সিলেটে বছরের প্রথম ভূমিকম্প
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৯:১৭:৫৯ অপরাহ্ন
রিখটার স্কেলে মাত্রা ৫, বাসা-বাড়িতে আতঙ্ক
স্টাফ রিপোর্টার : নতুন বছরের তৃতীয় দিনে ভূমিকম্পে কাঁপলো ‘ভূমিকম্পের ডেঞ্জারজোন’ সিলেট। একইসাথে কাঁপলো রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। শুক্রবার সকালে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এর উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
ছুটির দিনে ভূমিকম্পে সিলেটে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে সিলেট মহানগরে বহুতল ভবনের বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এই মৃদু কম্পন। কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী এ ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে অনেকে বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে রাস্তায় বের হয়ে আসেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবায়েত কবীর সকালে বলেন, শুক্রবার সকাল ১০টা ৩২ মিনিটে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে ৪৮২ কিলোমিটার দূরে মিয়ানমারের হোমালিন নামের একটি স্থান এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। এর প্রভাবে রাজধানীসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট এবং এর আশপাশের কিছু এলাকায় কম্পন অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পের বিষয়টি দৈনিক জালালাবাদকে নিশ্চিত করেছেন সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন। তিনি জানান, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৪৮২ কিলোমিটার দূরে মিয়ানমারের একটি স্থানে।
এর আগে গত বছরের ২ জুন সিলেটে রিখটার স্কেলে ৫ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল। সেটিরও উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমার। যা ঢাকা থেকে ৪৪১ কিলোমিটার দূরত্বে ছিল। একই বছরের ২৯ মে ৫ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল সিলেট। সে সময়ও ভূ-কম্পনের উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমার।
বিশেষজ্ঞরা বার বার বলছেন, ভূমিকম্পের ডেঞ্জার জোনে রয়েছে দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চল তথা সিলেট। ভারত বাংলাদেশের ডাউকি চ্যুতিতে (ফল্ট) এই অঞ্চলের অবস্থান হওয়াতে এই এলাকা ভূমিকম্পের জন্য অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ভারতের আসাম ত্রিপুরা মেঘালয় মিজোরামসহ দেশের চট্টগ্রাম পার্বত্য এলাকাও রয়েছে এই জোনে। আছে উত্তরের রংপুর বিভাগেরও বড় অংশ। ২০২১ সালে ১০ দিনের ব্যবধানে সিলেটে যে ১০ দফা ভূমিকম্প হয়েছিল, তার উৎপত্তিস্থল ছিল এই ফল্ট। স্থাপত্য বিধি না মেনে ঘরবাড়ি দালানকোঠাসহ বড় বড় স্থাপনা গড়ে ওঠায় এই ঝুঁকি আরো বেড়েছে। রিক্টার স্কেলে মাত্রা ৫-৬ মাত্রার ভূমিকম্প হলেও এই অঞ্চলের জন্য তা হতে পারে ভয়াবহ এমন অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
রেকর্ড ঘেঁটে জানা যায়, এই এলাকায় ৮ এর বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ারও অতীত রেকর্ড আছে। এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শত শত গভীর নলকূপ ও পানির প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। আবার প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপরও ভাসছে সিলেটে। সব মিলিয়ে এখানে এ ধরণের ভূমিকম্প উৎপত্তি হলে গোটা সিলেট অঞ্চলের জন্য তা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হতে পারে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ ড. রুবায়েত কবির এ বিষয়ে অতি সম্প্রতি জানান, সিলেটসহ দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চল পড়েছে ভূমিকম্পের ডেঞ্জার জোনে। এই অঞ্চলে যেকোনো মুহূর্তে বড় ভূমিকম্প হওয়া বিচিত্র নয়। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেশি হচ্ছে।
এছাড়া ভারতের আসাম, মেঘালয়, ডাউকি এলাকায় অনেকগুলো সক্রিয় ফল্ট রয়েছে। এসব ফল্ট প্রায়ই ঝাঁকুনি দিয়ে সরে যেতে চাচ্ছে। এতে প্রায়ই ছোট ছোট ভূমিকম্প হচ্ছে। এতে বুঝা যায় বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে। যদি বড় ভূমিকম্প হয় তাহলে সিলেট অঞ্চলে বড় ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সিলেট অঞ্চলে ভূমিকম্পের অতীত রেকর্ড ভয়াবহ। এই অঞ্চলে ১৮৯৭ সালে এক ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়। যেখানে রিকটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৭। আর কেন্দ্র ছিল মেঘালয়। ১৯১৮ সালের ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৬ যার উৎপত্তি ছিল মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। ১৯২৩ সালের ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ১ যার উৎপত্তি মেঘালয় রাজ্যে। ১৯৩০ সালের ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ১ এবং ১৮৬৯ সালের ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫। এছাড়া সিলেট অঞ্চলে ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পররাষ্ট্র কিছু ভূমিকম্পে হয় যার মাত্রা ৬ পর্যন্ত ছিল।