর আগে থেকে অসুস্থ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসছেন শুনে বাড়িতে শুয়ে থাকতে পারলাম না। একনজর তাকে দেখার ইচ্ছে ছিল।
প্রবেশে কড়াকড়ি : জনসভাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়। পুলিশ, র্যাব, ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বসানো হয় চেকপোস্ট। জনসভাস্থলসহ আশপাশের এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়। সমাবেশের মূল মাঠে প্রবেশে ছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অনেক নেতাকর্মী তাই মূল মাঠে প্রবেশ না করে আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেন। সমাবেশস্থলের চারপাশে বাঁশ দিয়ে শক্ত বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। নেতাকর্মীদের সমাবেশস্থলে ঢোকার জন্য পৃথক লেন তৈরি করা হয়।
এদিকে, সকাল ৮টা থেকেই জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, চৌহাট্টাা পয়েন্ট গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এসব পয়েন্টে বাঁশের ব্যরিকেডও দেখা গেছে।